পৃথিবীর শীতলতম স্থান কোনটি?

বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। মানে বেশি শীতও নয়, আবার গরমও নয়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে তীব্র শীতের কারণে বেঁচে থাকা মুশকিল। কিন্তু ইতিহাসের শীতলতম স্থান কোনটি? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কি এটা পাল্টে যায়? আর সবচেয়ে বেশি ঠান্ডাই-বা কোন শহরে? সেখানে কি সবসময় ঠান্ডা থাকে, নাকি বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ঠান্ডা বাড়ে? সেসব নিয়ে আজকের আলোচনা। 

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এটা গড় তাপমাত্রা। এর চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রার দেখা মেলে পৃথিবীতেই। সেটা কোথায় এবং সেখানকার তাপমাত্রা কত, তা জানার আগে বুধ গ্রহের সঙ্গে আমাদের গ্রহের তাপমাত্রার একটু তুলনা করা যাক। বুধের দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। দিনে বুধের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সে তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা যথেষ্ট সহনশীল।

আরও পড়ুন

বর্তমানে পৃথিবীর শীতলতম স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি। সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। অ্যান্টার্কটিকা বরফের চাদরে ঢাকা থাকে সারা বছর। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৩ ডিগ্রিতেও পৌঁছেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস-এ প্রকাশিত তথ্য মতে, তাপমাত্রা আরও নিচেও নেমে যায় কখনো কখনো। 

পৃথিবীর শীতলতম স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি
টেড স্ক্যাম্বোস, ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো-বোল্ডার

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো-বোল্ডারের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষক টেড স্ক্যাম্বোস। তিনি বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সম্ভবত এর চেয়ে কম হওয়া সম্ভব না।’

কিন্তু অতীতে এটা শীতলতম স্থান ছিল না। ২০১০ সালে অ্যান্টার্কটিকার ভস্টক রিসার্চ স্টেশন ছিল সবচেয়ে শীতল স্থান। এটি অ্যান্টার্কটিকার ভৌগলিক দক্ষিণ মেরু থেকে ১ হাজার ৩০১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ভস্টক স্টেশনের তাপমাত্রা মাইনাস ৯৬ ডিগ্রিও হতে পারে।’ অর্থাৎ আগে এটাই ছিল পৃথিবীর কোনো স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমির তাপমাত্রা আরও কমে গেছে, নেমে গেছে সর্বনিম্ন সীমায়।

এতক্ষণ যে দুটি শীতলতম স্থানের কথা বললাম, সেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করে না। ফলে তীব্র শীতেও কারো তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু মানুষ নিয়মিত বাস করে, এরকম স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত? উত্তর, মাইনাস ৭১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রামটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করে। এখানে যারা বাস করে, তারা মূলত পেশায় হরিণ পালক। গ্রামটির গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সর্বনিম্ন মাইনাস ৭১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯২৪ সালে।

রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রামটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
গেটি ইমেজ

উত্তর গোলার্ধে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গ্রিনল্যান্ডের ক্লিঙ্ক ওয়েদার স্টেশনে। গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদরের মাঝে একটি আবহাওয়া অফিস এটি। ১৯৯১ সালে সেখানে মাইনাস ৬৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ আবহাওয়া অফিসটি গ্রিনল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু স্থান গুনবিয়র্নের কাছাকাছি ৩ হাজার ১০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এর আগে উত্তর গোলার্ধের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৬৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

শীতকালে গ্রিনল্যান্ড বরফের কুয়াশায় সম্পূর্ণ ঢেকে যায়।
গেটি ইমেজ
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এবার দেখা যাক, বিশ্বের শীতলতম শহর কোনটি। এই রেকর্ডটিও রাশিয়ার দখলে। রাশিয়ার ইয়াকাটস্ক শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৬২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এ রেকর্ড গড়ে শহরটি। এর আগে ১৮৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন মাইনাস ৬৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল এ শহরেই। ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের এ শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯৫ মিটার ওপরে লেনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। তাই শীতকালে শহরটি বরফের কুয়াশায় সম্পূর্ণ ঢেকে যায়। 

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
প্রথম আলো

বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ে তো অনেক কথা হলো। শেষ করার আগে চলুন, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত, সেটা জানা যাক। না, বাংলাদেশের তাপমাত্রা কখনো হিমাঙ্কের নিচে নামেনি। অর্থাৎ, ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে যায়নি। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯৬৮ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

লেখক: সম্পদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো  

আরও পড়ুন