প্রায় ১০ বছর পর মাউন্ট এটনায় আবারও বড় ধরনের অগ্ন্যুৎপাত

ইতালির সিসিলিতে অবস্থিত বিখ্যাত পর্বত মাউন্ট এটনা। সক্রিয় অগ্নুৎপাতের জন্য এটি বিখ্যাত। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও আছে এর সুনাম। ২০১৪ সালের পর থেকে বড় কোনো অগ্নুৎপাতের ঘটনা এখানে ঘটেনি। তবে গত ২ জুন, সোমবার তীব্র অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে এই পর্বতে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে আগ্নেয়গিরি থেকে গরম লাভা উদ্‌গিরণ শুরু হয়।

ইতালির কর্তৃপক্ষের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, সোমবার হঠাৎ সিসিলির মাউন্ট এটনায় অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে। বিশালাকার একটি অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আকাশে দেখা দিয়েছে ছাইয়ের মেঘ। কয়েক কিলোমিটার উচ্চতায় উত্তপ্ত গ্যাস, ছাই ও পাথরের কণার মেঘ আকাশে উঠতে দেখা গেছে। এই ছাইয়ের মেঘ থেকে বাঁচতে পর্যটকেরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেছেন। 

ইতালির জাতীয় ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণ সংস্থার মতে, মাউন্ট এটনা বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। তারপরও ২০১৪ সালের পর এই মাত্রার কোনো অগ্ন্যুৎপাত হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পরপরই লোকজন একসঙ্গে দৌড়ে নিচের দিকে নামছেন। স্থানীয় ট্যুর কোম্পানির এক প্রতিনিধি সিএনএনকে জানিয়েছেন, অগ্ন্যুৎপাতের সময় তাদের সঙ্গে ৪০ জন পর্যটক আগ্নেয়গিরিতে গিয়েছিলেন। ‘গো এটনা’ নামের একটি ট্যুর কোম্পানির গাইড জুসেপ্পে পানফালো। তিনি লোকজনকে নিয়ে ফিরে এসেছেন বিশাল ছাইয়ের মেঘ থেকে।

ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রায় মেঘের মধ্যেই পড়ে গিয়েছিলাম। এই মেঘ থেকে মাত্র দুই ধাপ দূরে ছিলাম আমরা। ভাগ্য ভালো আমাদের সঙ্গে একজন দায়িত্বশীল গাইড ছিলেন। সবকিছু একসঙ্গে ঘটেছে—বিশাল ধোঁয়া, শব্দ।’

আরও পড়ুন

সিসিলির সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সি জানিয়েছে, প্রায় ডজনখানেক ট্যুর কোম্পানি এটনায় কাজ করে। তারা সব কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন নিশ্চিত হওয়ার জন্য, কেউ নিখোঁজ আছে কিনা। এখন পর্যন্ত নিখোঁজের খবর জানা যায়নি।

সিসিলি দ্বীপে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে। এর মধ্যে অনেকেই প্রায় পর্বতের চূড়া পর্যন্ত হেঁটে ওঠেন।

মাউন্ট এটনা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে জ্বলন্ত লাভা নির্গত হচ্ছে
ছবি: এএফপি

ইতালির জাতীয় ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণ সংস্থার মতে, মাউন্ট এটনা বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। তারপরও ২০১৪ সালের পর এই মাত্রার কোনো অগ্ন্যুৎপাত হয়নি। পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি জানিয়েছে, এ ধরনের অগ্ন্যুৎপাত হঠাৎ শুরু হয়ে হঠাৎ থেমে যায়। যদিও বিস্ফোরণের তীব্রতা বাড়ছে এবং পর্বতটি এখনো অল্প পরিমাণে লাভা ও আগুন উদ্‌গিরণ করছে। লাভা উদগিরন শুরু হওয়ায় এটিকে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের আগের আগ্ন্যুৎপাতের মতো।

কাতানিয়া শহর মাউন্ট এটনার পাদদেশে অবস্থিত। এই শহরে ছাই পড়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

রাতের আঁধারে শুরু হওয়া এই অগ্ন্যুৎপাতের শব্দ এত প্রচণ্ড ছিল, প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের তাওরমিনা এবং ৪০ কিলোমিটার দূরের কাতানিয়া শহর থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এই এলাকার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী এই শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অগ্ন্যুৎপাতের ভিডিও শেয়ার করেছেন।

পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের মতে, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ-পূর্ব ক্রেটারের উত্তর পাশ ধ্বসে পড়তে দেখা গেছে। এই অঞ্চলটি গত কয়েক মাসে একাধিক অগ্ন্যুৎপাতের মুখে পড়েছে। এ সময় চোখধাঁধানো লাভার ধারা তৈরি হয়েছিল এখানে।

আরও পড়ুন

কাতানিয়া শহর মাউন্ট এটনার পাদদেশে অবস্থিত। এই শহরে ছাই পড়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে বাতাসের গতিপথ পরিবর্তন হলে মানুষকে সুরক্ষার জন্য সতর্ক করা হবে বলে জানিয়েছেন কাতানিয়ার মেয়র এনরিকো তারানতিনো।

কাতানিয়া ও পালেরমো শহরের কাছাকাছি বিমানবন্দরগুলো খোলা আছে। কারণ বর্তমানে ছাই ওই দিকে যাচ্ছে না। তবে সিসিলির সিভিল প্রোটেকশন সংস্থা জানিয়েছে, সব বিমান চলাচলকে এই এলাকা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। ফ্লাইট রাডারের তথ্য অনুযায়ী, কাতানিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া কিছু ফ্লাইটকে পালেরমোতে পাঠানো হয়েছে।

ইতালির কর্তৃপক্ষের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, সোমবার হঠাৎ সিসিলির মাউন্ট এটনায় অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে। বিশালাকার একটি অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আকাশে দেখা দিয়েছে ছাইয়ের মেঘ। কয়েক কিলোমিটার উচ্চতায় উত্তপ্ত গ্যাস, ছাই ও পাথরের কণার মেঘ আকাশে উঠতে দেখা গেছে।

মেয়র তারানতিনো আরও জানিয়েছেন, ‘বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যেন আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি না যায় এবং জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে বাধা না দেয়। সে জন্য আগ্নেয়গিরির দিকে যাওয়ার অনেক রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এটিকে একটি পাইরোক্লাস্টিক অগ্ন্যুৎপাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফলে আগ্নেয়গিরির কম্পন (ভলকানিক ট্রেমর) উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং আগ্নেয়গিরির ওপর গঠিত হয়েছে একটি বিপজ্জনক উদ্‌গিরণ স্তম্ভ। এতে আছে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাস, লাভার দানা, আগ্নেয় ছাই ও বিভিন্ন আকারের পাথরের টুকরা। উদ্‌গিরণ হলে এগুলো দ্রুত বেগে আগ্নেয়গিরির ঢাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে আসে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, কিশোর আলো

সূত্র: সিএনএন

আরও পড়ুন