যে ৫ কারণে প্রতিদিন বই পড়া উচিত

ছবি: পেক্সেলস

শেষ কবে বই পড়েছেন? এর উত্তর যদি হয় ‘মনে নেই’, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ঠিক পথে নেই। জেনজিদের যে বই পড়া নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই, তা খানিকটা বোঝা গেল রাজধানীর কাঁটাবনে পাঠক সমাবেশে গিয়ে। এক সন্ধ্যায় এক হাতে কফি, আরেক হাতে আড়াই বছরের কন্যার হাত ধরে কাঁচের দরজা ঠেলে ঢুকলাম পরিচিত পাঠক সমাবেশে। এক দশক আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন পাঠক সমাবেশে যাওয়া-আসা শুরু হয়। সে সময় নিয়মিত সন্ধায় আড্ডা চলত। এখন রীতিমতো সুনসান। আমার কন্যা ‘এত বড় ফাঁকা মাঠ’ পেয়ে দিল এক দৌড়। কোথায় বইয়ের স্তূপের আড়ালে উধাও হয়ে গেল। মনটা একটু খারাপই হলো।

কিন্তু আপনি কেন পড়বেন বই? গবেষকরা বইপড়ার বেশ কয়েকটি ভালো দিক খুঁজে পেয়েছেন। সেরকম কয়েকটা কারণ জেনে নিন।

 ১. মস্তিষ্ককে কাজে লাগান

মস্তিষ্ককে যত কাজে লাগাবেন, স্নায়ুতন্ত্র ততই সচল আর কার্যকরী থাকবে। গবেষকরা বলেন, বই পড়ার ফলে স্নায়ুতন্ত্রের নিউরনগুলোর ভেতর সংযোগ বাড়ে। অবশ্য সমস্যা সমাধান করে, সৃজনশীল কাজ করে বা দাবা খেলেও একই উপকারিতা পাওয়া যায়।

২. থেরাপিস্টের খরচ বাঁচাবে

বিজ্ঞানীরা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিজের আবেগীয় অনুভূতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে নিয়মিত বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যখন বইয়ের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াবেন, তখন বাস্তবের দুনিয়া থেকে বিরতি নিতে পারবেন। এই বিরতি আপনাকে প্রশান্তি দেয়, মানসিক চাপ কমায়। নতুন করে আপনার বাস্তবের দুনিয়ায় পুনঃসংযোগ করতে সাহায্য করে। আপনার ভাবনা ও চিন্তার পরিসরকে ক্রমাগত প্রসারিত করতে থাকে।

আরও পড়ুন
মানুষটাকে আপনি চেনেন, কোথায় যেন দেখেছেন; কিন্তু নাম মনে করতে পারছেন না। ফ্রিজ খুললেন, কিন্তু কী যেন বের করবেন, তা আর মনেই পরছে না। একে ব্রেন ফগ। গবেষকরা বলেন, ব্রেন ফগের মতো এ ধরনের সমস্যার সহজ সমাধান হলো বই পড়া।
তরুণেরা বই পড়ে না। বইপড়া ছাড়া চিন্তার জগৎ প্রসারিত হয় না
ছবি: এআই

৩. ভুলে যাওয়া রোগ দূর হয়

মানুষটাকে আপনি চেনেন, কোথায় যেন দেখেছেন; কিন্তু নাম মনে করতে পারছেন না। ফ্রিজ খুললেন, কিন্তু কী যেন বের করবেন, তা আর মনেই পরছে না। একে ব্রেন ফগ। গবেষকরা বলেন, ব্রেন ফগের মতো এ ধরনের সমস্যার সহজ সমাধান হলো বই পড়া। আপনার স্মৃতিশক্তি শাণিত করতে বই পড়ার বিকল্প নেই।

৪. অ্যাটেনশন স্প্যান বাড়ায়

অনলাইনের দুনিয়ায় ভিডিওর দৈর্ঘ্য কমতে কমতে ৩ সেকেন্ডে দাঁড়িয়েছে। রিলসের এই যুগে যত ছোট ভিডিও, তত বেশি ভিউ। এভাবে মস্তিষ্ককে সাময়িকভাবে ভোপামিনের সাগরে ভাসিয়ে আপনার অ্যাটেশন স্প্যানের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে গড় অ্যাটেনশন স্প্যান (একটানা যতক্ষণ কোনো একটা কিছুতে মনোযোগ দিতে পারেন) নেমে দাঁড়িয়ে আছে ৮ সেকেন্ডেরও নীচে। বুঝতেই পারছেন, এর ফলে ধৈর্য্য বা মানসিক আবেগের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণও পাল্লা দিয়ে কমছে। এক্ষেত্রে বই পড়া কাজ করে অনেকটা থেরাপির মতো।

আরও পড়ুন
অনলাইনের দুনিয়ায় ভিডিওর দৈর্ঘ্য কমতে কমতে ৩ সেকেন্ডে দাঁড়িয়েছে। রিলসের এই যুগে যত ছোট ভিডিও, তত বেশি ভিউ। এভাবে মস্তিষ্ককে সাময়িকভাবে ভোপামিনের সাগরে ভাসিয়ে আপনার অ্যাটেশন স্প্যানের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছে।

৫. আলঝেইমারকে দূরে রাখে

বলিউডের গাজনি মুভি দেখেছেন? মূল প্রোটাগোনিস্টের চরিত্রে অভিনয় করা আমির খান পর্দায় ভুগছিলেন অ্যান্টিরোগ্রেড অ্যামনেশিয়ায়। সে যেকোনো ঘটনা মাত্র ১৫ মিনিট মনে রাখতে পারত। তারপর সবকিছু ভুলে যেত! আপনি যদি এমন কোনো সমস্যার ধারে কাছেও না ঘেঁষতে চান, তাহলে নিয়মিত বই পড়ুন। আলঝেইমারের ঝুঁকি কমাতে বই পড়ার বিকল্প নেই।

 এগুলোর পাশাপাশি বই পড়লে আপনার কল্পনাশক্তি বাড়বে। আপনি অনুপ্রাণিত হবেন। বিশ্লেষণী দক্ষতাও বাড়বে। আর নতুন কিছু শেখা বা জানার যে আনন্দ, তার সঙ্গে আর কিছুর তুলনা চলে না!

এখন প্রশ্ন হলো, ওপরের উপকারগুলো পেতে হলে আপনার প্রতিদিন কতটুকু বই পড়তে হবে? মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন অন্তত ৪০ পাতা পড়লেই মিলবে ওপরের সুফলগুলো। প্রতি পাতায় গড়ে প্রায় ২৫০ শব্দ থাকে। এক পৃষ্ঠা, অর্থাৎ দুই পাতায় থাকে গড়ে ৫০০ শব্দ। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার শব্দ পড়াই যথেষ্ট। তবে ‘ভালো পাঠক’ হতে চাইলে প্রতিদিন ১ লাখ শব্দ বা ২০০ পাতার একটা বই পড়তে পারেন।

সূত্র: ক্রশ একাডেমি

আরও পড়ুন