মাত্র ১৮ আলোকবর্ষ দূরে নতুন গ্রহের সন্ধান
সৌরজগতের বাইরে আর কি কোথাও প্রাণ আছে? এই এক প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীরা যেন পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আর এবার তাঁরা হয়তো এমন এক জায়গার সন্ধান পেয়েছেন, যা আমাদের সেই আশাকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ!
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর খুব কাছেই নতুন একটি গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন। এটি আমাদের থেকে মাত্র ১৮.২ আলোকবর্ষ দূরে। মহাকাশের দূরত্ব বিবেচনায় একে বাড়ির পাশের গ্রহই বলা চলে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রাণের খোঁজে সৌরজগতের বাইরে যেসব এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান পেয়েছেন, এটা সেই তালিকার একেবারে শীর্ষে চলে এসেছে।
নতুন এই গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে GJ 251c। এটি মিথুন নক্ষত্রপুঞ্জে একটি লাল বামন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি ভারী। যেসব গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে বড় কিন্তু নেপচুনের চেয়ে ছোট, সেগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলেন সুপার-আর্থ। এটিই সে ধরনের একটি গ্রহ। অর্থাৎ সুপার আর্থ।
সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হলো, গ্রহটি তার নক্ষত্রের হ্যাবিটেবল জোন বা গোল্ডিলক্স জোনে রয়েছে। গোল্ডিলক্স জোন মানে এমন জায়গা যেখানে তাপমাত্রা খুব বেশি গরম নয়, আবার খুব বেশি ঠান্ডাও নয়। অর্থাৎ, এমন একটা আরামদায়ক জায়গা, যেখানে গ্রহের পৃষ্ঠে পানি থাকতে পারে। আর পানি থাকা মানেই সেখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।
নতুন এই গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে GJ 251c। এটি মিথুন নক্ষত্রপুঞ্জে একটি লাল বামন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি ভারী।
এই গ্রহটি খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীদের ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। তাঁরা যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছেন, তাকে বলে রেডিয়াল ভেলসিটি। যখন কোনো গ্রহ তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে, তখন সে তার মহাকর্ষের টানে নক্ষত্রটিকেও একটু একটু করে নিজের দিকে টানে। ফলে নক্ষত্রটিও সামান্য দুলতে থাকে। দূর থেকে এই দুলুনি দেখেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, ওই নক্ষত্রের কোনো গ্রহ আছে কিনা।
কিন্তু এটা খুব কঠিন। কারণ, নক্ষত্রগুলো নিজেই স্থির থাকে না। এর ভেতরে সারাক্ষণ লাভা টগবগ করে ফোটার মতো বুদবুদ করে। এর মধ্যে থেকে একটা গ্রহের ওই সামান্য দুলুনি খুঁজে বের করাটা খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতোই। বিজ্ঞানীদের টেক্সাসের ‘হ্যাবিটেবল-জোন প্ল্যানেট ফাইন্ডার’ এবং অ্যারিজোনার ‘এনইআইডি স্পেকট্রোগ্রাফ’-এর মতো শক্তিশালী যন্ত্র ব্যবহার করে এই সংকেতটি নিশ্চিত করতে হয়েছে।
তাহলে কি আমরা শিগগিরিই ওই গ্রহে প্রাণের সংকেত পেতে যাচ্ছি? না, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। এর সামনে দুটি বড় বাধা আছে।
প্রথমত, যদিও গ্রহটি আমাদের সৌরজগতের কাছে, কিন্তু এটি তার নক্ষত্র থেকে একটু বেশিই দূরে। ফলে আমাদের শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপও হয়তো এর বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করতে পারবে না। বিজ্ঞানীদের হয়তো আরও অপেক্ষা করতে হবে। ২০৪০-এর দশকে ‘হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি’ নামে একটি দৈত্যাকার টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হবে। তখন হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর আরও ভালোভাবে জানা যাবে।
বিজ্ঞানীদের টেক্সাসের ‘হ্যাবিটেবল-জোন প্ল্যানেট ফাইন্ডার’ এবং অ্যারিজোনার ‘এনইআইডি স্পেকট্রোগ্রাফ’-এর মতো শক্তিশালী যন্ত্র ব্যবহার করে এই সংকেতটি নিশ্চিত করতে হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নতুন এই গ্রহটি একটি লাল বামন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই নক্ষত্রগুলো দেখতে ছোট আর শান্ত মনে হলেও এরা খুব বদমেজাজি! প্রায়ই ভয়ঙ্কর সোলার ফ্লেয়ার বা সৌরঝড় ছড়ায়। এই তীব্র ঝড় একটা গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশে উড়িয়ে দিতে পারে
এত বাধার পরেও বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি নিয়ে খুব আশাবাদী। কারণ, অন্যান্য লাল বামন নক্ষত্রের গ্রহগুলোর তুলনায় এই গ্রহটি নিজ নক্ষত্র থেকে একটু বেশি দূরে রয়েছে। অন্য লাল বামনদের চেয়ে এটি একটু বড় এবং বেশি গরম। ফলে এর হ্যাবিটেবল জোনও একটু বাইরে।
হতে পারে, এই বাড়তি দূরত্বের কারণেই গ্রহটি তার নক্ষত্রের সেই ভয়ঙ্কর সৌরঝড় থেকে বেঁচে গেছে! যদি গ্রহটির বায়ুমণ্ডল বেশ পুরু হয় এবং এর একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র থাকে, তবে হয়তো এটি তার বায়ুমণ্ডলকে এতদিন ধরে রাখতে পেরেছে।
যুক্ররাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুভরথ মহাদেভান বলেছেন, ‘এটি প্রাণের বায়োসিগনেচার খোঁজার জন্য অন্যতম সেরা গ্রহ।’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, আপাতত পুরোটাই অনুমান। এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে।