জিরাফের গায়ে দাগ থাকে কেন
জিরাফ লম্বা গলার জন্য সবার কাছে পরিচিত। তাই ওদের গায়ের দাগ হয়তো তেমন চোখে পড়ে না। শুধু সুন্দর দেখানোর জন্য এ দাগগুলো হয়নি। এর পেছনে লুকিয়ে আছে বিজ্ঞান। জিরাফের বেঁচে থাকার জন্য ওই দাগগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
লুকিয়ে থাকার কৌশল
জিরাফের এই দাগের কারণে ওদের লুকিয়ে থাকতে সুবিধা হয়। জিরাফ এমনিতে এত লম্বা যে লুকিয়ে থাকা খুব কঠিন। তাই প্রাকৃতিক কিছু সুবিধা না পেলে ওদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হতো না। এজন্যই এদের গায়ে এমন দাগ থাকে। গাছের ছায়া মাটিতে পড়লে আলো-ছায়ার খেলা হয়। জিরাফের গায়ের দাগ সেই আলো-ছায়ার সঙ্গে মিশে যায়। ফলে শিকারি প্রাণীরা ওদের সহজে দেখতে পায় না।
আরেকটা মজার বিষয় হলো, জিরাফ যেখানে থাকে, সেই এলাকার গাছপালার মতোই ওদের গায়ের দাগগুলো হয়। যেমন আকাশিয়া গাছের ডালপালার মতো দাগ থাকে ওদের গায়ে। ছোট জিরাফদের জন্য এটা খুবই জরুরি। কারণ বাঘ বা সিংহের মতো হিংস্র প্রাণীদের হাত থেকে ওদের বেঁচে থাকতে হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বাচ্চা জিরাফদের গায়ে বড় আর গোলাকার দাগ থাকে। তাই ওরা বেশি দিন বাঁচে।
শরীর ঠান্ডা রাখার উপায়
জিরাফরা আফ্রিকার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাস করে। কিন্তু এরা ঘামায় না। আবার কুকুরের মতো জিভ বের করেও হাঁপাতে পারে না। তাহলে শরীর ঠান্ডা হবে কীভাবে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ওদের শরীরের দাগের নিচে। প্রতিটা দাগের নিচে আছে অনেক রক্তনালী। গরম লাগলে এই রক্তনালীগুলো ফুলে যায়। তখন বেশি রক্ত চলে আসে দাগের নিচে। এই রক্ত শরীরের গরম বাইরে ছেড়ে দেয়। ফ্যান চালু করলে যেমন ঠান্ডা লাগে, অনেকটা তেমন। বিজ্ঞানীরা বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করে দেখেছেন, গরমের সময় জিরাফের দাগ আশপাশের চামড়ার চেয়ে বেশি গরম থাকে।
আরও মজার বিষয় হলো, শীতকালে এই দাগ উল্টো কাজ করে। তখন রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে শরীরের গরম বাইরে বের হয় না। শরীর গরম থাকে। বড় দাগ ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য ভালো। আর ছোট দাগ গরম আবহাওয়ার জন্য উপকারী।
পরিবার ও বন্ধুদের চেনার উপায়
জিরাফরা তাদের দাগ দেখেই পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারে। যাদের দাগ একরকম, তারা একসঙ্গে থাকতে পছন্দ করে। মা জিরাফের দাগের সঙ্গে বাচ্চার দাগ মিলে যায়। কারণ, এই দাগের ধরন মা থেকে বাচ্চায় চলে যায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জিরাফের দাগ তাদের স্বাস্থ্য আর সামাজিক অবস্থান বোঝায়। সঙ্গী নির্বাচনেও এই দাগ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই বিষয়টা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। এজন্য দরকার আরও গবেষণা।