মোবাইল ফোন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর নানাবিধ কাজ আছে। তবে আপনি চাইলে একে দোভাষীর কাজেও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনি হয়তো ইংরেজি, স্প্যানিশ বা এরকম ভিনদেশি কারো সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন। তাঁর ভাষাটা হয়তো ভালো আয়ত্তে নেই। ফলে সেই বিদেশি বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একটু বিপত্তিতেই পড়তে হয়। এমন সমস্যায় আমাদের অনেককেই পড়তে হয়েছে। তবে এখন মোবাইলের একটা অ্যাপ আপনার সেই দুশ্চিন্তা দূর করতে পারে। মোবাইলে ইন্টারনেট থাকলেই আর কষ্ট করে শব্দ লিখে অনুবাদ করতে হবে না। শুধু ফোনটা সামনে রেখে কথা বললেই বাকি কাজটা করে দেবে অ্যাপ। সেরকম কয়েকটা অ্যাপ নিয়েই এ আলোচনা।
গুগল ট্রান্সলেটর
এই অ্যাপ সাধারণত সব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলেই থাকে। চাইলেই ব্যবহার করতে পারবেন ফ্রিতে। অ্যাপে ঢুকলেই সাধারণভাবে দেখা যাবে দুটি ভাষা। একটা হলো, যে ভাষা থেকে আপনি অনুবাদ করবেন; আর অন্যটা—যে ভাষায় অনুবাদ করবেন। যেমন আপনি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করবেন। তাহলে বাঁ পাশের ডিটেক্ট ল্যাঙ্গুয়েজে ইংরেজি সিলেক্ট করুন। আর ডান পাশে সিলেক্ট করবেন বাংলা। তাহলে ইংরেজি লিখলে তা বাংলায় রূপান্তর হবে।
কিন্তু লিখে অনুবাদ করতে না চাইলে মুখে বলেও কাজটা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মাইক্রোফোন আইকনে চাপ দিয়ে বললেই হবে। আর যদি দুজন পাশাপাশি বসে কথোপকথন অনুবাদ করতে চান, তাহলে যেতে হবে কনভার্সেশন মোডে। এখানে দুটো মাইক্রোফোন থাকবে। একটা আপনার জন্য, অন্যটা যার সঙ্গে কথা বলছেন, তার জন্য। প্রথমে আপনি বলবেন, অ্যাপ তা অনুবাদ করে দেখাবে। চাইলে পড়েও শোনাবে। এরপর অন্যজন মাইক্রোফোনে বলবে, এবং সেটাও অনুবাদ হবে। এ ছাড়া মাঝখানে থাকা স্টার আইকনে চাপ দিলে একটা শেয়ারড মাইক্রোফোন মোড পাওয়া যাবে। এটায় চাপ দিলে একটাই বাটন ব্যবহার করে দুজনে কথা বলতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা চাইলে ওপরের সেটিংস আইকনে গিয়ে ‘অটো প্লেব্যাক’ চালু করে নিতে পারেন। এতে অনুবাদের পর নিজে থেকেই সেটা পড়ে শোনাবে।
অ্যান্ড্রয়েডের আরেকটা সুবিধা হলো, স্ক্রিনের ওপর-নিচে দুই ভাষা উল্টোভাবে দেখানো যায়। এতে ফোনটা মাঝে রেখে দুজনেই বুঝতে পারবেন, কে কী বলছেন। তবে এই রিয়েল-টাইম কথোপকথনের জন্য ইন্টারনেট লাগবে। অফলাইনে শুধু সাধারণ অনুবাদ করা যাবে।
অ্যাপল ট্রান্সলেটর
আইফোনেও চাইলে গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করতে পারেন। আবার অ্যাপেলের নিজস্ব ট্রান্সলেটর অ্যাপও আছে। এখানে কনভার্সেশন মোডে গিয়ে স্ক্রিনের নিচে মাইক্রোফোনে চাপ দিয়ে কথা বলা যাবে। আর অ্যাপ নিজে থেকেই তা অনুবাদ করে দেখাবে। চাইলে প্লে বাটন চেপে তা শুনতেও পারবেন। বারবার মাইক্রোফোনে চাপ না দিয়ে চাইলে থ্রি-ডট মেনু থেকে ‘প্লে ট্রান্সলেশন’ চালু করে নিতে পারেন। এতে কথা বলা শেষ হলেই অ্যাপটা অনুবাদ পড়ে শোনাবে। আরও একটি আকর্ষণীয় অপশন হলো ‘ভিউ’। এখান থেকে আপনি ঠিক করে নিতে পারবেন, দুজন কি পাশাপাশি বসে আছেন নাকি মুখোমুখি। স্ক্রিন তখন সেই অনুযায়ী বদলে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, অ্যাপল ট্রান্সলেট কনভার্সন মোড অফলাইনেও কাজ করে। শুধু আগে থেকে ভাষাগুলো ডাউনলোড করে রাখতে হবে।
আইট্রান্সলেট
এই অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস—দুই প্ল্যাটফর্মেই আছে। কিছু ফিচার ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায়। তবে রিয়েল-টাইম ভয়েস অনুবাদের জন্য প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়। এ জন্য সপ্তাহে খরচ করতে হবে প্রায় ৮ ডলার বা ৯০০ টাকার বেশি। বছরে প্রায় ১২ হাজার টাকা। তবে সাত দিনের ফ্রি ট্রায়াল পাবেন এই অ্যাপে।
অ্যাপটি চালু করে ভাষা বেছে নিয়ে ভয়েস অপশনে গেলে স্ক্রিন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। দুই পাশে দেখা যাবে দুটি ভাষা। দুজন আলাদা মাইক্রোফোন আইকনে চাপ দিয়ে কথা বলবেন, আর বাকিটা অ্যাপই অনুবাদ করে শুনিয়ে দেবে।
এই অ্যাপেরও একটা বড় সুবিধা হলো অফলাইন মোড। ওপরের এয়ারপ্লেন আইকনে চাপ দিলে ভাষাগুলো ডাউনলোড করে রাখা যায়। একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে অনুবাদ করতে আর ইন্টারনেটের দরকার পড়বে না। তবে বছরে এত টাকা খরচ না করে চাইলে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করেই ফ্রিতে কাজটা করতে পারেন। শুধু ইন্টারনেট চালু থাকতে হবে।