বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের রংপুর আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিতে দিনাজপুরের বিরল উপজেলা থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে ভোর পৌনে ৬টায় রওনা দেয় ৩ শিক্ষার্থী মুসতফা মাহমিদ, আল ইমরান ও তাহমিদ হাসান। বিরল সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এই তিন শিক্ষার্থী রংপুরে পৌঁছায় সকাল ৮টার দিকে।
আধুনিক ইলেকট্রনিক মেশিনের মাধ্যমে কীভাবে নিজ এলাকার বাইরে থাকা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ তাঁদের ভোটদান করতে পারে, তা প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে তুলে ধরে তারা। বিচারকদের মূল্যায়নে এই প্রজেক্ট ৫ম স্থান অধিকার করে।
প্রজেক্টটির দলনেতা মুসতফা মাহমিদ বিজ্ঞানচিন্তাকে বলে, দূর থেকে যাতায়াতে তাদের খানিকটা কষ্ট হয়েছে। তবে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা ছিল তাদের কাছে বিরাট অভিজ্ঞতা। বিজয়ী হওয়ায় তারা খুব আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।
গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বায়েজিদ বোস্তামি ও মো. মনিরুজ্জমান নিয়ে এসেছিল পরিবেশ সংরক্ষণে কার্বন ডাই-অক্সাইড কমানোর উদ্যোগ নিয়ে। দলনেতা বায়েজিদ বোস্তামি বলে, ভয় কাজ করেছিল। তবে তারা বিজয়ী হয়েছে।
রংপুর শহরে এক সময় বিজ্ঞান ক্লাব ছিল। সেই ক্লাবগুলো এখন আর নেই। তবে বিকাশ ও বিজ্ঞানচিন্তার মতো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তারা বিজ্ঞান উৎসব করছে। এভাবে বিজ্ঞান-সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
শুধু এই তিন শিক্ষার্থী নয়, রংপুর বিজ্ঞান উৎসবে আজ ছিল উচ্ছ্বাসের দিন। কুইজ ও প্রজেক্ট প্রতিযোগিতা ছাড়াও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রশ্নোত্তরে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে বিজ্ঞানকে জয় করার সংকল্প।
সকাল ৮টায় রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেন্যুতে গিয়ে দেখা গেল, গেটের সামনে বিশাল ভীড় জমে গেছে। উৎসব শুরুর আগেই প্রজেক্ট প্রদর্শনীর জন্য শিক্ষার্থীরা প্রজেক্ট সাজিয়ে বসে পড়ে। কুইজ অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক এবং দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখছিলেন এসব প্রজেক্ট। শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বিজ্ঞানের আনন্দই বড় হয়ে ওঠে এদিন।
সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও ভেন্যুপ্রধান অধ্যাপক কে এম জালাল উদ্দীন আকবর। উৎসবের পতাকা উত্তোলন করেন বিকাশের ইভিপি ও রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান হুমায়ূন কবির ও বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার। পরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অতিথিরা।
উৎসবের রংপুরের আঞ্চলিক পর্বে বিজ্ঞান কুইজে আট জেলার নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। ৬ষ্ঠ থেকে দশম ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিজ্ঞান প্রজেক্টের সংখ্যাও ছিল ৭০টির বেশি। এতে শিক্ষার্থীদের স্ন্যাকস পার্টনার হিসেবে ছিল ড্যান ফুডস লিমিটেড।
তরুণ প্রজন্মকে উদ্ভাবনের সঙ্গে সম্পৃত্ত রাখতে হবে
শ্রেণিকক্ষে কুইজ পরীক্ষার পর সাড়ে ১০টার দিকে ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কে এম জালাল উদ্দীন আকবর বলেন, রংপুর শহরে এক সময় বিজ্ঞান ক্লাব ছিল। সেই ক্লাবগুলো এখন আর নেই। তবে বিকাশ ও বিজ্ঞানচিন্তার মতো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তারা বিজ্ঞান উৎসব করছে। এভাবে বিজ্ঞান-সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ভালো পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে ম্যাজিক পরিবেশন করেন রাজীব রসাক। প্রথম আলো রংপুর বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান হিমু গান গেয়ে ও সদস্য রোদেলা কাওসার বিজ্ঞানবিষয়ক রম্য কৌতুক পরিবেশন করে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন।
বিকাশের ইভিপি ও রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান হুমায়ূন কবির বলেন, বিজ্ঞানের সঙ্গে বিকাশ রয়েছে। বিকাশ মনে করে, বিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে জাতি হিসেবে পিছিয়ে থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে উদ্ভাবনের সঙ্গে সম্পৃত্ত রাখতে হবে। এ জন্য নিয়মিত পাঠ্যাভাস খুব জরুরি। বিকাশ দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে বই প্রদান করেছে আসছে। আগামী দিনেও বিকাশ বিজ্ঞানবিষয়ক কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানবিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, কারমাইকেল কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোরশেদ আহম্মদ খান, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক দুলাল সরকার, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার প্রামানিক ও ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মাফরুহা সুলতানা। এ পর্ব পরিচালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের সদস্য শিবলী বিন সারওয়ার।
বিজ্ঞান কুইজের নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে প্রথম হয়েছে নর্থ ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়নীকা রায়। নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ১৩ জন বিজয়ী হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কিশোর আলোর নির্বাহী সম্পাদক আদনান মুকিত ও রংপুরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান। আদনাত মুকিত কিশোর আলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নেরও উত্তর দেন।
অনুষ্ঠানে ম্যাজিক পরিবেশন করেন রাজীব বসাক। প্রথম আলো রংপুর বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান হিমু গান গেয়ে ও সদস্য রোদেলা কাওসার বিজ্ঞানবিষয়ক রম্য কৌতুক পরিবেশন করে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন রংপুর বন্ধুসভার বন্ধু মোবাশ্বিরা রহমান ও নুসরাত জামান।
পরে অতিথিরা বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। সেরা দশ প্রজেক্ট বিজয়ীর মধ্যে প্রথম হয়েছে রংপুর সমাজকল্যাণ বিদ্যাবিথী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোসা. সিনথিয়া, উম্মে মরিয়ম ঐশি এবং আফরা আনান ঐশি। বিজ্ঞান কুইজের নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে প্রথম হয়েছে নর্থ ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়নীকা রায়। নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ১৩ জন বিজয়ী হয়। আর মাধ্যমিক পযায়ে ১২ বিজয়ীর মধ্যে প্রথম হয় ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনুভা নুজহাত। পুরস্কার বিতরণী পর্বে অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হক, বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ ও কাজী আকাশ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর সবাই মিলে ছবি তোলা ও হাসি-আনন্দে রংপুর বিজ্ঞান উৎসবের পর্দা নামে।