সবাই কেন এআই পছন্দ করে না

এআই অনেকের কাজ সহজ করে দিলেও সবাই এআই কে পছন্দ করে নাছবি: গেটি ইমেজ

চ্যাটজিপিটি এখন ইমেইল লিখে দিচ্ছে, নেটফ্লিক্স বলে দিচ্ছে আজ রাতে কোন মুভিটি আপনার ভালো লাগবে, এমনকি রোগ ধরতেও সাহায্য করছে কম্পিউটার। এসব এখন আর সায়েন্স ফিকশন মুভির গল্প নয়, আমাদের প্রতিদিনের বাস্তব।

কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই প্রযুক্তি নিয়ে মানুষের অনুভূতি দুই ভাগে বিভক্ত। একদল মানুষ এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মহা খুশি। আরেকদল মানুষ একে দেখলেই রেগে যাচ্ছেন, ভয় পাচ্ছেন, কিংবা সন্দেহ করছেন।

কেন এই দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া? সবাই কেন এআই পছন্দ করছে না বা অপছন্দ করছে না। উত্তরটা আসলে প্রযুক্তিতে নয়, লুকিয়ে আছে আমাদের মনে।

মানুষ হিসেবে আমরা সেই জিনিসকেই বিশ্বাস করি, যা আমরা বুঝি। ধরুন, গাড়ির চাবি ঘোরালে ইঞ্জিন চালু হয়, কিংবা লিফটের বোতাম টিপলে লিফট চলে আসে; এগুলো আমাদের চেনা, চোখের সামনে হতে দেখি।

কিন্তু এআই কাজ করে একটা কালো বাক্সের মতো। আপনি ইনপুট দিলেন, ওপাশ থেকে উত্তর চলে এল। কিন্তু মাঝখানে ঠিক কী লজিকে কাজটা হলো, তা বেশিরভাগ মানুষই বোঝেন না। মনোবিজ্ঞান বলছে, এই না বোঝা বা নিয়ন্ত্রণের অভাবটাই আমাদের মনের মধ্যে অস্বস্তি আর সন্দেহের জন্ম দেয়।

একটা মজার তথ্য দিই। মানুষ ভুল করলে আমরা সেটা সহজেই মেনে নিই, হয়তো একটু সহানুভূতিও দেখাই। কারণ, মানুষ মাত্রই ভুল—কথাটা আমরা মেনে চলতে চাই। কিন্তু একটা যন্ত্র বা অ্যালগরিদম যদি ভুল করে, তখন আমাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মনে হয়, ফালতু প্রযুক্তি!

আরও পড়ুন
এআই কাজ করে একটা কালো বাক্সের মতো। আপনি ইনপুট দিলেন, ওপাশ থেকে উত্তর চলে এল। কিন্তু মাঝখানে ঠিক কী লজিকে কাজটা হলো, তা বেশিরভাগ মানুষই বোঝেন না।

গবেষকরা একে বলেন অ্যালগরিদম অ্যাভারশন। যন্ত্রকে আমরা নিখুঁত ও নিরপেক্ষ হিসেবে দেখতে চাই। তাই যন্ত্র যখন পক্ষপাতমূলক আচরণ করে বা ভুল ছবি দেখায়, তখন আমাদের বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। অথচ মানুষ কিন্তু এর চেয়ে ঢের বেশি ভুল করে!

আমরা জানি এআইয়ের কোনো মন বা আবেগ নেই। কিন্তু চ্যাটবট যখন অতিরিক্ত ভদ্রতা দেখিয়ে উত্তর দেয়, বা কোনো অ্যাপ যখন মনের গোপন কথাটি বুঝে সাজেশন দেয়, তখন অনেকের গা ছমছম করে। মনে হয়, কেউ কি আমার ওপর নজর রাখছে?

আসলে জড় বস্তুর মধ্যে মানুষের স্বভাব খোঁজা আমাদের পুরনো অভ্যাস। কিন্তু এআই যখন মানুষের মতো আচরণ করেও মানুষের মতো আবেগ দেখাতে পারে না, তখন একটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়। জাপানি বিজ্ঞানীরা একে বলেন আনক্যানি ভ্যালি; দেখতে বা শুনতে মানুষের মতো, কিন্তু আসলে মানুষ না। এই ব্যাপারটা আমাদের মস্তিষ্কে বিপদ সংকেত পাঠায়।

শিক্ষক, লেখক, আইনজীবী বা শিল্পীদের ভয়টা একটু অন্য জায়গায়। তাঁরা যখন দেখেন, একটা সফটওয়্যার তাদের কাজগুলো করে ফেলছে, তখন তাঁরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কিত হন। মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কী আমরা চাকরি হারাচ্ছি?

আরও পড়ুন
এআই যখন মানুষের মতো আচরণ করেও মানুষের মতো আবেগ দেখাতে পারে না, তখন একটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়। জাপানি বিজ্ঞানীরা একে বলেন আনক্যানি ভ্যালি।

এই ভয় থেকে জন্ম নেয় প্রতিরোধ। তখন তারা এআইয়ের ভালো দিকগুলোও আর দেখতে চান না। এটা আসলে তাদের নিজেদের গুরুত্ব কমে যাওয়ার ভয়।

তবে সব ভয়ই যে অযৌক্তিক, তা নয়। এআই অনেক সময় ভুল বা পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দেয়। এটা মানুষকে বিপদে ফেলতে পারে। তাই অন্ধভাবে বিশ্বাস করাও বোকামি।

চ্যাটজিপিটির কোনো আবেগ নেই
ছবি: শাটারস্টোক

মূল কথা হলো, জোর করে কাউকে এআই বিশ্বাস করানো যাবে না। বিশ্বাস অর্জন করতে হয়। যেদিন মানুষ বুঝবে এই কীভাবে কাজ করে এবং যখন দেখবে এআই তাদের সাহায্য করছে, হয়তো সেদিনই এই ঘৃণা কমে আসবে। তার আগ পর্যন্ত এই গ্রহণযোগ্যতা আর সন্দেহের দোলাচল চলতেই থাকবে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, গণিত বিভাগ, পদ্মা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শরীয়তপুর

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন