পেঙ্গুইন কেন উড়তে পারে না

দুই পায়ে সোজা দাঁড়িয়ে হেলেদুলে হাঁটে পেঙ্গুইনছবি: সংগৃহীত
সাদাকালো এ পাখি দেখতে ভীষণ মিষ্টি। দুই পায়ে সোজা দাঁড়িয়ে হেলেদুলে হাঁটে। এদের সব বৈশিষ্ট্য পাখির সঙ্গে মিলে গেলেও আকাশে উড়তে পারে না। কিন্তু কেন?

শীত পড়ি পড়ি করছে। আর কদিন পরে হিমশীতল চাদরে ঢেকে যাবে পুরো দেশ। শীত আমাদের কাছে আসে অতিথির মতো। বড়জোর দুইমাস হাড় কাঁপিয়ে আবার বিদায় নেয়। কিন্তু পৃথিবীর সব অংশের অবস্থা এমন নয়। বিশেষ করে মেরু অঞ্চল বছরের পুরোটা সময়জুড়ে থাকে বরফের রাজত্ব। হিমশীতল সেই পরিবেশে মানুষের আনাগোনা তেমন না থাকলেও আছে বেশ কিছু প্রাণী। পেঙ্গুইন তাদের মধ্যে অন্যতম। উত্তর গোলার্ধে, বিশেষ করে অ্যান্টার্কটিকায় বাস করা এরা। সাদাকালো এ পাখি দেখতে ভীষণ মিষ্টি। দুই পায়ে সোজা দাঁড়িয়ে হেলেদুলে হাঁটে। এদের সব বৈশিষ্ট্য পাখির সঙ্গে মিলে গেলেও আকাশে উড়তে পারে না। কিন্তু কেন?

পেঙ্গুইন যতটা ডাঙার প্রাণী, ততটাই জলজ প্রাণী বলা যায়। ওদের ডানা পাখির পাখার চেয়ে মাছের পাখনার সঙ্গেই মেলে বেশি। পানিতে অবাধ চলাফেরায় সাহায্য করে এগুলো। সাঁতার কাটা দেখলে মনে হয় যেন আকাশে উড়ছে। শরীরের পালক ভর্তি হয়ে থাকে বাতাসে। এতে পেঙ্গুইনের দেহ পানিতে পুরোপুরি ভেজে না, প্রয়োজনে ভেসে থাকতে পারে। পাশাপাশি পানির শীতল তাপমাত্রা থেকে শরীর থাকে সুরক্ষিত।

আরও পড়ুন
পেঙ্গুইন যতটা ডাঙার প্রাণী, ততটাই জলজ প্রাণী বলা যায়
ছবি: সংগৃহীত

জীবনের অর্ধেকটা সময় পানিতে কাটায় এরা। বাকি সময় কাটে ডাঙায়। পেঙ্গুইনের পাখনা শুধু যে পানিতে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে, এমন নয়। এরা যখন মাটিতে হাঁটাচলা করে, তখন দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে পাখনা ও লেজ। ফলে সোজা দাঁড়িয়ে দুইপায়ে হাঁটতে পারে।

পেঙ্গুইন কিন্তু খুব দ্রুত হাঁটতে পারে না। দৌড়ানো এদের জন্য অসম্ভব কাজ। কারণ, পায়ের দৈর্ঘ্য খুব ছোট। কোনো কারণে দ্রুত চলার প্রয়োজন হলে পেটের ওপর ভর করে ঢালু জায়গায় পিছলে চলে যায়। অদ্ভুত এ চলার পদ্ধতিকে টোবোগনিং বলা হয়।

আরও পড়ুন

সাদাকালো এ পাখির পাখনা যে বেশ কাজে লাগে, তা তো বোঝা গেল। কিন্তু আসল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। ওরা উড়তে পারে না কেন? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পেঙ্গুইনদের উড়তে না পারার বড় কারণ, অতীতে তারা ডাঙ্গায় শিকারি প্রাণীর কবলে খুব একটা পড়েনি। ফলে উড়ে পালানোর প্রয়োজনও পড়েনি তেমন। ধীরে ধীরে একটা সময় পাখাগুলো ওড়ার সক্ষমতা হারিয়েছে। ওড়ার চেয়ে সাঁতারের প্রয়োজনীতা বরাবরই বেশি ছিল পেঙ্গুইনদের জন্য। কারণ, খাবারের জন্য পেঙ্গুইন সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। আবার বেশিরভাগ বিপদও হানা দিত সমুদ্রে। ফলে ওদের ডানা বাতাসের চেয়ে পানিতে ব্যবহৃত হয়েছে বেশি। পরিণত হয়েছে পাখনায়। ওদের পায়ের পাতাও সাঁতারের উপযোগী, অর্থাৎ ছড়ানো।

আরও পড়ুন

পেঙ্গুইনদের উড়তে না পারার আরেকটা কারণ দেহের ওজন। শীতপ্রধান অঞ্চলে বাস করার কারণে দেহে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে এদের। আকারেও একেবারে ছোট নয়। বিশেষ করে বড় আকারের এমপেরোর পেঙ্গুইনদের ক্ষেত্রে এ কথা ভালোভাবে খাটে। একেকটা লম্বায় প্রায় ৩ ফুট উঁচু হয়। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ওজন হয় প্রায় ৩৪ কেজি। এত ভারী শরীর নিয়ে আকাশে ওড়ার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী বিশাল ডানা, যা তাদের নেই।

উড়তে না পারার বিষয়টি পেঙ্গুইনদের জন্য কিন্তু দুর্ভাগ্য নয়। পৃথিবীর বহু পাখিই উড়তে পারে না। এর বদলে মাটিতে দৌড়ে বেড়ায়। সেখানে পেঙ্গুইন মাটি-পানি দুই জায়গাতেই সমানতালে চরে বেড়াচ্ছে। খারাপ কী!

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ওয়ান্ডারপোলিস, উইকিপিডিয়া