অনেকেই সামাজিক ভীতিতে ভোগেন। এই সমস্যাটা কমবেশি অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এটা এক ধরনের মানসিক ভয় বা দুশ্চিন্তা। এই সমস্যায় যারা ভোগেন, তাঁরা মনে করেন অন্যরা তাঁকে বিচার করছে, খারাপ ভাবছে বা হাসাহাসি করছে। এই ভয়ের কারণে অনেকে বেশি মানুষের সামনে কথা বলতে পারেন না। ক্লাসে প্রশ্ন করতে ভয় পাওয়া, দোকানে কিছু কিনতে গিয়ে বলতে না পারা কিংবা নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হতে না পারা—এগুলো সামাজিক ভীতির লক্ষণ।
এই সমস্যায় ভুক্তভোগীরা সাধারণত চিকিৎসাও নেন না। কারণ, তাঁদের কাছে মনেই হয় না যে এর চিকিৎসা নেওয়া দরকার। তবে এই সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এমন মোবাইল গেম তৈরি করেছেন, যা খেললে মানুষের মন খারাপ বা ভীতিকর চিন্তা দূর হয়। ভালো জিনিসের দিকে মনোযোগী হতে সাহায্য করবে এই গেম। এ বিষয়ক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স ডাইরেক্ট জার্নালে। বিস্তারিত জানতে এই লিংক থেকে মূল জার্নাল পড়ুন।
এই গেমে খেলোয়াড়দেরকে হাসিখুশি মুখের ছবি আর রাগান্বিত মুখের ছবি দেখানো হয়। যারা হাসিখুশি মুখের ছবিতে দ্রুত ক্লিক করতে পারেন, তাঁরা পয়েন্ট পান।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ট্রেসি ডেনিস-তিউয়ারি ও তাঁর দল এই গেমটা বানিয়েছে। গেমের নাম স্টারস্টারটার (StarStater)। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে কয়েকবার এই গেম খেলেছেন, তাঁদের সামাজিক ভীতির মাত্রা অনেক কমে গেছে। অথচ যারা একই রকম দেখতে অন্য একটা গেম খেলেছেন, তাঁদের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
সিটি ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ট্রেসি ডেনিস-তিউয়ারি বলছেন, ‘এরকম ছোট আর খেলার মতো থেরাপিগুলো মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, সামাজিক ভীতির জন্য অনেকে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অথচ এটা খুব সাধারণ একটা সমস্যা। মানুষ সামাজিক পরিস্থিতিতে অন্যদের মাধ্যমে সমালোচিত হওয়ার ভয় পায়। ফলে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনও ব্যাহত হয়।’
এই গেমে খেলোয়াড়দেরকে হাসিখুশি মুখের ছবি আর রাগান্বিত মুখের ছবি দেখানো হয়। যারা হাসিখুশি মুখের ছবিতে দ্রুত ক্লিক করতে পারেন, তাঁরা পয়েন্ট পান।
এই গেমটা পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা ২২-৬৪ বছর বয়সী ১০৪ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়েছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের সামাজিক ভীতির মাত্রা অনেক বেশি ছিল। এরমধ্যে ৫২ জন আসল স্টারস্টার্টার গেম খেলেছেন, বাকি ৫২ জন খেলেছেন একই রকম দেখতে অন্য একটা গেম। তবে কারা আসলটা বা নকলটা খেলেছেন, তা আগে থেকে জানানো হয়নি। নকল গেমে মাঝেমধ্যে রাগান্বিত মুখের ছবিতে ক্লিক করলেও পাওয়া যেত পয়েন্ট।
তবে আপনি চাইলে এখনই গেমটা খেলতে পারবেন না। এটা আরও ডেভেলপ করা বাকি। কিন্তু মেইলের মাধ্যমে আর্লি অ্যাকসেস পেতে পারেন। অবশ্য কিছুদিন পরে এই গেম সবার জন্য উন্মোক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতি সপ্তাহে ১২ মিনিট করে চারবার গেমটা খেলেছেন অংশগ্রহণকারীরা। এভাবে টানা চার সপ্তাহ খেলেছেন। এরপর দেখা যায়, যারা আসল গেমটা খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে তিন গুণেরও বেশি মানুষের সামাজিক ভীতির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এমনকি পুরো মাস জুড়েই তাদের উন্নতি দেখা গেছে। অন্যদিকে, যারা নকল গেম খেলেছেন, তাঁদের প্রথম দুই সপ্তাহে সামান্য উন্নতি হলেও তারপর আর কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তবে আপনি চাইলে এখনই গেমটা খেলতে পারবেন না। এটা আরও ডেভেলপ করা বাকি। কিন্তু মেইলের মাধ্যমে আর্লি অ্যাকসেস পেতে পারেন। অবশ্য কিছুদিন পরে এই গেম সবার জন্য উন্মোক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ফ্রিতে গেমটা খেলা যাবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত করেনি। গেমের আর্লি অ্যাকসেস পেতে দেখুন এই লিংক।
সুতরাং, যারা সামাজিক ভীতির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই মোবাইল গেম হতে পারে নতুন আশার আলো।
