সাল ১০১৯১। মানবসভ্যতা ছড়িয়ে পড়েছে গ্যালাক্সিজুড়ে। প্রযুক্তি বা জ্ঞানে–বিজ্ঞানে মানুষ যেকোনো সময়ের চেয়ে এগিয়ে। গ্রহে গ্রহে স্থাপন করেছে বসতি। নিমেষে ভ্রমণ করছে মহাকাশের সীমাহীন দূরত্ব। এত কিছুর পরও ক্ষমতা আর লোভের সেই আদিম প্রবৃত্তি আজও মানুষের মধে৵ রয়ে গেছে।
এক সম্রাটের অধীনে গ্যালাক্সির প্রতিটি গ্রহ শাসন করছে একেকটি রাজপরিবার। এই রাজপরিবারগুলো নিয়মিত কর দিয়ে সম্রাটের অনুগত থাকে। এমন দুটি রাজপরিবার হাউস অব হার্কেনিন ও হাউস অব অট্রিডিস।
ডুন মুভির পটভূমি মরুগ্রহ অ্যারাকিস। যত দূর চোখ যায়, বালুর রাজত্ব। এই বালুতে মিশে আছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দামি উপাদান, স্পাইস। আন্তগ্যালাক্টিক ভ্রমণে এর গুরুত্ব অসীম।
সম্রাটের নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে হাউস অব হার্কেনিন বা হার্কেনিনদের রাজপরিবার আরাকিস গ্রহে স্পাইস সংগ্রহের কাজটি করছে। কিন্তু হঠাৎই নির্দেশ আসে, আরাকিস ছাড়তে হবে।
ব্যাপারটি হার্কেনিনদের জন্য মেনে নেওয়া সহজ নয়। তারপরও সম্রাটের নির্দেশে অপ্রিয় কাজটাই করতে হয়। হার্কেনিনদের থেকে নিয়ে অ্যারাকিসের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাউস অব অট্রিডিসকে। কিন্তু কেন এই রদবদল?
শান্তিপূর্ণ জাতি হিসেবে অট্রিডিসরা গ্যালাক্সিজুড়ে জনপ্রিয়। যোগ্য নেতৃত্বের গুণে নিজ গ্রহের সমুদ্র ও আকাশসীমায় তাদের নিয়ন্ত্রণ অভাবনীয়। পানিতে বা আকাশে অট্রিডিসরা যতটা শক্তিশালী, মরুভূমি ততটাই অচেনা তাদের কাছে।
মরুভূমি এবং স্পাইস ছাড়াও অ্যারাকিসে রয়েছে দুর্ধর্ষ বেদুইন জাতি ফ্রেমেন। আছে বালুর দানব, শাই হুলুদ।
মরুভূমির তপ্ত আবহাওয়া, প্রতিকূল পরিবেশ আর হার্কেনিনদের ক্ষোভ—এই সবকিছু মোকাবিলা করার কঠিন এক চ্যালেঞ্জ হাউস অব অট্রিডিসের সামনে। তারা কি পারবে সবকিছু মোকাবিলা করে টিকে থাকতে? সম্রাটের চাহিদামাফিক স্পাইস সংগ্রহ করতে?
মুভিটি পরিচালনা করেছেন ডেনিস ভিলেন্যুভ। ফরাসি কানাডিয়ান এই চলচ্চিত্র পরিচালক ক্ল্যাসিক ঘরানার সিনেমা পরিচালনায় মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন বরাবরই। সায়েন্স ফিকশনের জন্যও তিনি সুখ্যাত। অ্যারাইভাল, ব্লেড রানার ২০৪৯-এর মতো চলচ্চিত্রগুলো তাঁর পরিচালনাতেই নির্মিত হয়েছে। অ্যারাইভাল মুভিটির জন্য সেরা নির্মাতা হিসেবে অস্কার মনোনয়নও পেয়েছেন।
চরিত্রায়ণে বৈচিত্র্যের ছড়াছড়ি এ মুভিতে। টিমোথি শালামে, রেবেকা ফার্গুসন, অস্কার আইজ্যাক, জেনডায়া, ডেভিড ডাস্টমালশিয়ানসহ গুণী সব শিল্পী অভিনয় করেছেন এতে। প্রত্যেকেই তাঁদের চরিত্র ফুটিয়েছেন দারুণভাবে।
মুভিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হাউস অব অট্রিডিসের রাজকুমার পল অট্রিডিস। এই চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন টিমোথি শালামে। পলের বাবা অট্রিডিস রাজপরিবারের প্রধান লোটো অট্রিডিস। তুখোড় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই চরিত্রে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরেছেন অস্কার আইজ্যাক। পিতা–পুত্রের রসায়নও ছিল মুগ্ধ করার মতো।
নেতৃত্ব, রাজনীতি বা যুদ্ধ কোনোটাই পলের পছন্দ নয়। জীবনকে সে উপভোগ করতে চায়। কিন্তু নেতৃত্বের এই পালাবদলের খেলায় ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই পলের। এই পথ গ্রহণ করতে হবে সানন্দে।
ডুন
পরিচালক: ডেনিস ভিলেন্যুভ
অভিনয়: টিমোথি শালামে, রেবেকা ফার্গুসন, অস্কার আইজ্যাক, জশ ব্রোলিন, জেনডায়া প্রমুখ
ধরন: সায়েন্স ফিকশন, ড্রামা
রেটিং: পিজি-১৩
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট
মুক্তি: ২০২১
পলের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রেবেকা ফার্গুসন। শুধু হাউস অব অট্রিডিসের উত্তরাধিকারী নয় পল। শক্তিশালী ও রহস্যময় বেনি জেসিরিট সংঘের সদস্য জেসিকার ধারণা, পল সাধারণ মানুষ নয়, ‘লিসান আল গায়িব’। কিন্তু ‘লিসান আল গাইব’ কী? পল কি সত্যিই অসাধ্য সাধন করবে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে মুভিটি দেখতে হবে।
হাউস অব অট্রিডিসের তদারককারী ডানকানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অ্যাকুয়াম্যানখ্যাত জেসন মোমোয়া। পর্দায় অন্য রকম এক আবহ যোগ করেছে তাঁর অনবদ্য অভিনয়।
ফ্রাঙ্ক হার্বার্টের উপন্যাস ডুন অবলম্বনে নির্মিত মুভিটি। গল্পের পরিসর অনেক বিস্তৃত, তাই শুরুতে মুভিটি বেশ ধীরগতির মনে হতে পারে। মূল গল্পে ঢুকতেই কিছুটা সময় পেরিয়ে যায়। অনেকের কাছে বিষয়টি ভালো না–ও লাগতে পারে। তবে একবার গল্পে ঢুকে গেলে শেষ করে না ওঠার উপায় নেই।
১৯৮৬ সালে উপন্যাসটি অবলম্বনে ডুন নামে একটি মুভি প্রথমবারের মতো তৈরি করেছিলেন ডেভিড লিঞ্চ।
আলোচক সমালোচক সবারই মন কেড়ে নিয়েছে মুভিটি। সেরা ছবিসহ মোট ১০টি বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোয়ন পেয়েছে। ঝুলিতে উঠেছে ছয়টি অস্কার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর মুভিটির দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশ পাবে।
পিজি-১৩ রেটেড মুভিটি পরিবারের সবার সঙ্গে বসে উপভোগ করার মতো।