পিসি কেন ধীর গতিতে চলে, গতি ফিরে পেতে কী করবেন
প্রতিদিনের কাজের কম্পিউটার বা ল্যাপটপটি কি একটু ধীর গতিতে চলছে? ফাইল খুলতে গেলেই লোডিং হতে থাকে? সমাধান আছে এই লেখায়।
নতুন কম্পিউটার কেনার পর কিছুদিন খুব ভালো পারফরম্যান্স দেয়। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে গতি কমতে থাকে। এর পেছনে আছে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতা। গতি কমে যাওয়া কোনো স্থায়ী সমস্যা নয়। পিসির আগের গতি ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু সহজ কৌশল বা সেটিংস আছে। সেগুলো জানলে কম্পিউটারকে আবার সুপারফাস্ট করা যায়।
যারা নিয়মিত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তাঁরা সবাই হয়তো এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কাজ করতে বসলেই হয়তো আপনার পিসি লোডিং হতে থাকে। তখন মেজাজ খারাও করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। সিস্টেমের গতি কমে যাওয়া খুবই বিরক্তিকর। কম্পিউটার যতই দ্রুত হোক না কেন, এই সমস্যা চলতেই থাকে।
কম্পিউটারের গতি কিন্তু হঠাৎ কমে যায় না। এর পেছনে একটা নির্দিষ্ট কারণ থাকে। আর এই কারণ খুঁজে বের করাই হলো সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ। কম্পিউটার ধীর হওয়ার কয়েকটি সাধারণ কারণ থাকে। কম্পিউটারের কাজের গতি মূলত তিনটি প্রধান কম্পোনেন্টের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত, সিপিইউ। এর গতি গিগাহার্টজ (GHz) এককে মাপা হয়। এই প্রসেসর যত দ্রুত হবে, কম্পিউটার ও অ্যাপগুলো তত দ্রুত কাজ করবে। দ্বিতীয়ত, র্যাম (RAM)। একে আমরা মেমোরি বলি। এর ধারণক্ষমতা গিগাবাইট (GB) এককে মাপা হয়। র্যাম যত বেশি বা দ্রুত হবে, একসঙ্গে তত বেশি প্রোগ্রাম স্বাচ্ছন্দ্যে চালানো যাবে। আর তৃতীয়ত ডিস্ক ড্রাইভ বা স্টোরেজ বা হার্ড ড্রাইভ। স্টোরেজে সব ফাইল জমা থাকে। এর ধারণক্ষমতাও গিগাবাইট বা টেরাবাইট এককে মাপা হয়।
সিপিইউ এর গতি গিগাহার্টজ (GHz) এককে মাপা হয়। এই প্রসেসর যত দ্রুত হবে, কম্পিউটার ও অ্যাপগুলো তত দ্রুত কাজ করবে।
কম্পিউটারে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্টগুলোর ক্ষমতার চেয়ে বেশি ব্যবহার করতে চাইলে কম্পিউটার আপনার কাজের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। ফলে কম্পিউটার অনেক সময় ধরে লোড নিতে থাকে। নাহলে ক্র্যাশ করতে পারে কম্পিউটার। এই পরিস্থিতিতে না পড়তে চাইলে কম্পিউটারটিকে ঠিকমতো ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
পিসি রিস্টার্ট
কম্পিউটারের গতি কমে যাওয়ার ভয় থাকলে রিস্টার্ট করুন। পিসি চালু থাকলে বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য র্যামে জায়গা খরচ হয়। একসঙ্গে অনেক ব্রাউজার ট্যাব খুললে র্যাম ভরে যায়। তখন ধীর হয়ে যায় কম্পিউটারের গতি। একবার রিস্টার্ট করলে র্যাম থেকে অপ্রয়োজনীয় তথ্য মুছে যায়। ফলে শুধু দরকারি অ্যাপগুলোই চলে। এরপর একসঙ্গে সব অ্যাপ না খুলে শুধু কাজের অ্যাপগুলোই খুলুন। নয়তো আবার আগের সমস্যায় ভুগবেন।
টাস্ক ম্যানেজার চেক
