২৭০ মাইলের মধ্য দিয়ে উড়ে গেল গ্রহাণু, বিজ্ঞানীরা কেন আগে জানতে পারেননি
সম্প্রতি একটি ক্ষুদ্র গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে উড়ে গেছে। এটি আইএসএস বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কক্ষপথ প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল। মানে আইএসএস যে উচ্চতায় আছে, এই গ্রহাণুটি প্রায় সেই উচ্চতা দিয়ে চলে গেছে। এটি ছিল এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা দ্বিতীয় নিকটতম ফ্লাইবাই। অর্থাৎ, এর আগে পৃথিবীর আরও কাছে অন্য একটি গ্রহাণু এসেছিল। ২০২০ সালের নভেম্বরে ‘২০২০ ভিটিফোর’ নামে একটি গ্রহাণু মাত্র ৩৬৮ কিলোমিটার দূরত্ব দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা তা আগে থেকে বুঝতে পারেননি। প্রশ্নটাই এখানে। কেন বিজ্ঞানীরা এটা বুঝতে পারলেন না?
সে প্রশ্নের উত্তরে পরে আসছি। শুরুতে গ্রহাণুটি সম্পর্কে জানা যাক। সম্প্রতি পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া ‘২০২৫ টিএফ’ নামে গ্রহাণুটি অ্যান্টার্কটিকার ওপর দিয়ে উড়ে গেছে গত ১ অক্টোবর, বুধবার। তখন এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪৩৫ কিলোমিটার উঁচুতে ছিল। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনও রয়েছে প্রায় একই উচ্চতায়। এর গড় উচ্চতা ৩৭০-৪৬০ কিলোমিটার।
এই গ্রহাণুগুলো পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে উড়ে গেলেও পৃথিবীতে আঘাত করেনি। অনেক ক্ষেত্রে এগুলোর কিছু অংশ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সামান্য সংঘর্ষের কারণে পুড়ে যায়। এরপর এগুলো ফিরে যায় আবার মহাশূন্যে।
‘২০২৫ টিএফ’ গ্রহাণুটি নিয়ে ভয় ছিল না, কারণ এটি আকারে খুবই ছোট ছিল—মাত্র ১-৩ মিটার চওড়া। তবে এটি পৃথিবীতে আঘাত করলেও বায়ুমণ্ডলেই জ্বলে যেত। সর্বোচ্চ সুন্দর আলোক প্রদর্শনীর মাধ্যমে এর অবসান ঘটত।
গ্রহাণুটির আকার অত্যন্ত ছোট বলেই বিজ্ঞানীরা ওটাকে শনাক্ত করতে পারেননি। গ্রহাণুটি সর্বোচ্চ একটি গাড়ির সমান বড় হবে। এই আকারের গ্রহাণু শনাক্ত করা একটু কঠিন।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গ্রহাণুটি পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এটি বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার কিট পিক ন্যাশনাল অবজারভেটরি প্রথম এটি শনাক্ত করার খবর জানায়। তবে গ্রহাণুটি পৃথিবীকে অতিক্রম করার প্রায় দুই ঘণ্টা পর এর গতিপথ সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা নয়। সাধারণত, পৃথিবীর আশপাশে কোনো গ্রহাণুর ঢোকার সম্ভাবনা দেখা দিলে তা বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই ধরতে পারেন। ঠিক কখন, কোন জায়গা দিয়ে গ্রহাণুটি চলে যাবে, তাও বুঝতে পারেন। এমনকি, গ্রহাণুটি পৃথিবীকে আঘাত করার সম্ভাবনা থাকলে, তাও বিজ্ঞানীরা আগে থেকে জানতে পারেন। তাহলে এটি কীভাবে বিজ্ঞানীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে গেল?
গ্রহাণুটির আকার অত্যন্ত ছোট বলেই বিজ্ঞানীরা ওটাকে শনাক্ত করতে পারেননি। গ্রহাণুটি সর্বোচ্চ একটি গাড়ির সমান বড় হবে। এই আকারের গ্রহাণু শনাক্ত করা একটু কঠিন। তাছাড়া, এই আকারের গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পরলেও খুব বেশি ক্ষতি নেই। কারণ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওটা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
বর্তমানে গ্রহাণুটি মহাকাশে চলে গেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে। নাসার জেপিএলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি ২০৮৭ সালের এপ্রিলে আবার পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে। তখন এটি নিরাপদ দূরত্বে থাকবে। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব হবে প্রায় ৮০ লাখ কিলোমিটার। অর্থাৎ চাঁদ থেকে প্রায় ২১ গুণ বেশি দূরে থাকবে।