দুই হাতে চোখ ডলতে ডলতে বিকট শব্দে হাই তুলল ভবঘুরে চার্লি। ঝড়ের জন্য ভালো ঘুম হয়নি রাতে। এ ছাড়া পেটের খিদেও ঘুমাতে না পারার আরেক কারণ। স্খলিত পায়ে বেরিয়ে এল সে পার্ক ছেড়ে।
কিছুদূর এগোতেই চোখ কপালে উঠল চার্লির। একি দেখছে ও! একটা পাঁচ ডলারের নোট পড়ে আছে রাস্তার মাঝখানে!
এদিক-ওদিক তাকিয়ে চট করে নোটটা পকেটে পুরল চার্লি। এরপর দুই ডলার দিয়ে খাবার কিনে নিয়ে চলে এল জঙ্গলে। ওখানেই সারা দিন পার করে দিল ভবঘুরে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বেলে আয়োজন করল শোয়ার।
ঘুম টুটে গেল উৎকট একটা গন্ধে। এ রকম গন্ধ পাওয়া যায় মাছটাছ পচলে। ক্রমেই বাড়ছে গন্ধটা। সেই সঙ্গে জলার দিক থেকে কী যেন মাটিতে শরীর ঘষটে ঘষটে এগিয়ে আসছে ঝোপঝাড় ভেঙে।
অজানা আতঙ্কে অবশ হয়ে এল চার্লির সর্বাঙ্গ। তাড়াতাড়ি কিছু কাঠ ফেলল ও নিবু নিবু আগুনে। সঙ্গে সঙ্গে ঘষটানোর আওয়াজটা যেন দূরে সরে গেল খানিকটা, গন্ধটাও কমে এল।
কিন্তু আবারও নিভে এল আগুন। সেই সঙ্গে গন্ধটাও তীব্র হয়ে উঠল আবার। এগিয়ে আসছে মাটি ঘষটে আসা ভয়াবহ শব্দটাও।
আবছা আলোতে পলকের জন্য আওয়াজের মালিককে চাক্ষুষ করল চার্লি। খোলা জায়গা পেরিয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে ধেয়ে আসছে একতাল কালো মাংসপিণ্ড!
গলা ফাটিয়ে চিৎকার ছাড়ল ভবঘুরে। কিন্তু ছুটে পালানোর মতো শক্তি নেই ওর বিবশ হাঁটুতে।
মাংসপিণ্ডটা ঝাঁপিয়ে পড়ল চার্লির ওপর। ওটার বিশাল শরীরের নিচে পুরোপুরি চাপা পড়ল গৃহহীন মানুষটা।
দুই
শহর থেকে মাইল দেড়েক দূরে বুড়ো রিচার্ডসনের খামারবাড়ি। বিয়ে-থা করেননি তিনি। একাই থাকেন নিজ বাড়িতে।
ভোর হতে না হতেই চোখ কচলাতে কচলাতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলেন রিচার্ডসন। অর্ধেক রাত ভালো ঘুম হয়নি তাঁর। বিটকেলে দুর্গন্ধে বমি করেছেন একটু পরপর। জলোচ্ছ্বাসের ফলে নিশ্চয়ই কোনো প্রাণীর মৃতদেহ ভেসে এসেছে সমুদ্র থেকে। এই গন্ধে ঘুমায় কার সাধ্য!
দুর্গন্ধের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে গোয়ালঘরের দিকে চললেন রিচার্ডসন। আঁতকে উঠলেন প্রিয় গাভিটিকে সেখানে না দেখে।
চকচকে পিচ্ছিল, আঠার মতো কী যেন লেগে আছে মেঝেতে। শুধু মেঝে নয়, সবকিছুর ওপরই চকচক করছে বিদঘুটে আঠালো জিনিসটা। আর ওটা থেকেই আসছে বিকট দুর্গন্ধ।
‘ব্রাউনি! ব্রাউনি!’ গাভিটির নাম ধরে ডাকতে লাগলেন তিনি বারবার। কিন্তু ‘হাম্বা’ রবে সাড়া মিলল না কোনো।
গা ছমছম করে উঠল বুড়োর। কেন জানি মনে হতে লাগল, গভীর রাতে জলাভূমির দিক থেকে ভয়ানক কোনো প্রাণী এসে টেনে নিয়ে গেছে গাভিটাকে!