কম্পিউটার ধীর গতিতে চলার আরেকটি কারণ হলো আপনি হয়তো র্যাম, সিপিইউ এবং ডিস্ক ড্রাইভের মতো গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্সগুলোর ক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ চালাচ্ছেন। রিসোর্স কতটা ব্যবহৃত হচ্ছে, তা জানতে টাস্ক ম্যানেজার খুলুন। এরপর পারফরম্যান্স ট্যাবে গিয়ে দেখুন, আপনার মূল কম্পোনেন্ট কত শতাংশ কাজ করছে। যদি দেখেন এই রিসোর্সগুলোর ৮০ শতাংশের বেশি ক্রমাগত ব্যবহার হচ্ছে, তার মানে, আপনার পিসি ক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপ নিচ্ছে। এই সমস্যা এড়াতে স্টোরেজ খালি করতে পারেন বা অতিরিক্ত র্যাম/ডিস্ক ড্রাইভ যোগ করতে পারেন। তবে সিপিইউ অতিরিক্ত ওভারলোড হয়ে গেলে দ্রুত গতি পেতে আপনাকে নতুন পিসি বা ল্যাপটপে আপগ্রেড করতে হতে পারে।
পিসি চালু থাকলে বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য র্যামে জায়গা খরচ হয়। একসঙ্গে অনেক ব্রাউজার ট্যাব খুললে র্যাম ভরে যায়। তখন ধীর হয়ে যায় কম্পিউটারের গতি।
স্টার্টআপ প্রোগ্রাম বন্ধ
আপনার পিসি ধীরগতি হওয়ার একটি বড় কারণ হলো, কম্পিউটার চালু হওয়ার সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে শুরু করে। এই অ্যাপগুলো র্যাম দখল করে রাখে। ফলে জরুরি কাজের গতি কমে যায়। এই সমস্যা দূর করতে সেটিংসে গিয়ে যে প্রোগ্রামগুলো নিয়মিত ব্যবহার করেন না, সেগুলো বন্ধ করে দিন। এতে পিসি দ্রুত চালু হবে।
ডিস্কের অতিরিক্ত জায়গা খালি করুন
হার্ড ড্রাইভ পূর্ণ থাকলে পিসি ধীর হয়ে যায়। কারণ অপারেটিং সিস্টেমের কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত খালি জায়গা দরকার। তাই নিয়মিত অপ্রয়োজনীয় ফাইল ও অ্যাপ সরিয়ে ডিস্কের জায়গা খালি করুন। সেরা পারফরম্যান্সের জন্য হার্ডডিস্কে ১০-১৫ শতাংশ এবং এসএসডিতে ২৫-৩০ শতাংশ জায়গা সবসময় খালি রাখা উচিত।
ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার স্ক্যান
ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার অজান্তেই পিসির ক্ষমতা ব্যবহার করে গতি কমিয়ে দেয়। তাই উইন্ডোজ সিকিউরিটি দিয়ে নিয়মিত স্ক্যান করুন অথবা ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
সেরা পারফরম্যান্সের জন্য হার্ডডিস্কে ১০-১৫ শতাংশ এবং এসএসডিতে ২৫-৩০ শতাংশ জায়গা সবসময় খালি রাখা উচিত।
অতিরিক্ত র্যাম যুক্ত
টাস্ক ম্যানেজারের ৮০ শতাংশের বেশি ব্যবহৃত হলে বুঝতে হবে পিসিতে পর্যাপ্ত র্যাম নেই। র্যাম কম থাকলে কম্পিউটার ডেটা আদান-প্রদান করতে গিয়ে ধীর হয়ে যায়। তাই স্লট খালি থাকলে কম্পিউটারে অতিরিক্ত র্যাম যোগ করে নিতে পারেন।
হার্ড ড্রাইভ থেকে এসএসডিতে আপগ্রেড
সাধারণ হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ তুলনামূলকভাবে ধীর। সলিড-স্টেট ড্রাইভ অনেক দ্রুতগতির স্টোরেজ। এটি হার্ড ডিস্ক ড্রাইভের তুলনায় কয়েক গুণ দ্রুত ডেটা পড়তে ও লিখতে পারে। ডিস্ক ড্রাইভ থেকে এসএসডিতে আপগ্রেড করলে পিসির চালু হওয়ার সময় থেকে সব কাজের গতি অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে যাবে।