আমাদের কাজের প্রভাব যে আগামী ৪০ বছর ধরে চলবে, তা কল্পনাতেও ছিল না—পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী জন ক্লার্ক

২০২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জন ক্লার্কছবি: ইউসি বার্কলে

ব্রিটিশ গবেষক জন ক্লার্ক চলতি বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী জন মার্টিনিস ও ফরাসি বিজ্ঞানী মিশেল দ্যভোরে। ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন গবেষণার জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

জন ক্লার্ক ১৯৪২ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। এই তিন বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে গবেষণা করছেন।

নোবেল পুরস্কারের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই জন ক্লার্ক এই সাক্ষাৎকারটি দেন। তাঁর বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। তিনি তাঁর দুই সহকর্মী জন মার্টিনিস এবং মিশেল দ্যভোরের প্রশংসা করেন। প্রায় ৪০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে তিনি তাঁদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। ৮৩ বছর বয়সী ক্লার্ক এই সাক্ষাৎকারে তাঁদের নিরলস পরিশ্রম ও যৌথ প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন জিনাত শারমিন

অ্যাডাম স্মিথ: হ্যালো প্রফেসর ক্লার্ক, আমি অ্যাডাম স্মিথ বলছি। আপনাকে এই সময়ে ফোন করার জন্য দুঃখিত। আমি জানি আপনি মাত্রই প্রেস কনফারেন্স শেষ করলেন।

জন ক্লার্ক: হ্যাঁ, মনে হচ্ছে আজ খুব ব্যস্ত একটা দিন কাটবে।

অ্যাডাম স্মিথ: আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন। আজকের এই পুরস্কার ঘোষণার পর কেমন অনুভব করছেন?

জন ক্লার্ক: আমি এখনো পুরোপুরি স্তম্ভিত। জন মার্টিনিস ও মিশেল দ্যভোরে আমার সঙ্গে এই পুরস্কার পাওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তাঁদের ছাড়া এই পুরস্কার গ্রহণ করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না। সেটা অন্যায় হতো। আমরা চার দশকের বেশি সময় ধরে একসঙ্গে কাজ করছি। নোবেল কমিটিও বিষয়টি জানত।

অ্যাডাম স্মিথ: এই পুরস্কার আমাদের ৪০ বছর আগে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তখন ছিল বার্কলেতে আপনার গবেষণাগার। সেখানে মিশেল দ্যভোরে ছিলেন আপনার পোস্টডক। আর জন মার্টিনিস ছিলেন পিএইচডি ছাত্র। তাঁরা দুজনই আপনার ছাত্র থেকে সহকর্মী হয়েছেন।

জন ক্লার্ক: পরিবারও বটে!

আরও পড়ুন

অ্যাডাম স্মিথ: সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ করুন।

জন ক্লার্ক: এমন অসাধারণ মেধাবী মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি ভাগ্যবান। মিশেল ছিল পোস্টডক আর জন ছিল গ্র্যাজুয়েট ছাত্র। ওরা অসাধারণ ছিল। ছাত্র হয়েও ওরা আমাকে সবসময় আরও ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করত। আমি ওদের কখনো ছাত্র মনে করিনি। মনে হয়েছে, দীর্ঘ এক যাত্রায় আমার বৈজ্ঞানিক সহযাত্রী। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। ওরা না থাকলে এই কাজ কতটা সম্ভব হতো, তা আমি কল্পনাও করতে পারি না।

অ্যাডাম স্মিথ: অনেক সময় এমনটাই হয়, তাই না? কয়েকটা সম্মাননা মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এক বিশেষ শক্তি তৈরি হয়…

জন ক্লার্ক: একদম ঠিক বলেছেন। আমি বলব, ওদের দুজনকে ছাড়া এই কাজগুলো সম্ভব হতো না।

২০২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জন ক্লার্ক
ছবি: ব্র্যান্ডন সানচেজ মেজিয়া/ইউসি বার্কলে

অ্যাডাম স্মিথ: নিশ্চয়ই আপনাদের তিনজনের মিলন সত্যিই এক অনন্য জাদু ছিল। আপনার প্রেস কনফারেন্সে আপনি সহযোগিতার কথা বলছিলেন। সেখানে নোবেলজয়ী ব্রায়ান জোসেফসন ও অ্যান্থনি লেগেটের কথাও উঠে আসে। বিজ্ঞান আসলে সঠিক মানুষদের খুঁজে বের করার একটি প্রক্রিয়া। এই মানুষেরা একে অপরের মধ্যে নতুন চিন্তা বা আবিষ্কারের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেন।

জন ক্লার্ক: হ্যাঁ, সঠিক মানুষ নিয়ে কাজ করা গেলে একা কাজ করার চেয়ে হাজারগুণ বেশি এগোনো সম্ভব। আমি যখন গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ছিলাম, তখন ব্রায়ান জোসেফসন আমার থেকে দুই বছর সিনিয়র ছিলেন। তিনি যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করলেন, তখন আমরা খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হলাম। তিনি সবসময়ই ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে থাকতেন, এখনো থাকেন। আর টনি লেজেটকেও খুব ভালোভাবে চিনতাম। তবে ব্রায়ান জোসেফসন আমার ওপর গভীর আর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিলেন। এই আবিষ্কারের পর আমরা দুজনই ব্রায়ান পিপার্ডের তত্ত্বাবধানে ছিলাম। পিপার্ডও আমার কর্মজীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছেন।

আরও পড়ুন

অ্যাডাম স্মিথ: হ্যাঁ, ব্রায়ান জোসেফসন এখনো মানুষকে ভাবতে বাধ্য করেন ও চ্যালেঞ্জ জানান।

জন ক্লার্ক: হ্যাঁ।

অ্যাডাম স্মিথ: আপনি যখন গবেষণাগুলো করছিলেন, তখন কি বুঝতে পেরেছিলেন যে আপনি ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের প্রমাণ দিচ্ছেন? আপনি কি ভেবেছিলেন, এটি একসময় পদার্থবিজ্ঞানে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে?

জন ক্লার্ক: আমরা কিছুটা বুঝেছিলাম। মনে আছে, তখন আমাদের বিভিন্ন সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হতো। আমরা আমাদের কাজ নিয়ে কথা বলতাম। আমরা বুঝতাম, মানুষ আমাদের কাজের গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে এর প্রভাব যে আগামী ৪০ বছর ধরে চলবে, তা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।

২০২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জন ক্লার্ক
ছবি: এপি/ নোয়া বার্গার

অ্যাডাম স্মিথ: দারুণ। আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

জন ক্লার্ক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

অ্যাডাম স্মিথ: আজকের ব্যস্ত দিনের বাকি অংশের জন্য শুভকামনা রইল।

জন ক্লার্ক: ধন্যবাদ, বিদায়।

সূত্র: নোবেল প্রাইজ ডটঅর্গ