ঘুম নিয়ে আমাদের যত ভুল ধারণা
ঘুম ব্যাপারটা আসলেই অদ্ভুত। আমরা প্রতি রাতে বিছানায় যাই, চোখ বন্ধ করি, আর বাস্তব জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। এই রহস্যময় জগতটা নিয়ে আমাদের মনে নানা রকম ধারণা বা কুসংস্কার বাসা বেঁধে আছে।
আমরা অনেকেই মনে করি, কীসে ঘুম ভালো হয় আর কীসে নষ্ট হয়, তা আমাদের জানা। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, আমরা যা জানি তার অনেক কিছুই আসলে ভুল। চলুন, ঘুম নিয়ে প্রচলিত এমনই ৪টি ভুল ধারণা নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক।
১. ঘুমানোর ঠিক আগে ব্যায়াম করা যাবে না
অনেকের ধারণা, রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম বা ওয়ার্কআউট করা উচিত নয়। কারণ, ব্যায়াম করলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, শরীর উত্তেজিত থাকে, তাই সহজে ঘুম আসতে চায় না।
তবে বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা। স্লিপ হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় রেবেকা রবিন্স এবং তাঁর দল দেখিয়েছেন, ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করলে ঘুমের ক্ষতি হয় বলে কোনো প্রমাণ নেই। তাঁদের জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ রাতে ব্যায়াম করার পরেও দিব্যি আরামে ঘুমান। বরং অনেক সময় ব্যায়ামের পর শরীর ক্লান্ত থাকায় ঘুম ভালো হয়। তাই রাতে ব্যায়াম করতে চাইলে নির্দ্বিধায় করতে পারেন।
স্লিপ হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় রেবেকা রবিন্স এবং তাঁর দল দেখিয়েছেন, ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করলে ঘুমের ক্ষতি হয় বলে কোনো প্রমাণ নেই।
২. স্বপ্ন দেখা মানেই ঘুম ভালো হওয়া
স্বপ্ন নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তির শেষ নেই। কেউ বলেন, সকালে উঠে স্বপ্ন মনে আছে মানে তোমার ঘুম গভীর হয়নি, বারবার ভেঙেছে। আবার অনেকে বলেন উল্টোটা। স্বপ্ন দেখা মানেই তো গভীর ঘুম, তার মানে ঘুম ভালো হয়েছে!
আসল কথা হলো, বিজ্ঞান এর কোনোটাকেই সমর্থন করে না। স্বপ্ন মনে থাকার সঙ্গে ঘুমের ভালো বা খারাপ হওয়ার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। গবেষকেরা বলছেন, স্বপ্ন মনে থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে। হতে পারে আপনার পর্যাপ্ত রেম স্লিপ হয়েছে, আবার হতে পারে ঘুমের মাঝখানে হুট করে জেগে ওঠার কারণে স্বপ্নটা মাথায় গেঁথে গেছে। তাই স্বপ্ন মনে থাকা দিয়ে ঘুমের বিচার করা বোকামি।
৩. ঘুমের মধ্যে আমরা মাকড়সা গিলে ফেলি!
ইন্টারনেটে একটা গুজব খুব জনপ্রিয়—মানুষ নাকি ঘুমের মধ্যে অজান্তেই বছরে গড়ে আটটা মাকড়সা গিলে ফেলে! বলা হয়, মাকড়সারা উষ্ণতার খোঁজে মানুষের খোলা মুখের ভেতর ঢুকে পড়ে আর আমরা টেরও পাই না।
স্বস্তির খবর হলো, স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। প্রথমত, বেশিরভাগ মানুষ মুখ বন্ধ রেখেই ঘুমান। দ্বিতীয়ত, মাকড়সা সাধারণত মানুষের মতো বিশাল নড়াচড়া করা প্রাণীদের এড়িয়ে চলে। তৃতীয়ত, ঘুমের মধ্যে মুখের ওপর দিয়ে পোকা হাঁটলে আমাদের রিফ্লেক্স বা অনুভূতি ঠিকই কাজ করে। মুখের ওপর দিয়ে মাকড়সা হাঁটলে আমাদের ঘুম ভেঙে যেত। ফলে অজান্তে মাকড়সা গিলে ফেলা প্রায় অসম্ভব।
গবেষকেরা বলছেন, স্বপ্ন মনে থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে। হতে পারে আপনার পর্যাপ্ত রেম স্লিপ হয়েছে, আবার হতে পারে ঘুমের মাঝখানে হুট করে জেগে ওঠার কারণে স্বপ্নটা মাথায় গেঁথে গেছে।
৪. গরম ঘরে ঘুম ভালো হয়
মোটেই না! শীতের রাতে ঘরটা একটু গরম থাকলে বেশ আরাম লাগে। লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে উষ্ণ পরিবেশে ঘুমানোটাকে আমরা অনেকেই আদর্শ মনে করি। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে উল্টো কথা।
ভালো ঘুমের জন্য ঘর খুব বেশি গরম হওয়া যাবে না। বরং ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা শীতল বা ঠান্ডা থাকাই ভালো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ৬৫ থেকে ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৮-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কেন?
কারণ, আমরা যখন ঘুমাই, প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। এটা ঘুমেরই একটা অংশ। এখন ঘর যদি খুব বেশি গরম থাকে, তবে শরীর নিজেকে ঠান্ডা করতে পারে না। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, মাঝরাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায় এবং শরীর ঘামতে থাকে। তাই একটু ঠান্ডা ঘরই গভীর ঘুমের জন্য ভালো।
৫. হালকা আলো জ্বেলে ঘুমালে ক্ষতি নেই
অনেকেরই অভ্যাস আছে ঘরে হালকা একটা ডিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমানোর। অনেকে আবার অন্ধকারে ভয় পান। কিন্তু ঘুমের জন্য ঘুটঘুটে অন্ধকারই ভালো।
আপনি যখন চোখ বন্ধ করে থাকেন, তখনও সামান্য আলো আপনার দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদমকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। মস্তিষ্ক তখন ঠিকমতো বুঝতে পারে না যে, এখন রাত নাকি দিন।
গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে আলো জ্বেলে ঘুমালে চোখের ওপর চাপ পড়ে। এমনকি রাতে আলো জ্বেলে ঘুমানোর সঙ্গে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা!
তাই রাতে ঘুমানোর সময় সব আলো নিভিয়ে দিন। বাইরে থেকে আলো আসলে জানালায় ভারি পর্দা দিন। আর যদি তাতেও কাজ না হয়, তবে চোখে একটা আই মাস্ক পরে নিতে পারেন। তবুও ঘর অন্ধকার থাকা চাই।