এআই কি মানুষের বলা মিথ্যা ধরতে পারবে
আমরা ভাবি এআই সব পারে। গান গায়, ছবি আঁকে, কোডিং করে—কী পারে না? কিন্তু একটা মৌলিক প্রশ্ন থেকেই যায়, এআই কি মানুষের বলা মিথ্যা ধরতে পারবে? কেউ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামনে মিথ্যা বললে কি লাই ডিটেক্টর মেশিনের মতো বলে দিতে পারবে, ‘এই লোক মিথ্যা বলছে!’?
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার গবেষকেরা ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এক বিশাল আয়োজন করেছিলেন। গবেষকেরা মানুষের মিথ্যা ধরার ক্ষমতা পরীক্ষা করতে কোনো মানুষকে ডাকেননি, ডেকেছেন ১৯ হাজার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিচারক! মোট ১২টি ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এআইয়ের সামনে মানুষের অডিও এবং ভিডিও ক্লিপ দেওয়া হয়। কাজ একটাই, ভিডিওর মানুষটি সত্য বলছে নাকি মিথ্যা, তা বের করতে হবে।
ফলাফলে যাওয়ার আগে মানুষের স্বভাবটা একটু বলি। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ জন্মগতভাবেই বিশ্বাসপ্রবণ। একে বলা হয় ট্রুথ-ডিফল্ট থিওরি। মানে, কেউ কিছু বললে আমরা সাধারণত ধরেই নিই সে সত্য বলছে। সারা দিন সবাইকে সন্দেহ করে চললে তো আর সমাজ বা সম্পর্ক টেকে না!
কিন্তু এআই? ওটা কি মানুষের মতো বিশ্বাস করে, নাকি গোয়েন্দাদের মতো সন্দেহ করে? গবেষণার ফলাফল বেশ চমকপ্রদ এবং কিছুটা ভয়েরও। দেখা গেল, মিথ্যা ধরার ক্ষেত্রে এআই মানুষের মতো নয়; বরং স্বভাব উল্টো। এআই অতি সন্দেহবাতিক। জেরার মতো পরিস্থিতিতে এআই মিথ্যা ধরতে পেরেছে প্রায় ৮৫.৮ শতাংশ ক্ষেত্রে। শুনে মনে হচ্ছে দারুণ সাফল্য?
বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ জন্মগতভাবেই বিশ্বাসপ্রবণ। একে বলা হয় ট্রুথ-ডিফল্ট থিওরি। মানে, কেউ কিছু বললে আমরা সাধারণত ধরেই নিই সে সত্য বলছে।
কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠ হলো, এআই সত্য কথাকেও মিথ্যা বলে রায় দিয়েছে! সত্য কথা চিনতে পেরেছে মাত্র ১৯.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। অর্থাৎ এআই ধরে নেয় যে সামনের জন মিথ্যাই বলছে। গবেষকরা একে লাই-বায়াস বলছেন। সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব কমিউনিকেশনস-এ।
মজার ব্যাপার হলো, যখন জেরার বদলে বন্ধুদের আড্ডার মতো পরিস্থিতি বা সাধারণ কথোপকথন দেওয়া হলো, তখন এআই কিছুটা মানুষের মতোই বিশ্বাস করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে মিথ্যা ধরার ক্ষেত্রে এআই মানুষের চেয়ে অনেক কাঁচা এবং ভুলপ্রবণ।
গবেষক ডেভিড মার্কোভিচ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ‘আমরা হয়তো ভাবছি এআই একটা নিরপেক্ষ ও হাই-টেক সমাধান হবে, যা দিয়ে সহজেই চোর ধরা যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি।’
এআই হয়তো অনেক স্মার্ট, কিন্তু মানুষের জটিল মনস্তত্ত্ব বুঝতে ওই যন্ত্রের এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই এখনই কাউকে সন্দেহ হলে এআইয়ের কাছে বিচার দিতে যাবেন না। কারণ, আপনার এআই বন্ধুটি হয়তো একজন সত্যবাদীকেও মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিতে পারে! মিথ্যা ধরার খেলায় মানুষ এখনো যন্ত্রের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে।