পৃথিবী নামের গ্রহে আমাদের বাস। সূর্যকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে আমাদের পৃথিবীসহ ৮টি গ্রহ। সঙ্গে রয়েছে শত শত বামন গ্রহ, ২০০-এর বেশি উপগ্রহ, হাজারো ধূমকেতু এবং লাখো গ্রহাণু। এদের সবাইকে নিয়েই আমাদের সৌরজগৎ। পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, তেমনি সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে। আর মিল্কিওয়েকে বাংলায় বলা হয় আকাশগঙ্গা।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে সূর্যের মতো আরও ১০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। এই নক্ষত্রগুলো পরস্পরের সঙ্গে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আবদ্ধ। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বর, যার চারপাশে এই নক্ষত্রগুলো এবং তাদের সৌরজগৎগুলো অবিরাম ঘুরে চলেছে।
প্রায় ১ লাখ আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত আমাদের এই ছায়াপথ। আমাদের সূর্য এই ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে, ওরিয়ন বাহুতে রয়েছে। সূর্য একবার পুরো গ্যালাক্সি প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় প্রায় ২২৫ মিলিয়ন বছর। এই সময়কে বলা হয় গ্যালাক্টিক ইয়ার বা কসমিক ইয়ার। আমাদের সৌরজগৎ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮ লাখ ২৮ হাজার কিলোমিটার বেগে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অনেকগুলো উজ্জ্বল সর্পিল বাহু রয়েছে। যেহেতু আমাদের সৌরজগৎ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ভেতরে ওরিয়ন বাহুতে, তাই পুরো গ্যালাক্সিটির সম্পূর্ণ ছবি তোলা আমাদের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। তবে পৃথিবী থেকে আমাদের গ্যালাক্সিটাকে নানা রূপে দেখা যায় রাতের আকাশে। সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের শখের ও পেশাদার জ্যোতির্বিদেরা ক্যামেরাবন্দী করেছেন। তেমনই কিছু অনিন্দ্য সুন্দর ছবি থেকে সেরা দশটি ছবি বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো।
১. মিল্কিওয়ের সবচেয়ে বড় ছবি
মিল্কিওয়ের সবচেয়ে বড় ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ৪৬ বিলিয়ন পিক্সেলের সে ছবি জার্মানির রুহর ইউনিভার্সিটি (RUB) জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তুলেছিলেন। চিলির আতাকামা মরুভূমিতে থাকা টেলিস্কোপ দিয়ে পাঁচ বছর ধরে রাতের পর রাত মিল্কিওয়ের নানা অংশের ২৬৮টি আলাদা ছবি তোলা হয়। ছবিটা এত বড় যে এর ডেটা ফাইল প্রায় ১৯৪ গিগাবাইটের। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই বিশাল ছবিটি সবার দেখার জন্য অনলাইনে প্রকাশ করেছে। কেউ চাইলে ছবিটির জুম করেও দেখতে পারবে সেখান থেকে। ছবিটি জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ছবিগুলোর একটি হয়ে আছে এখনো। এই ছবি তোলার সময় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৫০ হাজারের বেশি নতুন পরিবর্তনশীল উজ্জ্বল বস্তু আবিষ্কার করেছেন।
২. পুরাতন উইন্ডমিলের পটে মিল্কিওয়ে
অ্যারিজোনার পলডেনের কাছে একটি পুরাতন উইন্ডমিলের ঠিক ওপরে রাতের আকাশে রংধনুর মতো বাঁকানো মিল্কিওয়ে দেখা যাচ্ছে এ ছবিতে। ছবিটি তুলেছেন শন পার্কার। তিনি এই ছবিকে দিগন্ত থেকে উঠে আসা তারার আলোয় আলোকিত এক স্বপ্নিল জগৎ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৩. ইটা অ্যাকোয়ারিড উল্কাবৃষ্টি ও মিল্কিওয়ে
ছবিটি তুলেছেন জ্যোতির্বিদ মাইক টেলর। এ ছবিতে ইটা অ্যাকোয়ারিড উল্কাবৃষ্টির সঙ্গে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দূর দিগন্তে সূর্যাস্তের লাল আভা। এই অভূতপূর্ব দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে লেকের পানিতে। টেলর ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের মধ্যাঞ্চল থেকে তুলেছিলেন ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইটা অ্যাকোয়ারিডস নামের এ উল্কাবৃষ্টি প্রতিবছরই দেখা যায়। হ্যালির ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া ছোট ছোট ধুলো আর বরফের কণার কারণে দেখা যায় এই উল্কাবৃষ্টি।
৪.মিল্কিওয়ে প্যানোরামা
এটা কিন্তু একটা ছবি না। ১০টি আলাদা ছবিকে একীভূত করে মিল্কিওয়ের এই মনোরম ছবিটি বানিয়েছেন অমিত অশোক কাম্বলে। তিনি ছবিটি তুলেছেন নিউজিল্যান্ডের পাকিরি সমুদ্র সৈকত থেকে। সেখানে এখনো রাতের পরিষ্কার আকাশে এমন দৃশ্য দেখা যায়। অমিত অশোক একজন শখের ফটোগ্রাফার।
৫. নীল সবুজ মিল্কিওয়ে
২০১৩ সালে চ্যাড পাওয়েল তাঁর ক্যানন ৬ডি ক্যামেরা ব্যবহার করে আইল অব ওয়াইটের রাতের আকাশে মিল্কিওয়ের এই রূপের দেখা পান। নীল আকাশ ও অরোরার সবুজ বর্ণের মিল্কিওয়ে এমন রং ধারণ করেছে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত আইল অফ ওয়াইটে সৌরঝড়ের মধ্যে এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়।
৬. ৩ হাজার ছবিতে মিল্কিওয়ে
সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানী অ্যাক্সেল মেলিঙ্গার ৩ হাজারটি আলাদা ছবি এবং গাণিতিক মডেলের সমন্বয়ে মিল্কিওয়ের এই প্যানোরামাটি তৈরি করা হয়েছে।
৭. শিল্পীর চোখে মিল্কিওয়ে
প্রায় ১১ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দেখতে কেমন ছিল, এটা তার একটা কাল্পনিক ছবি। কাল্পনিক কোনো গ্রহ থেকে দেখলে রাতের আকাশ কেমন দেখাত, তাই এঁকেছেন শিল্পী। তখন মিল্কিওয়ের কেন্দ্র ছিল ছোট এবং অনুজ্জ্বল। কারণ তখন গ্যালাক্সি কেবল গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল।
৮. তিন টেলিস্কোপের চোখে মিল্কিওয়ে
অসাধারণ এই ছবিতে ইনফ্রারেড বা অবলোহিত এবং এক্স-রের মাধ্যমে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের আশপাশের অস্পষ্ট ধূলিকণার আস্তরণ দেখা যাচ্ছে। ছবিটি হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, স্পিৎজার স্পেস টেলিস্কোপ এবং চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির তোলা ছবিগুলো একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছে।
৯. নৈসর্গিক পথ
ইতালির গিয়াউ পাস নামে বেলুনো প্রদেশের একটি উচ্চ পর্বতের গিরিপথ থেকে ছবিটি তুলেছেন আন্দ্রেয়া কার্জি। প্রায় দশটি আলাদা ছবি এক করে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে।
১০.বজ্র-হ্রদ
নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কুক থেকে ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার টম রে। হ্রদের কাছে গিয়ে তিনি এই অসাধারণ দৃশ্যে দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তা ক্যামেরাবন্দি করতে ভোলেননি।