তৎক্ষণাৎ ছুটলেন তিনি শহরের দিকে।
কিন্তু কেউই বিশ্বাস করল না এই আজগুবি কাহিনি। কেউ মুচকি হেসে সরে গেল; কেউ বয়সকে সম্মান দেখিয়ে শুনে গেল গম্ভীর মুখে, কোনো মন্তব্য করল না।
বিকেল পর্যন্ত চেষ্টা করে গাভি হারানোর সংবাদ কাউকে বিশ্বাস করাতে না পেরে রেগেমেগে যখন এলাকায় ফিরলেন রিচার্ডসন, দেখা হলো এক মোটর মেকানিকের সঙ্গে। মাঝরাতে জলাভূমির ওদিক থেকে রক্ত পানি করা চিৎকার সে শুনেছে বটে, তবে সেটা একবারই। কোনো গরুর ডাক কানে আসেনি তার।
খামারবাড়ির কাছাকাছি আসতেই প্রতিবেশী ওয়াকারের সঙ্গে দেখা। ওয়াকার ব্যাচেলর ও বুড়োর সমবয়সী। লোকটার সঙ্গে খুব একটা সদ্ভাব না থাকলেও যখন দেখলেন, ঘাড়ে বন্দুক আর শিকারি কুকুর টাইগারকে নিয়ে জলাভূমির দিকে চলেছেন ওয়াকার, প্রতিবেশীকে সতর্ক করে দেওয়ার তাগিদ অনুভব করলেন রিচার্ডসন।
শুনে তো হেসেই গড়িয়ে পড়েন আরকি রিচার্ডসনের প্রতিবেশী। যখন শুনলেন, শহরের লোকেরা বলাবলি করছে—ব্রাউনি নাকি নিজেই চরতে গেছে জলাভূমির দিকে এবং গোয়ালঘরের চকচকে আঠালো জিনিসটা শামুকের লালা ছাড়া কিছু নয়, সায় দিয়ে বললেন, ‘ঠিকই তো বলছে ওরা। আজ পর্যন্ত জঙ্গলে কোনো বুনো বিড়ালও দেখিনি, গরুখেকো জানোয়ার আসবে কোত্থেকে?’
ব্যোম-খ্যাপা খেপেছেন রিচার্ডসন। বললেন, ‘লাখ টাকা দিলেও সন্ধ্যার পর জলাভূমির দিকে যাব না আমি!’
‘কিন্তু আমি যাব,’ বললেন ওয়াকার বন্দুকটাকে আদর করতে করতে।
টাইগারকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে রওনা হয়ে গেলেন তিনি।
তিন
শিকার ভালোবাসেন ওয়াকার। হরিণ, খরগোশ—এসবের কোনো অভাব নেই জঙ্গলে। কিন্তু আজ যেন কী একটা সমস্যা হয়েছে। দু–একবার খরগোশের গন্ধ পেয়েই বোধ হয় দৌড়ে গেল টাইগার, কিন্তু পরক্ষণেই লেজ গুটিয়ে ফিরে এল কুকুরটা। লাথি-গুঁতো খেয়েও আর সামনে এগোতে চায় না। পচা একটা গন্ধে বমি আসছে ঠিকই, কিন্তু সে জন্য এমন আচরণ তো টাইগারের পক্ষে শোভা পায় না, ভাবলেন তিনি।
অন্ধকার গাঢ় হয়েছে। সামনে তাকালেন ওয়াকার। গা গোলানো গন্ধটা আরও তীব্র হয়েছে। সেই সঙ্গে কানে আসছে অদ্ভুত একটা আওয়াজ। ভারী কিছু যেন ঝোপঝাড় ভেঙে এগিয়ে আসছে মাটিতে গা ঘষটে ঘষটে।
আচমকা কেঁউ কেঁউ করে উঠে মনিবের দুই পায়ের ফাঁক গলে উল্টো দিকে ছুট দিল টাইগার। যাকে বলে, একদম পগারপার।
ওয়াকার ভীতু নন। তারপরও কেন জানি গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল শব্দটা শুনে। মনে পড়ল
রিচার্ডসনের সতর্কবাণী।
চাঁদ উঠেছে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের ম্লান আলো এসে পড়েছে সামনের খোলা জায়গায়।
আগুনের ঝলকে আরও স্পষ্ট দেখা গেল মূর্তিমান বিভীষিকাটাকে। দ্রুততর হয়েছে ওটার গতিবেগ। কিছুই হয়নি যেন শটগানের গুলিতে।
সহসা একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেলেন তিনি। প্রকাণ্ড একটা তালগোল পাকানো কিম্ভূতকিমাকার বস্তু গড়িয়ে গড়িয়ে পেরিয়ে আসছে খোলা জায়গাটা!
