জ্বরের জন্য দায়ী কে, ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়া

জ্বর হলেই আমরা প্রথমে ভাইরাসকে দোষারোপ করিমডেল: আফসানা, ছবি: কবির হোসেন

জ্বর হলেই আমরা প্রথমে ভাইরাসকে দোষারোপ করি। একইভাবে বিভিন্ন রোগের জন্য দোষারোপ করি ব্যাকটেরিয়াকে। মোটামুটি সব রোগের জন্য দোষ গিয়ে পড়ে এই দুই চিরচেনা জীবাণুর ওপর। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এই জীবাণু দুটিকে একইরকম ভেবে ভুল করি আমরা। মানুষসহ উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীদের রোগের জন্যও দায়ী এই মানিকজোড়। কিন্তু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে বেশ কিছু জটিল পার্থক্য রয়েছে। সেগুলো সহজে বোঝার চেষ্টা করব এই লেখায়।

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া আণুবীক্ষণিক জীব। এদেরকে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। দেখতে হয় ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে। ভাইরাসকে একদম জীব বলা যায় না, আবার পুরোপুরি জড়ও নয়। জীব ও জড়ের মাঝামাঝি এক ধরনের সত্তা বলা যায় একে।

ভাইরাস যেমন জীবদেহের জীবন্ত কোষে প্রবেশ করে নিজের বংশবৃদ্ধি করে, তেমনি ব্যাকটেরিয়া জীবন্ত কোষে প্রবেশ করে বংশবিস্তার করে নিজস্ব রাইবোজোমের মাধ্যমে।

তবে এরা যখন মানুষ, উদ্ভিদ বা কোনো প্রাণীর জীবন্ত কোষে ঢুকে পড়ে, তখন আর নিষ্প্রাণ বা মৃত থাকে না। জীবিত হয়ে ওঠে। কোনো জীবন্ত কোষে ঢোকার আগ পর্যন্ত ভাইরাস নিজের বংশবিস্তার করতে পারে না। ভাইরাসকে অনেকটা ছিনতাইকারীদের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। এরা জীবদেহের জীবন্ত কোষে ঢুকে সেই কোষের নিয়ন্ত্রণ নিজের দখলে নেয়। এরপর সেই জীবন্ত কোষের নিজস্ব কার্যপদ্ধতি ব্যবহার নিজে বংশবিস্তার করতে শুরু করে। ভাইরাস আসলে বিভিন্ন অণুর জটিল এক সমাবেশ। এর গঠন মূলত নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। কিছু ভাইরাসে লিপিড বা কার্বোহাইড্রেটও থাকতে পারে। ভাইরাসে এত জটিল অণু থাকার পরেও জীবন্ত কোষে না ঢোকা পর্যন্ত এরা কিছুই করতে পারে না।

আরও পড়ুন

তবে ব্যাকটেরিয়ার প্রাণ আছে। এরা জীবিত। এরা খুব সরল আর এককোষী জীব। চলাফেরা করে, খাবার খায়। বেঁচে থাকার জন্য এদেরও শক্তির প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন জীবদেহের জীবন্ত কোষে ঢুকে এরা সেই শক্তি পায়। ভাইরাসের মতো ব্যাকটেরিয়ার কারণেও জীবদেহে কিছু জটিল রোগ হয়। কিন্তু ভাইরাসের তুলনায় এসব রোগের জটিলতা আর চিকিৎসা সহজ। রোগ চিহ্নিত করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই এদের নিষ্ক্রিয় করা যায়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চোখে ভাইরাস

কিন্তু সব ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসই কিন্তু জীবদেহের জন্য ক্ষতিকারক নয়। বেশকিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস আছে। কিছু ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্রে থেকে হজমে সহায়তা করে। কিছু মাটিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন জৈব পদার্থ ভেঙে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। একইভাবে কিছু উপকারী ভাইরাসও আমাদের অন্ত্র, ত্বক আর রক্তে থাকে। এরা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার প্রক্রিয়াও ভাইরাসের চেয়ে আলাদা।

ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এদের একটা বিষয়ে খুব মিল আছে। দুটোই মানুষের দেহে ঢুকে টিকে থাকে আর বংশবিস্তার করে। এটাই এদের প্রধান লক্ষ্য।

ভাইরাস যেমন জীবদেহের জীবন্ত কোষে প্রবেশ করে নিজের বংশবৃদ্ধি করে, তেমনি ব্যাকটেরিয়া জীবন্ত কোষে প্রবেশ করে বংশবিস্তার করে নিজস্ব রাইবোজোমের মাধ্যমে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে যেমন সহজে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সুস্থ হওয়া যায়, ভাইরাসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয় ঠিক বিপরীত। জীবদেহে ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ব্যাকটেরিয়ার মতো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা যায় না। কারণ, ভাইরাস জীবদেহে ঢুকে জীবন্ত কোষের মারাত্মক ক্ষতি করে। এরা ওই কোষের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নেয়। এভাবে ভাইরাস একের পর এক কোষে আক্রমণ করে। ফলে পারমাণবিক চেইন বিক্রিয়ার মতো ভাইরাসের ধ্বংসযজ্ঞ চলতেই থাকে।

আরও পড়ুন
সাধারণত ভাইরাসজনিত জ্বরই বেশি হয়

ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এদের একটা বিষয়ে খুব মিল আছে। দুটোই মানুষের দেহে ঢুকে টিকে থাকে আর বংশবিস্তার করে। এটাই এদের প্রধান লক্ষ্য।

তাহলে জ্বরের জন্য দায়ী কোনটা, ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়া? সাধারণত ভাইরাসজনিত জ্বরই বেশি হয়। যেমন সর্দি, কাশি, ফ্লু বা ভাইরাল ফিভার। এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। বিশ্রাম আর তরল খাবারই মূল চিকিৎসা। অন্যদিকে, টনসিল বা ফুসফুসে ইনফেকশন থেকে যদি জ্বর হয়, তাহলে সেটা ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হতে পারে। তখন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। তাই সব জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখক: শিক্ষার্থী, কৃষিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি , ঢাকা

সূত্র: হেলথ ডাইরেক্ট ও ইনস্টিটিউট ফর মলিকিউলার বায়োসায়েন্স

আরও পড়ুন