দেহঘড়ি
মনের কথা বলে দেবে যন্ত্র
বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এমন এক যন্ত্র বানিয়েছেন, যার সাহায্যে একজন বোবা মানুষও তার মনের কথা বলতে পারবে!
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নতুন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে পক্ষাঘাতে (প্যারালাইসিস) আক্রান্ত ব্যক্তিরাও কথা বলতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে এবং সানফ্রান্সিকোর বিজ্ঞানীরা এই নতুন যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। নেচার নিউরোসায়েন্স জার্নালে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
যন্ত্রটা বসানো হবে মানুষের মাথায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে মানুষের মনের কথা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ধরে ফেলতে পারবে এই যন্ত্র। তারপর তা শোনা যাবে স্পিকারে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কোনো মানুষের মনের কথা শোনা যাবে। এর আগে বিজ্ঞানীরা এত তাড়াতাড়ি মনের কথা বের করে শোনাতে পারেননি। যন্ত্রটার নাম নিউরোপ্রোস্থেসিস।
ভাবতে পারেন, এআই কীভাবে এখানে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা অ্যানকে একটা স্ক্রিনে কিছু বাক্য দেখিয়ে মনে মনে সেগুলো বলতে বলেন। তখন তার মস্তিষ্কের সংকেতগুলো রেকর্ড করা হয়।
বিজ্ঞানীরা প্রথমে একটা ছোট অপারেশনের মাধ্যমে কিছু ছোট তার (ইলেকট্রোড) মানুষের মস্তিষ্কের ওপরের দিকে বসিয়ে দেন। এই তারগুলো নিউরোপ্রোস্থেসিস যন্ত্রের অংশ। মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশ কথা বলার জন্য জরুরি, এই তারগুলো মস্তিষ্কের সেই জায়গার সংকেত ধরতে পারে। তারপর একটা বুদ্ধিমান কম্পিউটার (এআই) সেই সংকেতগুলোকে পড়ে বুঝতে পারে মানুষটা আসলে কী বলতে চাইছে। সেই কথা পরে স্পিকারের সাহায্যে শোনা যাবে। তবে আওয়াজ কিন্তু রোবটের মতো শোনাবে না, মনে হবে একজন সত্যিকারের মানুষ কথা বলছে।
এই গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী গোপালা আনুমানচিপাল্লি বলেছেন, তাঁদের এই নতুন পদ্ধতিটা অনেকটা অ্যালেক্সা বা সিরির মতো দ্রুত কথা বুঝতে পারে।
এই প্রযুক্তি প্রথম ব্যবহার করেছেন অ্যান নামের এক নারী। ২০০৫ সালে তার স্ট্রোক হয়েছিল। এরপর তিনি প্যারালাইজড হয়ে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তিনি বিজ্ঞানীদের অনুমতি দিয়েছেন তাঁর মস্তিষ্কে ২৫৩টা ছোট তার বসাতে। এই তারগুলোর বসানো হয়েছে মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্সে। মস্তিষ্কের এই অংশটা আমাদের কথা বলা নিয়ন্ত্রণ করে।
ভাবতে পারেন, এআই কীভাবে এখানে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা অ্যানকে একটা স্ক্রিনে কিছু বাক্য দেখিয়ে মনে মনে সেগুলো বলতে বলেন। তখন তার মস্তিষ্কের সংকেতগুলো রেকর্ড করা হয়। এরপর সেই সংকেতগুলোর সঙ্গে তিনি মনে মনে যে কথাগুলো বলছিলেন, সেগুলো মিলিয়ে এআইকে শেখানো হয়।
এটা সত্যিই একটা দারুণ আবিষ্কার। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত সব দিক থেকে আরও উন্নতি করতে পারব। এআই কীভাবে আরও ভালো ও দ্রুত কথা তৈরি করতে পারে, তা উন্নত করাই আমাদের চেষ্টা থাকবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই সিস্টেম প্রতি ৮০ মিলি সেকেন্ডে (এক সেকেন্ডের চেয়েও কম সময়ে) মস্তিষ্কের সংকেত পড়তে পারে এবং প্রায় ৩ সেকেন্ডের মধ্যে সেই কথা শোনাতে পারে। এটা স্বাভাবিকভাবে কথা বলার চেয়ে একটু ধীরে হলেও আগের যন্ত্রের চেয়ে অনেক দ্রুত। আগের যন্ত্রটা পুরো বাক্য শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করত এবং প্রায় ৮ সেকেন্ড সময় নিত। ২০২৩ সালে এর আগের ভার্সন প্রকাশ করেছিলেন গবেষকেরা।
নতুন এই সিস্টেমটা ছোট ছোট সংকেতগুলোও বুঝতে পারে। তাই পুরো বাক্যের জন্য অপেক্ষা না করে প্রতিটা শব্দ আলাদা বলতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই নতুন উদ্ভাবন বোবা মানুষদের জন্য আরও স্বাভাবিকভাবে কথা বলার সুযোগ করে দেবে।
গবেষকেরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেকেই কথা বলতে পারবে। যাঁরা এখন একেবারেই কথা বলতে পারেন না, তাঁরাও কথা বলতে পারবেন। ফলে তাঁরা নতুন জীবন শুরু করতে পারবে। তবে কাজ অনেকটা বাকি আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যালগরিদমকে আরও উন্নত করতে হবে, যাতে ভাষা আরও প্রাকৃতিক শোনায় এবং সময় কম লাগে।
নতুন এই সিস্টেমটা ছোট ছোট সংকেতগুলোও বুঝতে পারে। তাই পুরো বাক্যের জন্য অপেক্ষা না করে প্রতিটা শব্দ আলাদা বলতে পারে।
এই গবেষণার আরেক বিজ্ঞানী চেওল জুন চো। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই একটা দারুণ আবিষ্কার। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত সব দিক থেকে আরও উন্নতি করতে পারব। এআই কীভাবে আরও ভালো ও দ্রুত কথা তৈরি করতে পারে, তা উন্নত করাই আমাদের চেষ্টা থাকবে।’
এমন প্রযুক্তি কল্পগল্পে পড়লেও এখন বাস্তব। ভবিষ্যতে হয়তো শুধু ভাবলেই কথা বলা যাবে। মুখ নাড়িয়েও বলতে হবে, টাইপও করতে হবে না!