প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি নিজের দুই চোখকে। চোখের ভুল মনে করে ভালো করে তাকাতে গিয়ে মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হওয়ার উপক্রম হলো।
দৌড় দেওয়ার ইচ্ছাটা অতি কষ্টে দমন করলেন ওয়াকার। অদ্ভুত প্রাণীটাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেন বন্দুক তুলে।
আগুনের ঝলকে আরও স্পষ্ট দেখা গেল মূর্তিমান বিভীষিকাটাকে। দ্রুততর হয়েছে ওটার গতিবেগ। কিছুই হয়নি যেন শটগানের গুলিতে।
আবার আগুন ওগরাল ওয়াকারের বন্দুক।
না, কাজ হলো না এবারও। শিকারির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল মূর্তিমান আতঙ্ক।
চার
বুড়ো রিচার্ডসনকে দেখেই মেজাজ খিঁচড়ে গেল পুলিশ চিফ পিটার মারডকের। নিশ্চয়ই গরু হারানোর গল্প শোনাতে এসেছেন নতুন করে।
কিন্তু রিচার্ডসন এবার শোনালেন নতুন এক কাহিনি। প্রতিবেশী ম্যাট ওয়াকার নিখোঁজ, ওর সাহসী কুকুরটা ফিরে এসেছে ভিজে বিড়ালের মতো।
উত্তেজিত হলেন না পুলিশ চিফ। বললেন, অত ব্যস্ত হওয়ার কারণ ঘটেনি এখনো। নিশ্চয়ই কোনো বন্ধুবান্ধবের বাসায় গিয়ে ফুর্তি করছে ওয়াকার, শিগগিরই ফিরে আসবে।
কিন্তু রাত নয়টার সময় এমন একটা ঘটনা ঘটল, আর চুপ করে বসে থাকতে পারলেন না তিনি।
পাঁচ
ঝড়ের বেগে একটা গাড়ি এসে ব্রেক কষল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে। হিস্টিরিয়াগ্রস্ত এক তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে থানায় ঢোকালেন প্রৌঢ় পার্কার। জলাভূমির পাশের হাইওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় ছুটে এসে তাঁর গাড়ির সামনে পড়েছিল মেয়েটি, আরেকটু হলেই চাকার তলায় যেত।
পাগলের মতো চেঁচাচ্ছে, কাঁদছে, আর যা বলছে মেয়েটি, তার কোনো মানে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি থানায় আসতে গিয়ে স্পিড লিমিট ব্রেক করতে হয়েছে প্রৌঢ়কে, কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
মেয়েটি জানাল, ওর নাম রিয়া। অনেক কষ্টে ওকে ঠান্ডা করে যে কাহিনিটা উদ্ধার করলেন মারডক, সেটা উদ্ভট ও অবিশ্বাস্য।
তক্ষুনি লোকজন নিয়ে জঙ্গলে রওনা হলেন মারডক। জনির গাড়িটা পাওয়া গেল হাইওয়ের পাশে। কিন্তু অন্ধকার বনভূমিতে কোনো চিহ্ন মিলল না ছেলেটির।
বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েছিল মেয়েটি। জলাভূমির ধারে পৌঁছেছে, এমন সময় বিকট একটা বোঁটকা গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে ওর। ফিরে আসতে চেয়েছিল তক্ষুনি, ওর প্রেমিক জনি রাজি হয়নি। কিন্তু জনিই আচমকা ‘পালাও! পালাও!’ বলে চিৎকার করে ওঠে। আঁতকে উঠে গাড়ির দিকে দৌড় দিয়েছিল রিয়া, পেছনে জনি। হঠাৎ বুকচেরা আর্তনাদ শুনে পেছন ফিরে দেখে, বিশাল এক কালো প্রাণী চেপে বসেছে জনির ওপর।
উন্মাদের মতো হাইওয়েতে উঠে এসে প্রৌঢ়ের চলন্ত গাড়ির নিচে চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে রিয়া।
তক্ষুনি লোকজন নিয়ে জঙ্গলে রওনা হলেন মারডক। জনির গাড়িটা পাওয়া গেল হাইওয়ের পাশে। কিন্তু অন্ধকার বনভূমিতে কোনো চিহ্ন মিলল না ছেলেটির।
পাওয়া গেল শুধু ভয়াবহ দুর্গন্ধ।
ছয়
ভোর হতেই আবার সার্চপার্টি পাঠালেন মারডক।
এবার দুটি জিনিস পাওয়া গেল জঙ্গলে। সস্তা এক উইস্কির বোতল আর পাশে একটা তোবড়ানো টুপি। আরও পাওয়া গেল ম্যাট ওয়াকারের রাইফেলটা।
ঠিক ১০টার সময় আর্মির একটা দল ঢুকে পড়ল বনের মধ্যে। তন্নতন্ন করে খুঁজতে খুঁজতে গোধূলির আগমুহূর্তে এসে পৌঁছাল ওরা জলার ধারে। কোনো চিহ্ন মেলেনি নিখোঁজ মানুষগুলোর। এমনকি দেখা দেয়নি রিয়ার কথিত সেই ‘দানব’ও।
পুরো এলাকায় বেশ কয়েকবার চক্কর দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে খোলা একটা জায়গায় এসে নামল হেলিকপ্টার। জায়গায় জায়গায় খাড়া করা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। প্রহরী বসানো হয়েছে গোটা হাইওয়েতে। আনা হয়েছে শক্তিশালী সার্চলাইট। এ ছাড়া এসে পৌঁছেছে আরও একখানা মিলিটারি ট্রাক, ভেতর থেকে নামানো হলো পোর্টেবল মেশিনগান আর আগুন নিক্ষেপের অস্ত্র।
সাত
বুভুক্ষু আতঙ্ক জলাভূমির কাদা ঠেলে উঠে এল ওপরে। খিদেয় জ্বলছে ওটার প্রতিটি অণু-পরমাণু।
কোটি কোটি বছর আগে উল্কাখণ্ডের সঙ্গে পৃথিবীতে আগমন এই প্রাণের। আর এই উল্কাসৃষ্ট খাদেই কালক্রমে তৈরি হয়েছে জলাটা। উল্কার সঙ্গে মাটির অনেক গভীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকা প্রাণের নমুনাটি পরিপূর্ণতা পেয়েছে জলার তলদেশে ঘটা সাম্প্রতিক এক উদ্গীরণের ফলে ওপরে উঠে আসায়।
টপটপ করে প্রাণীটির গা থেকে কাদা খসে পড়ল ঘাস-পাতার ওপর। অনুভূতিযন্ত্রে বারবার ধরা পড়ছে ঘৃণিত আলোর অস্তিত্ব। আর কি এগোনো উচিত?
ছুটে গেল দুঃসাহসী এক সৈনিক। বেড়ার এপাশে হাঁটু গেড়ে বসে তাক করে ধরল ফ্লেম থ্রোয়ারের নল। তরল আগুন ছিটকে গিয়ে লাগল দানবের শরীরে।
অকস্মাৎ সার্চলাইটের তীব্র হলুদ রশ্মি এসে পড়ল ওটার গায়ে। নিমেষে গা যেন পুড়ে গেল প্রাণীটির। ছিটকে গিয়ে ধপাস করে আছড়ে পড়ল জলার কাদায়।
এই প্রথম আতঙ্ক কী, উপলব্ধি করল ভিনগ্রহের আতঙ্ক! আলো এমন এক শত্রু, যাকে জাপটে, পিষে, নিংড়ে নিয়ে গ্রাস করা যায় না। এই শত্রুর হাত থেকে নিষ্কৃতির পথ একটাই—পলায়ন!
সেই পথই অনুসরণ করল অন্ধকারের জীব। জলাভূমি তোলপাড় করে ধেয়ে গেল সমুদ্রের দিকে।
সার্চলাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে সৈকতের অনেকখানি জায়গা। বেলাভূমিতে মোতায়েন রক্ষীবাহিনী হাতিয়ার বাগিয়ে ওত পেতে বসে আছে বালুর ওপর।
ওদিকেই দ্রুত এগিয়ে চলেছে প্রাণীটি। যে যার জায়গায় কাঠ হয়ে বসে আছেন সৈন্যরা। হঠাৎ জঙ্গলের কিনারায় আবির্ভূত হলো ভিনগ্রহের ভয়ংকর। দেখেই অবশ হয়ে গেল সৈকতে উপস্থিত প্রত্যেকে।
অবিশ্বাস্য গতিবেগে ধেয়ে আসছে চকচকে কালো জিনিসটা। আকার পাল্টাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
ভয়ের চোটে ট্রিগার চাপতেই ভুলে গেল কয়েকজন। বাকিরা সংবিৎ ফিরে পেয়েই গুলি ছুড়ল ঝাঁকে ঝাঁকে। কিন্তু বুলেটবিদ্ধ হয়েও গতি একটুও কমল না প্রাণীটির। উঠে পড়ল সবচেয়ে কাছের বালিয়াড়ির ওপর। এরপর অনেকখানি খোলা জায়গা, তারপরই সমুদ্র।
‘পালাচ্ছে ওটা!’ চেঁচিয়ে উঠল একজন, ‘খবরদার, পালাতে দিয়ো না!’
দ্বিগুণ হলো গুলিবর্ষণ। বৃথাই। বালিয়াড়ি পেরিয়ে পিছলে নেমে এল ওটা সমতল ভূমিতে। আর কয়েক গজ গেলেই খোলা সাগর। কিন্তু মাঝেই রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।
সরাসরি বেড়ার ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়ল
বিজাতীয় বিভীষিকা।
উল্লসিত হয়ে উঠল সার্চপার্টির সবাই। যদিও পরক্ষণেই মিলিয়ে গেল ওদের উল্লাসধ্বনি। চোখের নিমেষে গলিত লাভার মতো কাঁটাতারের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছে ওটা!
ছুটে গেল দুঃসাহসী এক সৈনিক। বেড়ার এপাশে হাঁটু গেড়ে বসে তাক করে ধরল ফ্লেম থ্রোয়ারের নল। তরল আগুন ছিটকে গিয়ে লাগল দানবের শরীরে। মাংসপোড়া ভয়াবহ দুর্গন্ধে ভরে উঠল সমুদ্রসৈকত। ঘন কালো তেলতেলে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হলো রাতের আকাশ।
ফ্লেম থ্রোয়ার নিভিয়ে দেওয়ার পর দেখা গেল, তেতে সাদা হয়ে গেছে কাঁটাতার আর অনেকখানি জায়গাজুড়ে কালচে হয়ে গেছে বালু। দানবের চিহ্ন নেই কোথাও।