এপিথেলিয়াল কোষের নতুন ভাষা

এপিথেলিয়াল কোষছবি: সাইটেক ডেইলি ডট কম

আমরা এতদিন জানতাম, শুধু স্নায়ুকোষ বা হৃৎপিণ্ডের কোষের কাজ হচ্ছে বৈদ্যুতিক সংকেতের সাহায্যে যোগাযোগ করা। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের শরীরের সবচেয়ে সাধারণ কোষ মানে এপিথেলিয়াল কোষগুলোও এই বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এই গবেষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টিভ গ্র্যানিক, পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট কে ব্যারেট এবং পোস্ট ডক্টরাল গবেষক সান-মিন ইউয়ে। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত হয়েছে।

এপিথেলিয়াল কোষ হলো এমন এক ধরনের কোষগুচ্ছ, যা বাইরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের জন্য প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, এপিথেলিয়াল কোষগুলোও একে অপরের সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তবে এদের যোগাযোগ আমাদের স্নায়ুকোষগুলোর মতো এতটা দ্রুতগতির নয়।

এপিথেলিয়াল কোষের এই নতুন বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে গিয়ে গবেষকরা তৈরি করেন বিশেষ এক ধরনের চিপ। সেই চিপে ৬০টি সূক্ষ্ম ইলেকট্রোড বসানো ছিল।

আমাদের স্নায়ুকোষগুলো যেখানে খুব দ্রুত নিউরোট্রান্সমিটার ব্যবহার করে সংকেত পাঠায়, সেখানে এপিথেলিয়াল কোষগুলো আয়ন প্রবাহের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। বিশেষ করে, ক্যালসিয়াম আয়নের মাধ্যমে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ইলেকট্রিক সিগন্যাল খুব ধীরগতিতে প্রবাহিত হলেও এর ভোল্টেজ অনেকটা স্নায়ুকোষের মতোই। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু কোষ পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একে অপরের সঙ্গে সিগন্যাল আদান-প্রদান করছে। আবার স্নায়ুকোষের চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেও সিগন্যাল পাঠাতে পারছে এসব কোষ।

আরও পড়ুন

গবেষক দলের সদস্য স্টিভ গ্র্যানিক বলেন, ‘এপিথেলিয়াল কোষ যে এমন কিছু করে, তা আগে কখনো কেউ ভাবেনি। এই কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে আশপাশের কোষগুলোর সঙ্গে ধীরে ধীরে ইলেকট্রিক সিগন্যাল পাঠিয়ে যোগাযোগ করে। ঠিক যেন স্নায়ুকোষের সিগন্যাল পাঠানোর মতোই, কিন্তু প্রায়  এক হাজার গুণ ধীরে।’

এপিথেলিয়াল কোষের এই নতুন বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে গিয়ে গবেষকরা তৈরি করেন বিশেষ এক ধরনের চিপ। সেই চিপে ৬০টি সূক্ষ্ম ইলেকট্রোড বসানো ছিল। এরপর মানব এপিথেলিয়াল কোষের একটি স্তর এই চিপের ওপর বসানো হয়। ফলে কোষগুলোর সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করতে পারে। এরপর গবেষকেরা লেজারের সাহায্যে কোষে হালকা আঘাত করে বোঝার চেষ্টা করেন, কীভাবে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

আমাদের স্নায়ুকোষগুলো যেখানে খুব দ্রুত নিউরোট্রান্সমিটার ব্যবহার করে সংকেত পাঠায়, সেখানে এপিথেলিয়াল কোষগুলো আয়ন প্রবাহের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, এই আবিষ্কার আমাদের কী কাজে লাগবে? গবেষকরা বলছেন, এপিথেলিয়াল কোষের এই বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত চিকিৎসা ডিভাইস, ক্ষত নিরাময়ের নতুন প্রযুক্তি, এমনকি শরীরের ভেতরে স্থাপনযোগ্য সেন্সর তৈরির পথ খুলে যেতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কৃষিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

সূত্র: সাইটেক ডেইলি ডট কম

আরও পড়ুন