ঠিকই শুনেছেন। A, B, AB কিংবা O গ্রুপ নয়, G নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের কথা বলছি! আমাদের রক্তে লোহিত কণিকার গায়ে অদ্ভুত এক জিনিস লেগে থাকে। এর নাম অ্যান্টিজেন। অ্যান্টিজেনের ধরন অনুযায়ী আমাদের রক্তের গ্রুপের নামকরণ করা হয়। যার লোহিত কণিকায় A অ্যান্টিজেন রয়েছে, তার রক্তের গ্রুপ A; যার B অ্যান্টিজেন আছে, তার রক্তের গ্রুপ B। আর যার কোনোটাই নেই, তার রক্তের গ্রুপ O।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, রক্তের গ্রুপে ‘পজিটিভ’ ও ‘নেগেটিভ’ দিয়ে আসলে কী বোঝায়? মূলত রক্তকণিকায় রেসাস অ্যান্টিজেন নামে আরও একধরনের অ্যান্টিজেন থাকে। সহজভাবে বললে, যার দেহে রেসাস অ্যান্টিজেন আছে, তিনি হবেন পজিটিভ গ্রুপের রক্তধারী। আর যার রক্তে এটা নেই, তিনি নেগেটিভ গ্রুপের। রক্তের গ্রুপিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই দুটি পদ্ধতি যথাক্রমে এবিও (ABO) এবং আরএইচ(Rh) পদ্ধতি নামে পরিচিত। অস্ট্রিয়ার চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ড স্টেইনার ১৯০১ সালে এবিও পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
তবে রক্তকণিকায় কিন্তু শুধু এই দুই ধরনের অ্যান্টিজেন নেই। আমাদের রক্তকণিকায় প্রায় ৬০০ রকম অ্যান্টিজেন আছে। সেগুলো আবার একে অপরের সঙ্গে মিলে তাত্ত্বিকভাবে প্রায় লাখের বেশি রক্তের গ্রুপ তৈরি করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ব্লাড ট্রান্সফিউশন ৪৮ ধরনের গ্রুপিং পদ্ধতির স্বীকৃতি দিয়েছে। কেল, কিড, ডাফি, এমএনএস নামে আরও নানা পদ্ধতিতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। এই তালিকার সর্বশেষ ৪৮তম সদস্য হলো জি নেগেটিভ গ্রুপ।
২০১১ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপ গুয়াদেলুপ থেকে আসা এক ফরাসি নারী তাঁর অপারেশনের আগে দরকারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু কোনোভাবে তাঁর রক্তের গ্রুপকে আমাদের চিরচেনা ABO গ্রুপের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করা যায়নি! এ যেন এক নতুন ধাঁধা। পরে ২০১৯ সালে জিন সিকোয়েন্সিং করে প্রমাণ মিলল মিউটেশনের। PIGZ জিনে মিউটেশনের কারণে তাঁর রক্তের গ্রুপ আর সবার চেয়ে আলাদা। বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকেই এই জিন পেয়েছেন তিনি।
গুয়াদেলুপ অঞ্চলের আরেক নাম গুয়াডা। সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এই রক্তের গ্রুপের নাম তাই দেওয়া হয়েছে গুয়াডা নেগেটিভ বা জি নেগেটিভ! পৃথিবীতে সম্ভবত তিনিই একমাত্র নারী, যার রক্তের দরকার পড়লে নিজের রক্ত ছাড়া অন্য কারো রক্ত নিতে পারবেন না!