চাকরি হারাচ্ছেন নাসার ৫৫০ কর্মী
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির প্রায় ৫৫০ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এই ঘোষণা প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি, ব্যবসা এবং সহায়তা খাতের কর্মীদের ক্ষেত্রে এই ছাঁটাইয়ের প্রভাব পড়বে। ১৪ অক্টোবর প্রভাবিত কর্মীদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এই খবরটি এমন সময়ে এল, যখন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি শাটডাউন চলছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি তার ৬৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তহবিল সংকটের আশঙ্কার মুখে রয়েছে। তবে নাসা জানিয়েছে, এই ছাঁটাইয়ের সঙ্গে সরকারি শাটডাউনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি গত জুন মাস থেকে শুরু হওয়া একটি ‘পুনর্গঠন’ প্রক্রিয়ার অংশ।
জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি বা জেপিএল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ভবিষ্যতে জেপিএলকে সর্বোত্তম অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা পুনর্গঠন এবং প্রতিষ্ঠানের আকার নির্ধারণের পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
জেপিএল নাসার অন্যতম প্রধান গবেষণা কেন্দ্র। এটি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। এর বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের রহস্য উন্মোচনে বেশ কিছু যুগান্তকারী অভিযান পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সাইকি গ্রহাণু অভিযান, ইউরোপা ক্লিপার মিশন, ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপ, পারসিভিয়ারেন্স মার্স রোভার এবং ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক।
জেপিএলের পরিচালক ডেভ গ্যালাঘ কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, অল্প সময়ের মধ্যে এটি বিশাল পরিবর্তন। আগামী সপ্তাহগুলো আমাদের সবারই কঠিন সময় কাটবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, মহাকাশে মানবজাতির সাহসী লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এই গবেষণাগারে বেশ কয়েক দফা কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫৫ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও দূর থেকে এবং হাইব্রিড পদ্ধতিতে কাজ করা কর্মীদের অফিসে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা এ নিয়ম মানেননি, তাঁদের চাকরি থেকে অব্যহতির ঝুঁকি ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাবে নাসার অর্থ বরাদ্দ ব্যাপকভাবে কমানোর কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাব পাস হলে নাসার মোট বাজেট ২৪ শতাংশ কমে যেতে পারে। ফলে কয়েক ডজন বর্তমান ও পরিকল্পিত অভিযান বাতিল হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্ল্যানেটারি সোসাইটি’র মতে, এর ফলে ৪১টি বিজ্ঞান প্রকল্প বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা নাসার মোট প্রকল্পের এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে ‘মার্স স্যাম্পল রিটার্ন’ প্রোগ্রাম এবং বৃহস্পতির ‘জুনো’ মিশনের মতো প্রকল্পও রয়েছে। এমনকি বহুল প্রতীক্ষিত ‘ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ’ অভিযানও শুরু হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
হোয়াইট হাউসের এই বাজেট প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাসার কর্মচারী ও বিশেষজ্ঞরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কংগ্রেস বাজেট অনুমোদন করার আগেই নাসার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক শন ডাফির নেওয়া কিছু পদক্ষেপের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বর্তমানে সরকারি শাটডাউনের কারণে নাসার বেশির ভাগ নিয়মিত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সাতটি সরকারি সংস্থা ৪ হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর বিরুদ্ধে একাধিক কর্মী ইউনিয়ন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালতে মামলা করেছে।
এই সংকটের মধ্যেও নাসার খুব অল্পসংখ্যক কর্মী ‘ব্যতিক্রমী’ দায়িত্বে কর্মরত রয়েছেন। তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ও গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইটগুলোর নিরাপত্তা বজায় রাখছেন। পাশাপাশি, চাঁদে আসন্ন আর্টেমিস অভিযানের হার্ডওয়্যারের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন।