মহাকাশে নতুন রেকর্ড গড়ল আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশন
মহাকাশের হয়তো আমাদের সবচেয়ে গর্বের বস্তু আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস। মানুষের তৈরি এই বিশাল ল্যাবরেটরি গত ২৫ বছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু সব ভালো জিনিসেরই একটা শেষ আছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ঘোষণা দিয়েছে, আর মাত্র ৫ বছর পর এই বিশাল স্টেশনটিকে কক্ষপথ থেকে নামিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে আছড়ে ফেলা হবে।
কিন্তু মৃত্যুর আগে বাতি যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে, ঠিক তেমনি আইএসএস তার শেষ বয়সে এসে গড়ল এক নতুন ইতিহাস। মহাকাশ স্টেশনের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এর ৮টি ডকিং পোর্টের সব কটিই এখন হাউসফুল!
মানে আইএসএসকে যদি একটা বাড়ি ভাবেন, তাহলে হাউসফুল শব্দটা বেশ মানানসই। পৃথিবীর ৪০০ কিলোমিটার ওপরে ভাসমান একটা বাড়ি, আর তার সব কটি দরজায় নভোযান পার্ক করা আছে। আইএসএসের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।
বর্তমানে স্টেশনটির সঙ্গে যুক্ত আছে মোট ৮টি মহাকাশযান। এর মধ্যে আছে স্পেসএক্স-এর দুটি ড্রাগন ক্যাপসুল। এর মধ্যে একটি কার্গো বা মালবাহী, অন্যটি মানুষবাহী। আরও রয়েছে নর্থরপ গ্রুমম্যানের সিগনাস এক্সএল, জাপানি মহাকাশ সংস্থা জাক্সার তৈরি কার্গো শিপ এইচটিভি-এক্স১, রাশিয়ার রসকসমসের দুটি সয়ুজ নভোযান এবং দুটি প্রোগ্রেস কার্গো শিপ।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটির সঙ্গে যুক্ত আছে মোট ৮টি মহাকাশযান। এর মধ্যে আছে স্পেসএক্স-এর দুটি ড্রাগন ক্যাপসুল। এর মধ্যে একটি কার্গো বা মালবাহী, অন্যটি মানুষবাহী।
নাসার মিশন কন্ট্রোল সেন্টার থেকে রোবোটিক আর্মে করে সিগনাস এক্সএলকে তার জায়গায় বসানোর পরই এই হাউসফুল বোর্ড ঝোলানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়। মহাকাশে যেন এক বিশাল ট্রাফিক জ্যাম লেগে গেছে!
২০০০ সালের নভেম্বর থেকে মানুষ টানা এই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বাস করে আসছে। কিন্তু এর মূল কাঠামোর কিছু অংশ মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল সেই ১৯৯৮ সালে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই যন্ত্রাংশগুলোর বয়স তাদের নির্ধারিত মেয়াদের চেয়েও দুই বছর বেশি হয়ে যাবে। তখন এটি আর মানুষের থাকার জন্য নিরাপদ থাকবে না।
তাই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। ২০৩০ সালে একে অবসরে পাঠানো হবে এবং ২০৩১ সালের শুরুর দিকে এটিকে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি নির্দিষ্ট নির্জন এলাকায় ক্র্যাশ করানো হবে। সাধারণত মহাকাশযান ধ্বংস করার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরের ‘পয়েন্ট নিমো’ নামক স্থান ব্যবহার করা হয়। কারণ এই জায়গা স্থলভাগ থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। এতে মানুষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
স্টেশনটি পুরোনো হতে পারে, কিন্তু এর ভেতরের কাজ থামেনি। সম্প্রতি সয়ুজ এমএস-২৮ রকেটে করে তিনজন নতুন সদস্য স্টেশনে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন নাসার অ্যাস্ট্রোনট ক্রিস উইলিয়ামস এবং রাশিয়ার দুই কসমোনট সের্গেই কুদ-সভেচকোভ ও সের্গেই মিকায়েভ। তারা ২০২৬ সালের জুলাই পর্যন্ত মহাকাশে থাকবেন।
সাধারণত মহাকাশযান ধ্বংস করার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরের ‘পয়েন্ট নিমো’ নামক স্থান ব্যবহার করা হয়। কারণ এই জায়গা স্থলভাগ থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। এতে মানুষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
তাঁরা সেখানে বসে আঙুলের ডগায় বা পায়ের পাতায় মহাকাশের পরিবেশে রক্ত চলাচল কেমন হয়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তবে ভিড় খুব বেশি দিন থাকবে না। ৫ ডিসেম্বর তিনজন সদস্য ফিরে আসার পর স্টেশনের সদস্য সংখ্যা আবার সাতে নেমে আসবে। আর বর্তমানে যুক্ত থাকা সিগনাস কার্গো শিপটি ২০২৬ সালের মার্চ মাসে স্টেশন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন সে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে প্রায় ১১ হাজার পাউন্ড বা ৫ টন আবর্জনা। সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
আইএসএস ধ্বংস হয়ে গেলে নাসা আর নতুন কোনো সরকারি স্টেশন বানাবে না। তারা এখন মনোযোগ দিচ্ছে চাঁদে মানুষ পাঠানোর মিশন আর্টেমিসের দিকে। চাঁদের কক্ষপথে লুনার গেটওয়ে বানাতে চায় নাসা।
তাহলে পৃথিবীর কক্ষপথের কী হবে? সেই জায়গা নেবে বেসরকারি বা কমার্শিয়াল স্পেস স্টেশনগুলো। নাসার সহায়তায় ভ্যাস্ট নামে একটি কোম্পানি হ্যাভেন-১ নামে স্টেশন বানাচ্ছে। ২০২৬ সালের মে মাসে সেটি উৎক্ষেপণ করার কথা।
তবে আইএসএসের তুলনায় এগুলো হবে অনেক ছোট। বর্তমানে আইএসএসের আয়তন প্রায় ৯০০ কিউবিক মিটার। মানে প্রায় ৫ বেডরুমের একটা বাড়ির সমান। আর হ্যাভেন-১-এর আয়তন হবে মাত্র ৪৫ কিউবিক মিটার।