কিছু ফুল আছে, যেগুলোকে শুধু রাতের বেলায় ফুটতে দেখা যায়। যেমন শিউলি, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, বেলি, জুঁই, নাইটকুইন—আরও কত কত ফুল। খেয়াল করলে দেখবেন, রাতে ফোটা ফুল সাধারণত সাদা রঙের হয়। এমন হওয়ার কারণ কী আসলে?
এ প্রশ্নের উত্তর জানার আগে জানতে হবে ফুল কেন ফোটে। তাহলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। নিজেদের বংশবৃদ্ধির জন্য গাছ নিয়ম করে ফুল ফোটায়। ফুল থেকে বিশেষ এক প্রক্রিয়ায় ফল এবং সেখান থেকে বীজ উৎপন্ন হয়। এ বীজের মধ্যেই সুপ্ত থাকে গাছের পরবর্তী বংশধর।
কিন্তু গাছের ফুল থেকে বীজ হওয়ার জন্য ফুলের পরাগায়ণ জরুরী। অনেকেই জানেন, পরাগায়ণ হচ্ছে ফুলের স্ত্রীকেশরের ডিম্বাণুর সঙ্গে পুংরেণুর মিলন প্রক্রিয়া। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এ আর এমন কী কঠিন কাজ! হ্যাঁ, গাছের হাত-পা থাকলে বিষয়টা সহজই ছিল। কিন্তু হাত-পায়ের অভাবে গাছকে পরাগায়ণের জন্য অন্য কোনো প্রাণীর সাহায্য নিতে হয়।
এ কাজে তাকে সাহায্য করে মৌমাছি, বাদুড়, প্রজাপতিসহ আরও কিছু প্রাণী। যেমন ধরা যাক, মৌমাছি ফুলের মধু খাওয়ার জন্য ফুলের গায়ে বসে। সে সময় তার পায়ে বা দেহের অন্য কোথাও লেগে যায় অসংখ্য পুংরেণু। এই মৌমাছি যখন আরেক গাছের আরেক ফুলে বসে মধু খায়, তখন অজান্তেই সে ওই ফুলের স্ত্রী কেশরে রেখে আসে পুংরেণু। ফলাফল—পরাগায়ণ। তা থেকে ক্রমান্বয়ে ফল ও বীজ।
কে জানে, মানুষের মতো প্রাণীদেরও যদি টর্চলাইট থাকত, তাহলে হয়তো অনেক প্রাণীরই রাতেরবেলা খাবার খুঁজতে যেতে হতো। তবে তাদের কাছে টর্চলাইট না থাকলেও বিশেষ কিছু ব্যবস্থা প্রকৃতিই দিয়ে রেখেছে। যেমন মৌমাছি যাতে রাতের অন্ধকারে ফুল চিনতে ভুল না করে, এজন্য কিছু গাছের ফুল হয় সাদা। যাতে অনেক দূর থেকেও মৌমাছিরা ফুলের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। শুধু কি তাই? এসব ফুলের আছে বাহারী সুগন্ধ। রাতে ফোটা ফুলের এটা আরেকটা বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই কীটপতঙ্গ সহজে ফুলের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। আর এসবের প্রধান উদ্দেশ্য ওটাই—মৌমাছি বা পোকামাকড়দের আকৃষ্ট করা।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা