মস্তিষ্কে চিপ বসানো সেই রোগী শুধু চিন্তা করে মাউস নাড়াতে পারছেন: ইলন মাস্ক

অবশেষে মস্তিষ্কে চিপ বসানো সেই রোগীর ব্যাপারে মুখ খুললেন নিউরালিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। তিনি জানান, প্রথম যে স্বেচ্ছাসেবীর মস্তিষ্কে গত মাসে মাইক্রোচিপ বসানো হয়েছিল, তিনি এখন শুধু চিন্তা করে কম্পিউটারের মাউস নাড়াতে পারছেন। এভাবে তিনি কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন শুধু মনে মনে ভেবে। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলেও জানিয়েছেন মাস্ক।

গত ২৯ জানুয়ারি ইলন মাস্ক এক্স (আগের নাম টুইটার) জানান, ‘প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তির মস্তিষ্কে সফলভাবে নিউরালিংকের চিপ যুক্ত করা হয়েছে। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রাথমিকভাবে আশাজনক সাড়ার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে নিউরনে।’ এবারে তিনি বললেন, ‘অগ্রগতি ভালো। সেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের জানা মতে কোনো রোগের প্রভাব বা চিহ্ন নেই। এখন শুধু চিন্তা করে করে একটি স্ক্রিনে মাউস (কার্সর) নাড়াতে পারছেন তিনি।’ এ তথ্য জানা গেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সংবাদে। রয়টার্সের সূত্র বলছে, এক্স-এ আয়োজিত মহাকাশবিষয়ক এক আয়োজনে মাস্ক এ কথা বলেন।

ভাবুন, স্টিফেন হকিং যেকোনো টাইপিস্ট বা অকশনিয়ারের চেয়ে দ্রুত যোগাযোগ করতে (লিখতে) পারছেন। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
—ইলন মাস্ক

‘নিউরালিংক’স এন১’ নামের এ চিপ বসাতে প্রথমে মানুষের মস্তিকে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম তার ঢোকানো হয় খুব সাবধানে। তারপর সেই তারগুলো দিয়ে মস্তিষ্কের সংকেত সরাসরি ব্লুটুথ সংযোগের মাধ্যমে মোবাইল বা কম্পিউটারে পাঠানো যায়। যাঁরা শারীরিকভাবে হাত নাড়াতে অক্ষম, তাঁরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পিউটার চালাতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন ইলন মাস্ক। তাঁর ভাষ্যে জানা গিয়েছিল, সরাসরি হাত দিয়ে মাউস না চেপে মস্তিষ্কের সাহায্যে কম্পিউটারের কার্সর পরিচালনা করা যাবে। তাই ইলন মাস্ক এর নাম দিয়েছিলেন 'টেলিপ্যাথি'। তাঁর নতুন দাবি সত্য হলে এটি ইতিমধ্যেই কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। রয়টার্সের সূত্র বলছে, নিউরালিংক বর্তমানে যত বেশি সম্ভব মাউস ক্লিক করানোর চেষ্টা করছে রোগীকে দিয়ে। তবে রয়টার্সের অনুরোধে এর বেশি বিস্তারিত তথ্য দিতে এখনো রাজি হয়নি নিউরালিংক।

আগে মাস্ক জানিয়েছেন, টেসলার সহায়তা নিয়ে তিনি একসময় পুরোপুরি সক্রিয় সাইবারনেটিক বাহু তৈরি করতে চান। এই বাহু চলবে নিউরালিংকের এন১ চিপ কাজে লাগিয়ে। এক বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘ভাবুন, স্টিফেন হকিং যেকোনো টাইপিস্ট বা অকশনিয়ারের চেয়ে দ্রুত যোগাযোগ করতে (লিখতে) পারছেন। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

ইলন মাস্ক
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

এর আগে, ২০২৩ সালের মে মাসে ইলন মাস্কের এ প্রতিষ্ঠানকে মানুষের মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ বসানোর অনুমতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বিভাগ (এফডিএ)। অনুমতি পাওয়ার পর এই প্রথম মস্তিষ্কে চিপ বসানোর চেষ্টা করে সফল হলো নিউরালিংক। তবে মাস্কের এই চিপ নিয়ে অনেক সমালোচনাও আছে। ২০২২ সালে রয়টার্স জানিয়েছিল, এই চিপ পরীক্ষার কারণে তখন ভেড়া, বানর ও শূকরের মতো প্রায় দেড় হাজার প্রাণী মারা গিয়েছিল। যদিও নিউরালিংক তা অস্বীকার করে। এর আগে, ২০২১ সালে নিউরালিংকের ‘লিংক’ নামে একটি চিপ সফলভাবে বসানো হয় পেজার নামে একটি বানরের মাথায়। সেটাই ছিল অ্যানিমেল ট্রায়াল, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাণীর মাথায় এই চিপ বসিয়ে পরীক্ষা করে দেখার সময়ের সবচেয়ে বড় সফলতা।

মানবমস্তিষ্কে চিপ বসানোর এই প্রক্রিয়া সবে শুরু হলো। এরকম আরও কিছু মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানো হলে বোঝা যাবে, চিপটি মস্তিষ্কে স্থাপনের জন্য আসলে কতটা কার্যকর। বলা বাহুল্য, যাঁদের মস্তিষ্কে চিপ বসানো হচ্ছে, তাঁরা এই চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হয়েছেন ও অনুমতি দিয়েছেন। সব মিলে চিপটি কতটা কার্যকর, তা বুঝতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

সূত্র: রয়টার্স, ফরচুন ডটকম