মহাকাশ
মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ নক্ষত্র
সূর্যকে আমরা বিশাল বলেই জানি। এর ব্যাস প্রায় ১৪ লাখ কিলোমিটার। মানে সূর্য এত বড় যে এতে প্রায় ১৩ লাখ পৃথিবী অনায়াসে ঢুকে যাবে। কিন্তু মহাবিশ্বের তুলনায় সূর্য খুব একটা বড় নয়! এমন অনেক নক্ষত্র আছে, যেগুলো সূর্যের চেয়ে কয়েকশো গুণ বড়! সেরকম ১০টি নক্ষত্র নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
১০. এইচভি ৮৮৮
১ লাখ ৬৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরের এই লাল দানবটা সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৩৭৪ গুণ বড়! কিন্তু মুশকিল হলো, নক্ষত্রটা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানেন না কখন এটা সুপারনোভা হয়ে বিস্ফোরিত হবে—হতে পারে আজই, অথবা আরও কয়েক শ কোটি বছর পর। এটি সূর্যের চেয়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল!
৯. এএইচ স্করপি
স্করপিয়াস নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এই লাল দানবটি সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৪১১ গুণ বড়। তবে মজার কথা হলো, এটি সূর্যের চেয়ে অনেক ঠান্ডা। এর তাপমাত্রা ৩ হাজার ১৭৭ থেকে ৩ হাজার ৪০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সূর্যের তাপমাত্রা ৫ হাজার ২২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সূর্যের চেয়ে ঠান্ডা হলেও এই তাপমাত্রাও কিন্তু কম নয়! পৃথিবীতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলেই তো আমাদের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়!
৮. সিএম ভেলোরাম
ভেলা নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এই লাল নক্ষত্রটি সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৪১৬ গুণ বড়। তবে টেলিস্কোপ ছাড়া এটা খালি চোখে দেখা যায় না। কারণ, পৃথিবী থেকে এই নক্ষত্র প্রায় ১৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে!
৭. এইচডি ১২৪৬৩
এই নক্ষত্র সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, এটি সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৪২০ গুণ বড়। এটা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির শাখা গ্যালাক্সি লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউডে অবস্থিত। সে অনুযায়ী নক্ষত্রটি আমাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
৬. ভিওয়াই ক্যানিস মেজরিস
এটা অক্সিজেনসমৃদ্ধ সুপারজায়ান্ট নক্ষত্র। সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৪২০ গুণ বড়। এটা এত বড় যে আলোর গতিতে গেলেও এর চারপাশটা একবার ঘুরতে ৬ ঘণ্টা লাগবে! যেখানে সূর্যের চারপাশ ঘুরতে লাগে মাত্র ১৪.৫ সেকেন্ড। তবে এই ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা না করাই ভালো। কারণ এটি সূর্যের চেয়ে ৩ থেকে ৫ লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। তাপমাত্রাও ৩ হাজার ৭৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
৫. এইচডি ২৬৯৫৫১
নামটা খুব বেশি আকর্ষণীয় না হলেও আকারের জন্য হয়তো একে মনে রাখবে মানুষ। এটি সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৪৩৯ গুণ বড়! নক্ষত্রটা খুবই অস্থিতিশীল এবং জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছে। আগামী কয়েক শ কোটি বছরের মধ্যে এটা সুপারনোভা হয়ে বিস্ফোরিত হবে। মহাবিশ্বের হিসাবে কয়েক শ কোটি কিন্তু খুব কম সময়!
৪. আরএসজিসি১-এফ০১
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির স্কুটাম নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এই নক্ষত্রটি সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৪৩৬ থেকে ১ হাজার ৫৩০ গুণ বড়। এটি যদি আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে বসানো হতো, তাহলে এর পৃষ্ঠভাগ বৃহস্পতির কক্ষপথ পর্যন্ত পৌঁছে যেত!
৩. ডব্লিউওএইচ ৫১৭০
লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউডে অবস্থিত এই লাল নক্ষত্রটি সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৪৬১ গুণ বড়। সংখ্যা দেখেই তো অবাক হয়ে যেতে হয়!
২. ডব্লিউওএইচ জি৬৪
সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৫৪০ গুণ বড় এই নক্ষত্রটি যেন ধুলোমাখা। এর চারপাশে ছোট কণার একটা মোটা স্তর রয়েছে, যা প্রায় এক আলোকবর্ষ ব্যাস জুড়ে বিস্তৃত! তবে সূর্যের তুলনায় এর তাপমাত্রা অনেক কম, ৩ হাজার ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
১. ইউওয়াই স্কুটি
এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় নক্ষত্র ইউওয়াই স্কুটি। সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৭০৮ গুণ বেশি প্রশস্ত এটা! এর ব্যাসার্ধ ১.২ বিলিয়ন কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে ৯ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে স্কুটাম নক্ষত্রমণ্ডলে এটি অবস্থিত। তবে আকারে অনেক বড় হলেও আমাদের সূর্যের চেয়ে পিছিয়ে আছে তাপমাত্রায়। এটি আসলে সূর্যের চেয়ে ৪০ ভাগ ঠান্ডা, মানে তাপমাত্রা প্রায় ৩ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। কারণ, নক্ষত্রটি ইতিমধ্যে এর বেশিরভাগ হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ করে ফেলেছে। এই কম তাপমাত্রার কারণেই এটা লালচে আভা ছড়ায়।
সবচেয়ে বড় এই নক্ষত্র সম্পর্কে আরেকটা তথ্য দিই। ইউওয়াই স্কুটি খুব তরুণ নক্ষত্র, বয়স প্রায় ১০০ থেকে ২০০ কোটি বছর। শুনতে অনেক বেশি মনে হলেও নক্ষত্রের জন্য এ বয়স কমই। আমাদের সূর্যের বয়স প্রায় ৪৬০ কোটি বছর! কিন্তু ইউওয়াই স্কুটি যেহেতু খুব দ্রুত জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলে, তাই এর আয়ু শেষ হয়ে আসছে। আর মাত্র কয়েক শ কোটি বছর পর এর জীবনাবসান হবে।
ভাবছেন, এর জীবনের শেষে কী হবে? তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। হতে পারে এটা হাইপারনোভা হয়ে বিস্ফোরিত হবে (একটা শকওয়েভ তৈরি করে নতুন নক্ষত্র জন্মাতে সাহায্য করবে) অথবা এটা নিজের মধ্যেই ভেঙে পড়ে আরও উষ্ণ একটা নক্ষত্র তৈরি করবে।
তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয়। মাথায় রাখতে হবে, আমাদের পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে বড় নক্ষত্র এগুলো। কিন্তু এমন অনেক নক্ষত্র থাকতেই পারে, যেগুলো ইউওয়াই স্কুটির চেয়েও কয়েশ গুণ বড়! কিন্তু সেগুলো হয়তো আমরা এখনো খুঁজে পাইনি। দূরত্ব এবং আকার মাপা খুবই কঠিন কাজ। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় নক্ষত্র আবিষ্কার হতে পারে। তখন বদলে যেতে পারে আমাদের এই তালিকা।
