এআইয়ের যুগে যে ১০টি দক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে
ইন্টারনেট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে পৃথিবী দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যেসব কাজ একসময় প্রচলিত ছিল, সেগুলোর অনেকটাই আজ অচল হয়ে গেছে। আগামী দশ বছরে আরও নতুন ধরনের কাজ আসবে। তাই এখন থেকেই ঠিক করা দরকার, আপনি কী শিখবেন, কেন শিখবেন। এখন এমন কিছু শিখতে হবে, যাতে পরিবর্তনের এই ঢেউয়ে এগিয়ে থাকা যায়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকবে এমন ১০টি দক্ষতা নিচে দেওয়া হলো।
১. এআই ও বিগ ডেটা বোঝা
চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা গুগল অ্যাসিস্টেন্টের কথা তো শুনেছেন। এগুলো এমন প্রযুক্তি, যা মানুষের মতো শিখতে ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একে বলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। আর বিগ ডেটা হলো অনেক তথ্য থেকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া। চিকিৎসা, শিল্প, শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই এআই ও বিগ ডেটা ব্যবহারের মাত্রা বাড়ছে। তাই ভবিষ্যতে এগুলোতে দক্ষ হলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন।
২. কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সাইবার নিরাপত্তা
আজকাল আমাদের ব্যক্তিগত, অফিসের বা ব্যবসার প্রায় সব তথ্যই কোথাও না কোথাও অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডিভাইসগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেই তথ্যের সুরক্ষা। এক মুহূর্তের অসতর্কতায় তথ্য চুরি বা বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে, ডেটা কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়, এসব বোঝা এখন অত্যাবশ্যক।
৩. ওয়েব কমিউনিকেশন
ইন্টারনেটে কোটি কোটি তথ্য আছে। কিন্তু সেখান থেকে সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ কাজ নয়। ওয়েব কমিউনিকেশন মানে হলো অনলাইনে এমনভাবে বার্তা পাঠানো, যাতে পাঠক বা দর্শক তাতে আগ্রহী হয়। এর মধ্যে ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল নিউজ লেটার সবই অন্তর্ভুক্ত। তাই যেকোনো পেশায় এগোতে হলে এই দক্ষতা আপনার কাজে লাগবে।
৪. উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা ও উদ্যোক্তা মনোভাব
নতুন কিছু ভাবা, সমস্যার ভিন্ন সমাধান বের করা আর সুযোগকে কাজে লাগানো উদ্যোক্তা মনোভাবের অংশ। একসময় শুধু কথা বলার জন্য ফোন ব্যবহৃত হতো। এখন সেটাই ব্যাংকিং, ছবি তোলা বা কেনাকাটার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এমন বদল আসে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা থেকে। আপনি চাকরি করুন বা ব্যবসা, এই মনোভাব থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের জায়গা তৈরি করতে পারবেন।
৫. পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া
নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই ও উবারের মধ্যে একটা মিল আছে। এই তিনটি কোম্পানিই ডেটা ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে গেছে। একসময় মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে চড়ত, এখন চড়ে মোটরগাড়িতে। আগে মানুষ চিঠি লিখে যোগাযোগ করত, এখন ইমেলে যোগাযোগ করে। এসব কোম্পানি সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলে নিয়েছে বলেই আজ সফল। তাই নতুন প্রযুক্তি, পদ্ধতি বা পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
৬. নিজের ক্যারিয়ার পরিচালনা
চাকরি বা পেশাজীবনে শুধু সুযোগের অপেক্ষা করে বসে থাকলে চলবে না। কী শিখতে হবে, কোন দক্ষতা বাড়াতে হবে আর কোন পথে এগোতে হবে, এসব পরিকল্পনা নিজেকেই করতে হবে। বাজারের চাহিদা বদলালে নিজের পরিকল্পনাও বদলাতে হবে। তাই নিজের শেখা, অভিজ্ঞতা আর লক্ষ্য মিলিয়ে ক্যারিয়ারের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখা জরুরি।
৭. ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান ও নেতৃত্ব
ভালো নেতা শুধু নির্দেশ দেন না, দলকে অনুপ্রাণিতও করেন। কর্মস্থলে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করলে উৎপাদনশীলতা ও সন্তুষ্টি উভয়ই বাড়ে। এজন্য নিজের মনোভাব ইতিবাচক রাখা, অন্যকে বোঝা ও সহযোগিতা করা গুরুত্বপূর্ণ। নেতৃত্বের এই মানবিক দিক ভবিষ্যতে আরও বেশি মূল্য পাবে।
৮. স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
সঠিক মানুষকে সঠিক কাজে যুক্ত করাই একজন দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকের কাজ। কিন্তু প্রযুক্তি যত জটিল হচ্ছে, ততই উপযুক্ত জনশক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। শুধু নিয়োগ দিলেই হবে না, তাদের ধরে রাখার কৌশলও জানতে হবে। তাই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশল ভবিষ্যতে প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য হবে।
৯. বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া
শুধু তথ্য থাকাই যথেষ্ট নয়, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই আসল দক্ষতা। বাজারের পরিবর্তন, গ্রাহকের অভ্যাস বা প্রতিযোগিতার ধরন, সবকিছু মিলিয়ে করণীয় ঠিক করতে হয়। এজন্য বিশ্লেষণী দক্ষতা থাকলে যেকোনো পেশায় আপনাকে আলাদা করে চেনা যাবে।
১০. টেকসই উন্নয়নে সম্পৃক্ততা
পৃথিবীর সম্পদ সীমিত, কিন্তু চাহিদা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধে এখন ব্যবসা ও উন্নয়নের সবক্ষেত্রে টেকসই পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। যারা দীর্ঘমেয়াদে সমাধান তৈরি করতে পারে, পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক দায়িত্বের কথা ভাবে, তাদের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়বে।
এই দক্ষতাগুলো শেখার জন্য কোনো বিশেষ ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। অনলাইনে ১০-১৪ সপ্তাহের কোর্স পাওয়া যায়, এবং অনেক ক্ষেত্রেই আগে থেকে টাকা দিতে হয় না। যোগ্যতা প্রমাণ করলে পরে পরিশোধের সুযোগ থাকে। বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে নিয়মিত নতুন দক্ষতা শিখতেই হবে। নিজের আগ্রহ থেকে একটি বেছে নিয়ে শুরু করুন, হয়তো সেটিই হবে আপনার ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।