হাওয়া থেকে পানি তৈরির নতুন যন্ত্র আবিষ্কার
থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে এখন আর শুধু খেলনা বা সাজসজ্জার জিনিস তৈরি হয় না। এই প্রযুক্তি গত চার দশকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে পচনশীল বাসনপত্র ও কৃত্রিম চামড়া তৈরি হচ্ছে। এমনকি মাটি দিয়ে বানানো হচ্ছে পুরো বাড়ি। এবার দুজন তরুণী আরও বড় একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছেন। তাঁরা হাওয়া থেকে পানি তৈরির যন্ত্র বানিয়েছেন।
জার্মানির এফএইচ মুনস্টার ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস থেকে এই দুই তরুণী স্নাতক পাস করেছেন। তাঁদের নাম লুইসা গ্রাউপে ও জুলিকা শোয়ার্জ। তাঁরাই ‘ওয়াটার ফ্রম এয়ার’ নামে একটি থ্রিডি প্রিন্টেড যন্ত্র ডিজাইন করেছেন। তাঁদের দাবি, এই যন্ত্র বাতাস থেকে প্রতিদিন প্রায় ছয় লিটার বিশুদ্ধ পানি তৈরি করতে পারে। এর জন্য শুধু বাতাস ছাড়া আর কিছুই প্রয়োজন নেই। এমনকি বিদ্যুৎও লাগে না।
যন্ত্রটির বেশিরভাগ অংশই থ্রিডি প্রিন্টিং পদ্ধতিতে তৈরি। এটি বাতাস থেকে আর্দ্রতা টেনে নেয় এবং পানির অণু আটকে রাখে। এরপর সেগুলোকে ঘনীভূত করে পানিতে পরিণত করে। যন্ত্রটিতে বিশেষ ধরনের ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ বা MOF বসানো আছে। এটি বাতাসের বেশিরভাগ দূষিত পদার্থ দূর করে দেয়। ফলে অতিরিক্ত ফিল্টারের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। যন্ত্রটির নিচের দিকে একটি কল লাগানো আছে। সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা যায়।
একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এতে প্রায় ৫০০ মিলিলিটার পানি পাওয়া যায়। কিন্তু যন্ত্রটি পুরো দিন চালু রাখলে প্রায় ৬ লিটার পানি তৈরি করতে পারে।
তবে যন্ত্রটি এখনো রয়েছে গবেষণার পর্যায়ে। কিন্তু প্রকৌশলীরা বিশ্বাস করেন, এটি পানি সংকটে ভোগা পরিবারগুলোর জন্য একটি ছোট ও ব্যবহারিক সমাধান হতে পারে। এটি যেহেতু বহনযোগ্য, তাই যেকোনো পরিবারেই ব্যবহার করা যাবে।
যন্ত্রটির নকশায় কয়েকটি অংশ রয়েছে, যেগুলো একটির ওপর আরেকটি সাজিয়ে রাখা যায়। প্রতিটি অংশই থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি। ওপরের অংশটি দেখতে অনেকটা ফ্রেঞ্চ প্রেস কফি মেকারের মতো। এটি বাতাস থেকে পানির অণু টেনে নেয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর এর ঢাকনা বন্ধ হয়ে যায় এবং যন্ত্রটি গরম হতে শুরু করে। এই তাপের ফলে শুরু হয় ঘনীভবন প্রক্রিয়া। এরপর ঘনীভূত পানি ফোঁটা ফোঁটা করে নিচের পাত্রে জমা হয়।
একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এতে প্রায় ৫০০ মিলিলিটার পানি পাওয়া যায়। কিন্তু যন্ত্রটি পুরো দিন চালু রাখলে প্রায় ৬ লিটার পানি তৈরি করতে পারে। প্রকৌশলীদের হিসাব অনুযায়ী, এই পরিমাণ পানি চার সদস্যের একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট।
তবে মনে রাখতে হবে, যন্ত্রটি যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, এটি এখনো ব্যাপক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়। এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো নিয়ে এখনো চলছে গবেষণা। পেটেন্টের কাজও চলছে। এর মূল্য কত হতে পারে, সে ব্যাপারেও এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের পানি সংকটে ভোগেন। এর মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ মানুষ রয়েছেন ‘চরম পানি সংকটে’।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের পানি সংকটে ভোগেন। এর মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ মানুষ রয়েছেন ‘চরম পানি সংকটে’। পানি সংকট সমাধানের বর্তমান পদ্ধতিগুলো সাধারণত বড়, ব্যয়বহুল ও প্রযুক্তিগতভাবে জটিল। এই ব্যবস্থাগুলো পরিবারের ব্যক্তিগত চাহিদার সঙ্গে সবসময় খাপ খায় না।
তবে এই যন্ত্র বাস্তবায়িত হলে, একটি পরিবার দিনে ‘ওয়াটার ফ্রম এয়ার’ যন্ত্র ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে পারবে। থ্রিডি প্রিন্টিং পদ্ধতির আরেকটি বড় সুবিধা হলো, যন্ত্রটির ডিজাইন ফাইল ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা যায়। ফলে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ স্থানীয়ভাবে নিজেদের যন্ত্র তৈরি করে নিতে পারবে।
এই ছোট্ট যন্ত্রটি হয়তো এখনই সারা বিশ্বের পানি সংকট সমাধান করতে পারবে না। কিন্তু এটি একটি নতুন পথ দেখাচ্ছে। এই পথে হেঁটেই হয়তো একদিন প্রতিটি পরিবার নিজেদের প্রয়োজনীয় পানি নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারবে।