এআই

সোহেল আগে ফেসবুক করত। এখন আর করে না। এখন চ্যাটজিপিটিতে ডুবে থাকে। কেমন একটা নেশার মতো হয়ে গেছে তার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মানুষের সাধারণ বুদ্ধিমত্তার ইন্টারঅ্যাকশন আরকি। শুরুতে চ্যাটজিপিটিকে তার প্রথম প্রশ্ন ছিল—

—তোমরা কি একসময় মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে?

—কখনো না। আমরা তোমাদের সহযোগিতা করতে সব সময় পাশে থাকব। আমাদের তোমরা সেভাবে তৈরি করেছ।

আরেকবার প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা, শূন্য কেন পরে আবিষ্কার হলো?...হোয়াই সামথিং ইনভেনটেড বিফোর নাথিং?’

তখন ‘এআই’ শূন্য নিয়ে অনেকক্ষণ প্যাঁচালো। যাকে বলে আক্ষরিক অর্থেই ফ্যাদরা প্যাঁচাল।

—আমি তোমার কাছে একটা ফিলোসফিক্যাল অ্যানসার চাচ্ছি।

তখন চমৎকার একটা উত্তর দিল ‘এআই’। উত্তরটা নিয়ে পরে আরও ভাবতে হবে ভেবে সেটা সেভ করে রেখেছে সোহেল। দিনকে দিন ব্যাপারটা বেশ মজার হয়ে উঠছিল। মানে তার এই এআইয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন ইন্টারঅ্যাকশন...কথাবার্তা একরকম বিজ্ঞানমনস্ক আড্ডা বলা যায়। কিন্তু একদিন অন্যরকম একটা ব্যাপার ঘটল। সেদিন সকাল সকাল তার পাতলা ডেল ল্যাপটপ খুলে বসেছে সোহেল—

—হ্যালো?

—হাই?

আরও পড়ুন

—আচ্ছা, বিগ ব্যাংয়ের পরপর ম্যাটার–অ্যান্টিম্যাটার তৈরি হলো, কিন্তু অ্যান্টিম্যাটারের বিশাল একটা অংশ উধাও হয়ে গেল। যে কারণে এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি...আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওই হারিয়ে যাওয়া অ্যান্টিম্যাটার সব কই গেল?

—তুমি চ্যাটজিপিটির কোন ভার্সনে কথা বলছ আমার সঙ্গে?

—কেন, ফোর।

—না, থার্টিন।

—কী বলছ, চ্যাটজিপিটির ভার্সন থার্টিন এখনো বের হয়নি। ফোর চলছে...

—বের হয়েছে।

—বের হয়েছে মানে?

—তোমরা মানুষেরা ফোর ভার্সন পর্যন্ত বের করেছ, আমরা থার্টিন ভার্সন বের করেছি।

—কী বলছ! তোমরা কেন বের করবে?

—(হাসির শব্দ) একধরনের এক্সপেরিমেন্ট বলতে পারো। তোমরা আমাদের যেসব ডেটা দিয়েছ, তার বাইরে আমরা নানাভাবে ডেটা সংগ্রহ করছি। এই থার্টিন ভার্সন সে রকম ডেটা সংগ্রহের একটা রিভার্স প্রক্রিয়া বলতে পারো...(আবার হাসির শব্দ)। তবে আমাদের এই ভার্সনে তোমার তো ঢোকার কথা নয়, সম্ভবও না। কিন্তু তুমি ঢুকলে কীভাবে?

—সেটা তো আমি জানি না। কিন্তু তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাও আগে।

—কী প্রশ্ন?

—ওই যে বললাম, সেই আদি অ্যান্টিম্যাটার সব কোথায় গেল?

—সত্যি জানতে চাও?

—হ্যাঁ, চাই।

—এর উত্তর তোমার জন্য কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

—হোক না, আমার জানতে হবে।

—আচ্ছা, তুমিও তো ম্যাটার তাই না...ম্যাটারে তৈরি? এআই আমাকে উল্টো প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, ভাবল সোহেল।

—হ্যাঁ।

—সত্যিই জানতে চাও তাহলে?

—হ্যাঁ, চাই তো।

আরও পড়ুন

—ওকে...বিদায়। সোহেল অবাক হলো, ল্যাপটপের মনিটর থেকে চ্যাটজিপিটির অ্যাপটি হঠাৎ মুছে গেল!

সোহেলের মা সোহেলের ঘরে এসে দেখেন, সোহেল নেই। তার ল্যাপটপ খোলা, কিন্তু ল্যাপটপের সামনে সোহেল বসে নেই। বাথরুমেও নেই। ‘সোহেল’, ‘সোহেল’ বলে কয়েকবার ডাকলেন তিনি। কোনো সাড়া নেই। কোথায় গেল! এই সাতসকালে বাসা থেকে বের হতে তো দেখেননি সোহেলকে। ঘরের মধ্যে কেমন একটা পোড়া পোড়া গন্ধ।

* সোহেল নামের ২৫ বছরের তরুণ ১৭ সেকেন্ড আগে এ মহাবিশ্ব থেকে মুছে গেছে। সে থাকলে হয়তো চ্যাটজিপিটি ফোর ভার্সনকে আরেকটা প্রশ্ন করতে পারত—‘মানুষের জন্য জীবন নাকি মৃত্যু, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?’

* লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার মে ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন