মহাপ্রলয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বেঁচে থাকার শেষ লড়াই

দ্য গ্রেট ফ্লাড মুভির দৃশ্যছবি: আইএমডিবি

ভাবুন, পৃথিবীর শেষ দিনটি এসে গেছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। প্রলয়ঙ্করী এক বন্যায় ডুবে যাচ্ছে গোটা সভ্যতা। আর সেই ডুবন্ত ধ্বংসস্তূপের মাঝে আটকা পড়েছেন দুজন মানুষ। একজন বাঁচার জন্য মরিয়া, অন্যজন তাকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। আপাতদৃষ্টিতে নেটফ্লিক্সের নতুন কোরিয়ান মুভি দ্য গ্রেট ফ্লাডকে সাধারণ কোনো ডিজাস্টার বা দুর্যোগের মুভি মনে হতে পারে। কিন্তু না, গল্পের যত গভীরে যাবেন, দেখবেন এটি সাধারণ বন্যা আর বেঁচে থাকার লড়াই ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে বিজ্ঞানের এক জটিল ও রহস্যময় জগতে।

কোরিয়ান সিনেমার জাদুকরী নির্মাণশৈলী আর সাই-ফাই থ্রিলারের অদ্ভুত মিশেলে তৈরি এই সিনেমাটি কেন আপনার দেখা উচিত? চলুন, তা একটু বোঝার চেষ্টা করি।

দ্য গ্রেট ফ্লাড মুভির দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে মহাপ্রলয়। বিশাল সব ঢেউ গিলে খাচ্ছে আকাশচুম্বী দালানকোঠা। এর মধ্যেই একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আটকা পড়েন অ্যানা। তিনি একজন অত্যন্ত মেধাবী এআই গবেষক। তাঁর সঙ্গে আছেন হি-জো। তিনি সিকিউরিটি ফোর্সের এক সদস্য।

আরও পড়ুন

অ্যানা শুধু নিজেকে বাঁচাতে চান না, তিনি বাঁচাতে চান তাঁর কোলের শিশুটিকে। কিন্তু সিনেমাটি এগোতে থাকলে আপনি টের পাবেন, এই শিশু বা বন্যা কোনোটাই আদতে সাধারণ কিছু নয়। পরিচালক কিম বিয়ং-উ এখানে দর্শকের মস্তিষ্কের সঙ্গে এক দারুণ খেলা খেলেছেন। শুরুতে মনে হবে আপনি দ্য ডে আফটার টুমরো বা টাইটানিক-এর মতো কিছু দেখছেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গল্প মোড় নেবে ইনসেপশন বা এজ অফ টুমরোর মতো সাইকোলজিক্যাল সাই-ফাই মুভির দিকে। এখানে সময়ের লুপ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক জটিল সমীকরণ লুকিয়ে আছে। মুভির শেষের দিকে এমন কিছু টুইস্ট আছে যা আপনাকে বিজ্ঞানের সিমুলেশন থিওরি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।

এই সিনেমার প্রাণভোমরা হলো অ্যানার চরিত্রে অভিনয় করা কিম দা-মি। ইটাওয়ান ক্লাস বা দ্য উইচ খ্যাত এই অভিনেত্রীর অভিনয়ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এই মুভিতে তিনি প্রায় সংলাপ ছাড়াই শুধু চোখের ভাষায় আতঙ্ক, ভালোবাসা এবং জেদ ফুটিয়ে তুলেছেন। একজন মা এবং একজন বিজ্ঞানীর দ্বৈত সত্তা তিনি দারুণভাবে সামলেছেন।

অ্যানার চরিত্রে অভিনয় করা কিম দা-মি
ছবি: পিপল ডটকম

স্কুইড গেম-এর সেই ঠান্ডা মাথার চশমা পরা লোকটিকে মনে আছে? হি-জোয়ের ভূমিকায় অভিনয় করা পার্ক হে-সু এখানেও রহস্যময়। তিনি কি আসলেই অ্যানাকে বাঁচাতে এসেছেন, নাকি তাঁর অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? তাঁর ধীরস্থির কিন্তু ভীতিজাগানিয়া উপস্থিতি সিনেমার সাসপেন্স ধরে রেখেছে শেষ পর্যন্ত।

পরিচালক কিম বিয়ং-উ এর আগে দ্য টেরর লাইভ এর মতো টানটান থ্রিলার উপহার দিয়েছেন। তিনি জানেন কীভাবে একটি বদ্ধ জায়গায় দমবন্ধ করা পরিবেশ তৈরি করতে হয়। পানির নিচে ডুবে যাওয়া দালান, করিডোর দিয়ে ধেয়ে আসা স্রোত এবং তার মাঝে প্রযুক্তির ব্যবহারের ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ছিল দুর্দান্ত।

আরও পড়ুন

এক নজরে

মুভি: দ্য গ্রেট ফ্লাড

ধরন: সাই-ফাই, ডিজাস্টার, থ্রিলার

পরিচালক: কিম বিয়ং-উ

অভিনয়ে: কিম দা-মি, পার্ক হে-সু

কোথায় দেখবেন: নেটফ্লিক্স

আইএমডিবি রেটিং: ৬.৮/১০

আরও পড়ুন

গার্ডিয়ান পত্রিকার রিভিউতে বলা হয়েছে, মুভিটি সাধারণ দুর্যোগের গল্প দিয়ে শুরু হলেও খুব দ্রুত এটি একটি ভয়ঙ্কর সাই-ফাই মুভির দিকে মোড় নেয়। দর্শকেরা এর ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস এবং দুই প্রধান চরিত্রের রসায়নেরও প্রসংসা করেছেন।

কিন্তু কেন দেখবেন আপনি এই মুভি? এটি শুধু দৌড়ে পালানোর মুভি নয়। এখানে হিউম্যান ইমোশনের সঙ্গে এআইয়ের এক অদ্ভুত সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। আপনি যদি টাইম লুপ, সিমুলেশন বা ডেটা প্রিজারভেশনের কনসেপ্টগুলো পছন্দ করেন, তবে এই মুভি আপনার জন্য। মুভি শেষ করার পর আপনাকে অনেক প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হবে। কোরিয়ানরা যে ইমোশন এবং থ্রিলারের ব্লেন্ডিংয়ে ওস্তাদ, তার প্রমাণ এই মুভি।

দ্য গ্রেট ফ্লাড মুভির দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

তবে এখানে আমার একটি ব্যক্তিগত মতামত আছে। মুভিটির প্রথমার্ধে যে টানটান উত্তেজনা থাকে, দ্বিতীয় অংশে তা ধরে রাখা কঠিন। একটা টুইস্টের মধ্য দিয়ে গল্প এতটাই বদলে যায় যে কি হচ্ছে বুঝে ওঠা কঠিন। তাই দ্য গ্রেট ফ্লাড হয়তো সবার জন্য নয়। যারা সোজা-সাপ্টা অ্যাকশন পছন্দ করেন, তারা গল্পের জটিলতায় কিছুটা বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু যারা ভাবনার খোরাক এবং একটু ভিন্ন স্বাদের সাই-ফাই খুঁজছেন, তাদের জন্য এই মুভি সেরা হতে পারে।