‘মৃত্যু কামনাকারী’ অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান মিলেছে

মহাকাশে এক অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্রহটি যেন নিজেই নিজের মৃত্যু কামনা করছে। শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনা সত্যি। এই গ্রহের নাম এইচপি ৬৭৫২২বি।

গ্রহটি বৃহস্পতি গ্রহের মতো বড়। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আগামী দশ কোটি বছরে এই গ্রহ ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাবে। শেষে আকার হবে নেপচুনের মতো। তারপর হয়তো একদিন একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে মহাকাশ থেকে।

কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? কোনো ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর কি এর জন্য দায়ী? আসলে তা নয়, ব্যাপারটা আরও মজার। এই গ্রহ তার নিজের নক্ষত্রের সঙ্গে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ। এই ঘনিষ্ঠতাই ওটার মৃত্যুর কারণ। সেটাকেই খানিকটা কাব্য করে ইংরেজিতে বলা হচ্ছে ‘ডেথ উইশ’ প্ল্যানেট। বাংলায় যেটাকে আমরা বলছি ‘মৃত্যু কামনাকারী’।

নেদারল্যান্ডসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী একাতেরিনা ইলিন বলেছেন, ‘এমন ঘটনা আমি আগে দেখিনি। এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়।’ ইলিন ও তাঁর দল এই আবিষ্কারের খবর গত ২ জুলাই নেচার সাময়িকীতে প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞানীরা এই গ্রহ নিয়ে অনেক দিন ধরে গবেষণা করছেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তাঁরা এটি দেখেছেন। টেস নামে একটা স্যাটেলাইটও পর্যবেক্ষণ করেছে গ্রহটিকে।

গ্রহটির মূল নক্ষত্রের নাম এইচপি ৬৭৫২২। আমাদের সূর্যের চেয়ে একটু বড়। তবে নক্ষত্রটির বয়স খুব কম, মাত্র দেড় কোটি বছর। আমাদের সূর্যের বয়স প্রায় সাড়ে চার শ কোটি বছ।।

আরও পড়ুন

তরুণ এই নক্ষত্রটি খুব সক্রিয়। এই নক্ষত্রে প্রায়ই শক্তিশালী অগ্নিঝড় দেখা হয়। নক্ষত্রটির দুটি গ্রহ আছে। এর মধ্যে আমাদের আজকের আলোচিত এইচপি ৬৭৫২২বি গ্রহটি নক্ষত্রের খুব কাছে থেকে ঘোরে। মাত্র সাত দিনে একবার নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরে আসে গ্রহটি। মানে ওই গ্রহে বছর হয় মাত্র ৭ দিনে। 

নেদারল্যান্ডসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী একাতেরিনা ইলিন বলেছেন, ‘এমন ঘটনা আমি আগে দেখিনি। এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়।’ ইলিন ও তাঁর দল এই আবিষ্কারের খবর গত ২ জুলাই নেচার সাময়িকীতে প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞানীরা এ জন্য ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার CHEOPS (CHaracterising ExOPlanet Satellite) নামে একটি স্যাটেলাইট ব্যবহার করেছেন। এই স্যাটেলাইট নির্দিষ্ট কোনো নক্ষত্রকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে পারে। স্যাটেলাইটটি এই গ্রহে অনেকবার অগ্নিঝড় রেকর্ড করেছে।

বিজ্ঞানীদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ। তাঁরা এই গ্রহ নিয়ে আরও গবেষণা করতে চান। প্রতিটি অগ্নিঝড় থেকে ঠিক কী ধরনের শক্তি বের হয়, জানতে চান তাও। এ ছাড়া মহাকাশে এমন আরও গ্রহ আছে কি না, সেটাও খুঁজে বের করতে চান তাঁরা।

সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো, গ্রহটি যখন নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায়, তখনই এই অগ্নিঝড় হয়। মোট ১৫টি অগ্নিঝড়ের প্রায় সবগুলোই নক্ষত্রের সামনে দিয়ে আবর্তন করার সময় ঘটেছে।

এতে প্রমাণ হয়, গ্রহ আর নক্ষত্রের মধ্যে কোনো একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু সম্পর্ক থাকা কীভাবে সম্ভব? গবেষণায় দেখা গেছে, এই গ্রহ আর নক্ষত্রের মধ্যে চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। গ্রহটি যখন নক্ষত্রের চারদিকে ঘোরে, তখন শক্তি সংগ্রহ করে। এই শক্তি নক্ষত্রের চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে যায়। তখন বিশাল অগ্নিঝড় সৃষ্টি হয়। এই অগ্নিঝড় থেকে যে রশ্মি বের হয়, তার বেশির ভাগই গ্রহটির দিকে ফিরে আসে।

আরও পড়ুন

গ্রহটি নিরাপদ দূরত্বে থাকলে যে পরিমাণ বিকিরণ পেত, এখন তার চেয়ে ছয়গুণ বেশি পাচ্ছে। এই বিকিরণ ধীরে ধীরে গ্রহটির বায়ুমণ্ডল নষ্ট করে দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া আরও দশ কোটি বছর চলতে থাকবে। ততদিনে একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে গ্রহটির বায়ুমণ্ডল। গ্রহটি ছোট হতে হতে একদিন হয়তো বিলীন হয়ে যাবে।

বিজ্ঞানীরা এই গ্রহ নিয়ে অনেক দিন ধরে গবেষণা করছেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তাঁরা এটি দেখেছেন। টেস নামে একটা স্যাটেলাইটও পর্যবেক্ষণ করেছে গ্রহটিকে।

তবে বিজ্ঞানীদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ। তাঁরা এই গ্রহ নিয়ে আরও গবেষণা করতে চান। প্রতিটি অগ্নিঝড় থেকে ঠিক কী ধরনের শক্তি বের হয়, জানতে চান তাও। এ ছাড়া মহাকাশে এমন আরও গ্রহ আছে কি না, সেটাও খুঁজে বের করতে চান তাঁরা। হয়তো আরও অনেক গ্রহ আছে, যারা এভাবে নিজেদের মৃত্যু ডেকে আনছে।

এই আবিষ্কার আমাদের মহাকাশ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে। আগে কেউ ভাবতেই পারেনি যে কোনো গ্রহ এভাবে নিজের নক্ষত্রের সঙ্গে মিলে নিজের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। কিন্তু প্রকৃতি সত্যিই অদ্ভুত। এখানে অসম্ভব বলে কিছু নেই।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, গণিত বিভাগ, পদ্মা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শরীয়তপুর

সূত্র: পপুলার সায়েন্স

আরও পড়ুন