মারা গেল বাংলাদেশের বিরল গোলাপি হাতির বাচ্চা
ঘটনাটি ঘটে গত ২১ অক্টোবর, মঙ্গলবার। ঘটনাস্থল রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের বরুণাছড়ি এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা সকালে কাপ্তাই হ্রদের ধারে একটি হস্তিশাবকের মৃতদেহ ভাসতে দেখেন। মৃতদেহটি মা হাতিসহ একদল বুনো হাতি ঘিরে রেখেছিল। খবর পেয়ে প্রাণিসম্পদ ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু যখনই বন বিভাগের কর্মীরা বিরল প্রজাতির এই গোলাপি হাতি শাবকটির মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য এগোতে চেষ্টা করেন, তখনই মা হাতিসহ পালের সদস্যরা তেড়ে এসে বাধা দেয়। হাতির এই পাহারার কারণে শাবকটির মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই বিরল গোলাপি রঙের হস্তিশাবকটির বয়স ছিল প্রায় ৯ মাস। এটি এশিয়ান প্রজাতির হাতি। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সুবলং রেঞ্জের কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, ‘গতকাল থেকে তাঁরা মৃত শাবকটি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনো সফল হননি। হাতির পালটিকে জোর করে তাড়িয়ে শাবকটি উদ্ধার করতে গেলে হাতির দল ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকার মানুষের ক্ষতি করতে পারে।’
তাই মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাঁরা হাতির পালটিকে না তাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। মৃত হাতিটির ময়নাতদন্ত করা হলে হস্তিশাবকের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এর আগে, গত ১৩ জুন রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একদল হাতিকে পানিতে সাঁতরাতে দেখা যায়। সেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোড়ন তোলে। কারণ, সেই ছবিতেই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে একটি হালকা গোলাপি রঙের হস্তিশাবককে দেখা যায়। এমন বিরল হাতি বাংলাদেশে আগে কেউ দেখেনি।
রাঙামাটির বনে বিরল গোলাপি হাতির দেখা পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ সেটির খোঁজে অভিযানে যান। পরে তিনি তাঁর এই অভিজ্ঞতা ও অভিযান নিয়ে বিজ্ঞানচিন্তায় একটি বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দেন। তিনি জানান, ‘দেহের এমন রং দেখে অনেকের কাছে এটি ভিন্ন প্রজাতি বলে মনে হতে পারে। আসলে এই গোলাপি হাতি বিশেষ কোনো প্রজাতির হাতি নয়। এটি এশিয়ান হাতির মধ্যে রংজনিত ভিন্নতা মাত্র। হাতির এমন রং অত্যন্ত বিরল ঘটনা। প্রায় ১০ হাজার শাবকের মধ্যে একটি এমন রঙের ভিন্নতা নিয়ে জন্মাতে পারে। এ থেকে বোঝা যায়, হাতির এই গোলাপি রং কতটা বিরল।’
প্রাণীর দেহের রং নির্ধারিত হয় মেলানিন নামে একটি বিশেষ ধরনের রঞ্জক দিয়ে। বিশেষ করে এই মেলানিনের মাধ্যমে প্রাণীর ত্বক, লোম ও চোখের রং নির্ধারিত হয়। আবার মেলানিন তৈরি নিয়ন্ত্রিত হয় জিনগত প্রচ্ছন্ন ফ্যাক্টরের সাহায্যে। পিতা ও মাতা উভয়ের থেকে বাচ্চার দেহে যখন মেলানিন তৈরির প্রচ্ছন্ন জিন বা ফ্যাক্টর স্থানান্তরিত হয়, তখন বাচ্চার দেহে মেলানিন তৈরি হতে পারে না। আবার অনেক সময় মেলানিন তৈরির জিনে মিউটেশন ঘটলেও এমনটি হতে পারে। ফলে বাচ্চার ত্বক, লোম ও চোখের রং সাদা, গোলাপি বা বাদামি হতে পারে। প্রাণিদেহের এসব অংশে স্বাভাবিক রং দেখা না গেলে এমন প্রাণীকে বিজ্ঞানীরা অ্যালবিনো হিসেবে অভিহিত করেন।