অবশেষে যাত্রা করল আর্টেমিস ১

প্রায় আড়াই মাস প্রতীক্ষার পর অবশেষে চাঁদের পথে ছুটল আর্টেমিস ১। বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের প্যাড ৩৯বি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় নভোযানটি। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০ বছর পর চন্দ্রাভিযান শুরু করল মানুষ।

প্রায় আড়াই মাস প্রতীক্ষার পর অবশেষে চাঁদের পথে ছুটল আর্টেমিস ১। আর্টেমিস প্রোগ্রামের প্রথম নভোযান এটি। বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের প্যাড ৩৯বি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় নভোযানটি। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০ বছর পর চন্দ্রাভিযান শুরু করল মানুষ।

আর্টেমিস ১-কে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস)। এই মেগারকেটের এটিই প্রথম পরীক্ষামূলক মহাকাশযাত্রা। এখন পর্যন্ত মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট এটি। এর দৈর্ঘ্য ৩২২ ফুট। আর্টেমিস ১-কে সঙ্গে নিয়ে এসএলএসের এই অভিযান আসলে মানুষবিহীন। অর্থাৎ এতে কোনো নভোচারী নেই। তবে চারজন নভোচারী যাওয়ার মতো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ওরিয়ন নামে আর্টেমিসের মাথায় বসানো ‘ফেয়ারিং’ বা ভারবাহী অংশটিতে। আপাতত নভোচারীদের পরিবর্তে আর্টেমিস ১ নভোযানে পাঠানো হয়েছে ৩টি ম্যানিকুইন বা ডল পুতুল।

আর্টেমিস ১-এর বিভিন্ন অংশ
কাজী আকাশ
৪২ দিন চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে ওরিয়ন স্পেসক্রাফটের ক্রু মডিউল আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে।

ডল পুতুল পাঠানোর পেছনেও কারণ আছে। ভবিষ্যতে আর্টেমিস ৩ মিশনে মানুষ এই মডিউল ব্যবহার করে চাঁদে যাবে। তখন ওরিয়ন মডিউলে কোনো সমস্যার সম্মুখিন হবে কি না, তা যাচাই করে দেখতে চায় নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি-ইসা। মানবদেহের কম্পনের মাত্রা ও মহাকাশে বিকিরণের প্রভাব পরিমাপ করার জন্য ওরিয়ন স্পেসক্রাফটে পাঠানো হয় এ ডল পুতুল। 

৪২ দিন চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে ওরিয়ন স্পেসক্রাফটের ক্রু মডিউল আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে। ওরিয়নের মূল অংশ বা সার্ভিস মডিউল থেকে যাবে পৃথিবীর কক্ষপথে। ভবিষ্যতে চন্দ্রভিযানেও ব্যবহার করা যাবে এই মডিউল।

আরও পড়ুন
আর্টেমিস ১ নভোযান

নাসার নেতৃত্বে পৃথিবীর ২১টি দেশের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে এ চন্দ্রাভিযান। আর্টেমিসের মূল লক্ষ্য, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করা এবং নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানচর্চায় অনুপ্রাণিত করা। আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে পৃথিবী, চাঁদ এবং আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

এর আগে, বেশ কয়েকবার স্থগিত হয়েছে আর্টেমিস ১-এর উৎক্ষেপণ। প্রথমবার ২৯ আগস্ট উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ছিল এ নভোযানের। কিন্তু আর্টেমিস ১ নভোযানকে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) নামের যে মেগারকেটটি বয়ে নিয়ে গেছে, তার আরএস-২৫ ইঞ্জিনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়। উৎক্ষেপণের নতুন তারিখ ঠিক করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর। তখন আবার হাইড্রোজেনের ট্যাংকে সামান্য ছিদ্র দেখা যায়। তাই সেবারও নভোযানটির উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়। নতুনভাবে ৫ সেপ্টেম্বর নভোযানটি উৎক্ষেপণের তারিখ ঠিক করে নাসা। এরপরে আবার নাসা ঘোষণা দেয়, তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। সবকিছু ফের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চায়। এই সিদ্ধান্তে আরেকদফা পিছিয়ে যায় আর্টেমিস ১ উৎক্ষেপণ। অবশেষে বুধবার সেই উৎক্ষেপণ করা হলো সফলভাবে। চাঁদের উদ্দেশ্যে ছুটল আর্টেমিস ১।

এসএলএস-কে একটু ভালো ভাবে জেনে নিন
কাজী আকাশ

এই মিশনের দ্বিতীয় নভোযান আর্টেমিস ২ উৎক্ষেপণ করা হবে ২০২৪ সালে। ওই স্পেসক্রাফটে থাকবেন নভোচারীরা। তাঁদের চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে। এরপর মিশনের চূড়ান্ত নভোযান, আর্টেমিস ৩ উৎক্ষেপণ করা হবে ২০২৫ সালে। ওই মিশনেই প্রথম কোনো নারী পা রাখবেন চাঁদে। একজন নারী নভোচারী যাবেন, এটুকু নিশ্চিত করলেও কতজন পুরুষ নভোচারী ওই মিশনে যাবেন, তা এখনো নিশ্চিত করেনি নাসা। তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, এই নভোচারীরা পা রাখবেন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। ইতিমধ্যে ২০২৫ সালে চাঁদে অবতরণের সম্ভাব্য ১৩টি অঞ্চল শনাক্ত করেছে নাসা। তবে আর্টেমিস ১-এর সফলতার ওপরই নির্ভর করছে আর্টেমিস ২ ও ৩-এর ভাগ্য।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: নাসা ও স্পেস ডট কম