মহাকাশ
ভিনগ্রহে সূর্যাস্তের রং ভিন্ন হয় কেন
সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশ লালচে ও হলদে আভায় ছেয়ে যায়। মনে হয়, কোনো শিল্পী যেন আকাশে রঙের আঁচড় দিয়েছেন। খানিকটা আনমনে যেন ছড়িয়ে দিয়েছেন লাল-হলুদের নানান শেড। সৌরজগতের সব গ্রহেই সূর্যাস্ত হয়। কিন্তু অন্য গ্রহগুলোতে সূর্যাস্তের সময় আকাশের রং ভিন্ন ধরনের হয়। কেন?
পৃথিবীর আকাশ নীল। সূর্যাস্তের সময় আমাদের গ্রহটির আকাশ লালচে হয়ে যায়। কখনো আবার অস্তগামী সূর্যের হলদে আলোয় ছেয়ে যায় আকাশের নীল। তবে সৌরজগের সব গ্রহের সূর্যাস্ত কিন্তু এরকম নয়।
কোন গ্রহে সূর্যাস্তের সময় আকাশের রং কেমন থাকে, তা নির্ভর করে সেই গ্রহের ওপর। যেমন মঙ্গল গ্রহে সূর্যস্তের সময় নীল আভা ছড়িয়ে যায়। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্যমতে, ইউরেনাস গ্রহে সূর্যাস্তের সময় আকাশের রং নীল থেকে পরিণত হয় ফিরোজায়। আবার শনির অন্যতম উপগ্রহ টাইটানে সূর্যাস্তের সূচনাকালে আকাশ হলদে থেকে কমলা হয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে কমলা রং হয়ে যায় বাদামী। কিন্তু একই সূর্যের আলোর রং একেক গ্রহে একেক রকম কেন?
সূর্যের রং কখনো বদলায় না। আবার একেক গ্রহে গিয়ে নিশ্চয়ই সূর্য নিজের রং পরিবর্তন করে না। অর্থাৎ সূর্যের রং সব সময় একই থাকে। কিন্তু প্রতিটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের কারণে ভিন্ন ভিন্ন রং দেখা যায়।
বায়ুমণ্ডলে থাকে প্রচুর ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প। আর আলো চলে তরঙ্গ আকারে। প্রতিটি রঙের রয়েছে নিজস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্য। কথাটাকে উল্টো করা বলা যায়, আলোর একেক তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে আমরা একেকটি রং হিসাবে দেখি।
সূর্যের আলো ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্পের ভেতর দিয়ে প্রবেশের সময় গ্যাসের কণা ও ভাসমান ধূলিকণাকে আঘাত করে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ ঘটনাকে বলে আলোর বিক্ষেপণ। বিক্ষিপ্ত আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সময় এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে চলে যায়। ফলে বদলে যায় রং। কারণ এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাওয়ার সময় আলোর রং পরিবর্তন হয়। প্রতিসরণের এই বিষয়টি সম্ভবত সবারই জানা।
তা ছাড়া, সূর্য থেকে আসা আলো মহাশূন্যে চলার সময় যে মাধ্যমে থাকে, কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণার কারণে সেই মাধ্যমের পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেকটা প্রিজমের মতো। সূর্যের সাদা আলো প্রিজমের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে সাত ধরনের রং তৈরি করে। এই সাত রংকে আমরা বলি রংধনু। গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলও প্রিজমের মতোই কাজ করে। এসব মিলেই বিভিন্ন গ্রহে সূর্যাস্তের রং ভিন্ন হয়।