বিদ্যুতের তারে ঝুলে থাকা রঙিন বলগুলো কী কাজে লাগে
বাস বা ট্রেনের জানালায় বসে দূরের যাত্রায় বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে কার না ভালো লাগে? দিগন্তজোড়া মাঠ, গাছপালা আর তার বুক চিরে চলে যাওয়া বিশাল সব ইলেকট্রিক টাওয়ার। হাই-ভোল্টেজ বিদ্যুতের তারগুলো মাইলের পর মাইল চলে গেছে। কিন্তু কখনো কি খেয়াল করেছেন, মাঝেমধ্যে এই তারগুলোর ওপর বড় বড় কমলা, লাল, হলুদ বা সাদা রঙের বল ঝুলে থাকে?
নিচ থেকে দেখলে মনে হয়, বাচ্চারা বোধ হয় খেলার ছলে বলগুলো ওখানে আটকে দিয়েছে। অথবা কেউ কেউ ভাবেন, তারের ওজন ঠিক রাখার জন্য বা আবহাওয়া মাপার জন্য এগুলো বসানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা আসলে মুভির গল্পের মতো জটিল নয়, বরং অনেক বেশি জীবনঘনিষ্ঠ। এই বলগুলো সেখানে ঝোলানো হয়েছে একটি মাত্র কারণে, জীবন বাঁচানোর জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এই বলগুলো বসানোর নিয়ম করেছে। এদের পোশাকি নাম ভিজিবিলিটি মার্কার। সহজ বাংলায় দৃশ্যমানতার চিহ্ন।
মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টার বা ছোট বিমান একটু নিচ দিয়ে উড়ে যায়। আকাশ থেকে নিচের মাটি বা গাছপালার ভীরে ধূসর রঙের সরু বিদ্যুতের তারগুলো দেখা কিন্তু বেশ কঠিন। পাইলট যদি খেয়াল না করেন এবং তারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে, তবে মুহূর্তেই ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
ঠিক এই বিপদটা এড়াতেই তারের ওপর ওই উজ্জ্বল রঙের বলগুলো বসানো হয়। যাতে দূর থেকে পাইলটরা বুঝতে পারেন, সামনে বিপদ! ওখানে বিদ্যুতের লাইন আছে।
সাধারণত সব জায়গায় এগুলো দেখা যায় না। যেখানে বিমান বা হেলিকপ্টার নিচু হয়ে ওড়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানেই এগুলো থাকে। যেমন, বিমানবন্দরের আশপাশে। পাহাড়ি উপত্যকা বা ক্যানিয়নে। বড় নদী বা জলাশয়ের ওপর দিয়ে যাওয়া লাইনে। আর হাইওয়ের ধারের বড় টাওয়ারে।
নিচ থেকে দেখলে এদের আকার বোঝা যায় না। মনে হয় টেনিস বল বা ফুটবলের মতো। কিন্তু অবাক করা তথ্য হলো, এগুলো একেকটা বিশাল সাইজের! এফএএ-এর নিয়ম অনুযায়ী, এই বলগুলোর ব্যাস সাধারণত ৩৬ ইঞ্চি বা ৯১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। মানে একটা বিশাল বিচ বলের সমান! তবে নিচু লাইনের জন্য ২০ ইঞ্চির বলও ব্যবহার করা হয়।
এখন প্রশ্ন হলো, বলগুলো রঙিন হয় কেন? কমলা, হলুদ বা সাদা রংগুলোই কেন বেছে নেওয়া হয়? কারণ, এই রংগুলো মানুষের চোখে চট করে ধরা পড়ে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক কমলা রংটি ইঞ্জিনিয়ারিং ও মহাকাশ শিল্পে খুব জনপ্রিয়। আকাশের নীল বা মাটির সবুজ ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে এই রংটি সবচেয়ে ভালো কনট্রাস্ট তৈরি করে। ফলে পাইলট অনেক দূর থেকেই সাবধান হতে পারেন।
এত সাবধানতার পরেও মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। এই তো, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে একটি ছোট বিমান বিদ্যুতের তারে ধাক্কা খেয়ে মাঠে আছড়ে পড়ে এবং চারজন মারা যান। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই বলগুলো থাকার কারণে হাজার হাজার সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বিমান ভ্রমণ এখনো পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম।