অসহায় নক্ষত্রকে গিলে খেল এক বিরল ব্ল্যাকহোল
মহাকাশে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কীভাবে একটি বিশালাকার ব্ল্যাকহোল একটি অসহায় নক্ষত্রকে গিলে খেয়েছে। এই ব্ল্যাকহোলটি আবার অত্যন্ত বিরল।
ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের কথা হয়তো সবাই জানেন। এর ভেতরে মহাকর্ষ এত শক্তিশালী যে আলোও পালাতে পারে না। অর্থাৎ কিছুই বের হতে পারে না কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর থেকে। সে জন্যই এর অমন নাম—কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল। (এ নিয়ে আরও জানতে পড়ুন, কৃষ্ণগহ্বর: তলাবিহীন কুয়া)
ব্ল্যাকহোল অনেক রকমের হয়। কিছু ব্ল্যাকহোল খুব ছোট। আকারে সেগুলো সূর্যের চেয়েও ছোট। আবার কিছু এত বড় যে পুরো গ্যালাক্সিকে ধরে রাখতে পারে। সেগুলো আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় ৪০০ কোটি গুণ বেশি ভারী। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রেও এমন একটি ব্ল্যাকহোল আছে। তবে বিজ্ঞানীরা এবার যেটি খুঁজে পেয়েছেন, সেটি মাঝারি আকারের। এর নাম দেওয়া হয়েছে ইন্টারমিডিয়েট ম্যাস ব্ল্যাকহোল বা আইএমবিএইচ। এ ধরনের ব্ল্যাকহোল খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। কারণ, এগুলো একেবারে ছোটও না, আবার অত বড়ও নয়। এগুলো আমাদের সূর্যের চেয়ে ১০০ থেকে ১ লাখ গুণ বেশি ভারী হয়। কিন্তু এগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি। মাঝারি ধরনের এই ব্ল্যাকহোলগুলো গ্যালাক্সির কোণায়-কানায় লুকিয়ে থাকে। এদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় ছোট ছোট নক্ষত্র।
এইচএলএক্স-১ নামে এই ব্ল্যাকহোল পৃথিবী থেকে ৪৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। ২০০৯ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম এই ব্ল্যাকহোল থেকে আসা আলোর দেখা পান। কিন্তু তা সাধারণ আলো ছিল না, ছিল এক্সরে। দেখা গেল, একটি নক্ষত্র এই ব্ল্যাকহোলের খুব কাছে চলে এসেছে। ব্ল্যাকহোল স্বভাবমতো তার শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টানে নক্ষত্রটিকে কাছে টেনে নেয়। নক্ষত্রটি তখন নুডলস বা স্প্যাগেটির মতো ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। এই অবস্থাকে বলে স্প্যাগেটিফিকেশন। এ বিষয়ক গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে।
এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই মাঝারি ব্ল্যাকহোলগুলোর সাহায্যে বোঝা যায়, ছোট ব্ল্যাকহোল কীভাবে বড় হয়ে বিশাল ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়।
নক্ষত্রটি ভেঙে যাওয়ার সময় প্রচুর আলো বের হয়। এই আলো ২০১২ সালে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিল। তারপর থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এটি দেখেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, একটি নক্ষত্র মারা গেছে।
হাবল টেলিস্কোপ আর চন্দ্র এক্সরে অবজারভেটরি থেকে তোলা ছবি দেখে বিজ্ঞানীরা এই ঘটনা বুঝতে পারেন। তাঁরা কম্পিউটারে একটি ছবিও বানিয়েছেন। সেখানে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ব্ল্যাকহোল নক্ষত্রটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল।
এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই মাঝারি ব্ল্যাকহোলগুলোর সাহায্যে বোঝা যায়, ছোট ব্ল্যাকহোল কীভাবে বড় হয়ে বিশাল ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মাঝারি ব্ল্যাকহোলগুলো প্রথমে ছোট থাকে। তারপর কোটি কোটি বছর ধরে বড় হতে থাকে। শেষে বিশাল ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। এই বিশাল ব্ল্যাকহোলগুলোই গ্যালাক্সিগুলোকে একসঙ্গে ধরে রাখে।
বিজ্ঞানীরা এখন মহাকাশে আরও এমন ঘটনা খুঁজছেন। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো নভোদুরবিনগুলো এই কাজে সাহায্য করবে। ভেরা রুবিন অবজারভেটরিও কাজ শুরু করেছে। এটি দিয়েও এ ধরনের ঘটনা দেখা যাবে। হয়তো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেও এমন মাঝারি ব্ল্যাকহোল আছে। সেটি লুকিয়ে আছে কোনো এক কোণায়। হয়তো ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা তা খুঁজে পাবেন।
