বিরল রোগে আক্রান্ত যে কিশোরী ১৪ বছর কিছু খেতে পারেনি
জন্মের পর থেকে একটি মেয়ে কিছুই খেতে পারেনি। এমনকি একফোঁটা পানিও পান করেনি। খাবারের স্বাদ গ্রহণ না করেও সে বেঁচে আছে ১৪ বছর। এ সব কিছুই হয়েছে একটি বিরল রোগের কারণে। সেই রোগকে জয় করে এখনো মেয়েটি বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।
মেয়েটির নাম ইসলা। বয়স চৌদ্দ বছর। তার বেঁচে থাকাটাই এখন বিস্ময়। বিরল রোগের কারণে শৈশবেই তার অন্ত্র কেটে ফেলতে হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও দমে যায়নি ইসলা। বর্তমানে তার খাবার হলো একটি নল। সেই নল দিয়ে পুষ্টি সরাসরি চলে যায় হৃৎপিণ্ডের কাছের মূল ধমনীতে। দিনের প্রায় আঠারো ঘণ্টা এভাবেই চলে তার জীবন।
কথায় আছে, বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে। ইসলার ক্ষেত্রে কথাটা হয়তো একটু বেশিই প্রযোজ্য। কারণ, তার এই কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে নতুন আরেক সংকট। অস্টিওপোরোসিস নামে একটি রোগের কারণে তার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এখন তার সঙ্গী হয়েছে একটি হুইলচেয়ার।
তবে এত কষ্টের পরেও ইসলার মুখে হাসি। সে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করে। মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, কিন্তু সেগুলোকে পাত্তা দিতে চায় না ইসলা। তার এই অসুখটি এতই বিরল যে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এর কোনো নামই দিতে পারেননি। শুধু অন্ত্রের সমস্যাই নয়, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, লিভার এবং কিডনিতেও রয়েছে জটিলতা। বেশ কয়েকবার সেপসিসের মতো মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। মাঝেমধ্যে শরীর কোনো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। একে বলে সেপসিস।
ইসলার মা অ্যাশলি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি চাই ইসলা যেন একটি আরামদায়ক হুইলচেয়ার পায়। এটা পেলে সে আর দশটা সাধারণ কিশোরীর মতো একটু স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। আমার মেয়ে যে কত অসাধারণ, তা সে নিজেও জানে না।
২০২৪ সালে সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে স্কুলে যেত ইসলা। পড়াশোনায় বেশ ভালোও ছিল। কিন্তু সেই অসুস্থতার পর আর স্কুলে ফেরা হয়নি। তবে তাতেও ইসলার জীবন থেমে থাকেনি। ইসলা গান শুনতে ভালোবাসে, কনসার্টে যেতে যায়। কিছুদিন আগে প্রিয় শিল্পীর কনসার্টেও গিয়েছিল সে। সেই রাতকে জীবনের অন্যতম সেরা রাত বলে জানিয়েছে ইসলা। যদিও কনসার্ট শেষে প্রচণ্ড পিঠব্যথায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
কষ্টকে জয় করার সাহস তার বরাবরই। কিছুদিন আগে পরিবারের সঙ্গে জাহাজে ঘুরতে গিয়েছিল। পিঠের অসহ্য যন্ত্রণা তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে পুরোটা সময়। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ সে হাতছাড়া করেনি। ১৬ বছর বয়স হলে গাড়ি চালানো শেখার স্বপ্ন দেখে ইসলা।
তার মা অ্যাশলি মেয়ের জন্মের পর নিজের চাকরিটা ছেড়ে দেন। এখন তার পুরোটা দিন কাটে মেয়ের যত্ন নিয়ে। সম্প্রতি অ্যাশলির এক বন্ধু একটি হুইলচেয়ার কেনার জন্য অনলাইনে সাহায্যের আবেদন জানায়। সাধারণ হুইলচেয়ারে বসতে তার কষ্ট হয়। একটি বিশেষভাবে তৈরি হুইলচেয়ার পেলে ইসলার জীবন আরেকটু সহজ হতে পারে। মানুষও সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ লাখের বেশি টাকা জমা হয়েছে। মানুষের এই ভালোবাসা দেখে ইসলা কৃতজ্ঞ ও অভিভূত।
২০২৪ সালে সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে স্কুলে যেত ইসলা। পড়াশোনায় বেশ ভালোও ছিল। কিন্তু সেই অসুস্থতার পর আর স্কুলে ফেরা হয়নি। তবে তাতেও ইসলার জীবন থেমে থাকেনি।
ইসলার মা অ্যাশলি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি চাই ইসলা যেন একটি আরামদায়ক হুইলচেয়ার পায়। এটা পেলে সে আর দশটা সাধারণ কিশোরীর মতো একটু স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। আমার মেয়ে যে কত অসাধারণ, তা সে নিজেও জানে না। ওর সাহস আর মনের জোর দেখলে অবাক হতে হয়। আমি যখন ওর দিকে তাকাই, গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়। এত কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়েও একটা মানুষ কীভাবে এতটা যত্নশীল, দয়ালু আর হাসিখুশি থাকতে পারে, আমি জানি না।’
শারীরিক যন্ত্রণা ইসলার নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু মনের জোরে সে এগিয়ে চলেছে। ইসলার জীবন আমাদের দেখিয়ে দেয়, জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, বেঁচে থাকার আনন্দ তার চেয়েও অনেক বড়।
