আঙুলের ছাপের খুঁটিনাটি

আমাদের প্রত্যেকের, এমনকি যমজ ভাইবোনের আঙুলের ছাপও ভিন্ন ও অনন্য—এটা কি সত্যি? কিন্তু কীভাবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

আমাদের প্রত্যেকের, এমনকি যমজ ভাইবোনের আঙুলের ছাপও ভিন্ন ও অনন্য—এটা কি সত্যি? কিন্তু কীভাবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

আমরা জানি, প্রত্যেকের আঙুলের ছাপেই রয়েছে ভিন্নতা। সে হিসেবে পৃথিবীতে রয়েছে কোটি কোটি ভিন্ন ও অনন্য আঙুলের ছাপ। এমনকি যমজ সন্তান, যাদের শরীরে প্রায় ১০০ শতাংশ জিনই অভিন্ন, তাদেরও আঙুলের ছাপ হতে পারে ভিন্ন। সে কারণে সারা বিশ্বে আইনগত কাজে ও আদালতে মানুষের আঙুলের ছাপকে শক্ত প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

আঙুলের ছাপের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করার প্রয়োজন হলে তদন্তকারী প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তির আঙুলের ছাপের ধরন নির্ধারণ করেন। কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে আঙুলের ছাপে তিনটি প্রধান ধরন লক্ষ করা যায়—ধনুকাকৃতি কাঠামো (আর্ক), লুপ ও ঘূর্ণি।

আরও পড়ুন

আঙুলের ছাপের সাধারণ আকৃতি আমাদের মধ্যে থাকা জিন দিয়ে নির্ধারিত হয়। তবে এমব্রায়োনিক বা ভ্রূণ পর্যায়ে এটি গঠিত হয় আরও সূক্ষ্মভাবে। এ সময় এর গঠন থাকে অবিন্যস্ত। গর্ভাবস্থার তৃতীয় ও চতুর্থ মাসে শরীরে থাকা তরলের চাপ আঙুলের ত্বককে একধরনের ‘কুশন’-এ প্রসারিত করে। এই চাপ যখন কমে যায়, তখন ত্বকে কিছু ভাঁজের সৃষ্টি হয়, যা ধনুকাকৃতি কাঠামো (আর্ক), লুপ ও ঘূর্ণির মতো প্যাটার্ন গঠন করে। এ তিন জিনিসের কারণেই মূলত আঙুল থেকে আঙুলে এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছাপের পার্থক্য তৈরি হয়। আর এভাবেই গঠিত হয় ভিন্ন ও অনন্য প্যাটার্নের একেকটি আঙুলের ছাপ।

আচ্ছা, এ পৃথিবীর প্রতিটি আঙুলের ছাপ কি সত্যিই ভিন্ন ও অনন্য? এর পেছনে সত্যতা কতটুকু? আমাদের বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্ন নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের মতে, ৬৪ বিলিয়ন আঙুলের ছাপের মধ্যে মাত্র একটি ছাপ মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন আঙুলের ছাপের রেকর্ড রয়েছে; তার মানে সেখানে একটি সদৃশ সেট খুঁজে পেতে প্রায় ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন বছর সময় লেগে যেতে পারে।

আরও পড়ুন

যে তিনটি প্রধান প্যাটার্ন আমাদের প্রত্যেকের আঙুলের ছাপকে আলাদা করে

তিন ধরনের প্যাটার্নের বিভিন্ন সম্ভাব্য সংমিশ্রণ ও তাদের সূক্ষ্ম বিবরণ প্রতিটি আঙুলের ছাপকে অনন্য করে তোলে। আর এভাবেই তৈরি হয় আমাদের অনন্য ও নির্ভরযোগ্য পরিচয়। পরিসংখ্যানগত সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, দুটি আঙুলের ছাপ একই হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

লুপগুলো খুব ঘন হয়

লুপ প্যাটার্নটি আঙুলের এক পাশ থেকে শুরু হয়ে ঘুরে এসে আবার একই দিক দিয়ে শেষ হয়। আঙুলের ছাপের প্রায় ৬০ শতাংশ লুপ, যার কারণে এটিকে আঙুলের ছাপের সবচেয়ে সাধারণ বৈচিত্র্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দ্বিতীয় সাধারণ বৈচিত্র ঘূর্ণি

আঙুলের সূক্ষ্ম রেখাগুলোর মধ্যে অন্তত একটি রেখা গোলাকৃতি ধারণ করে বৃত্তের সৃষ্টি করে। এটিই ঘূর্ণি প্যাটার্ন। আঙুলের ছাপের প্রায় ৩৫ শতাংশজুড়ে এই প্যাটার্ন থাকায় এটিকে দ্বিতীয় সাধারণ বৈচিত্র্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিরল ধনুকাকৃতি কাঠামো (আর্ক)

ধনুকাকৃতি কাঠামো (আর্ক) প্যাটার্নটি সবচেয়ে বিরল। আঙুলের ডগাজুড়ে চলমান রেখা দিয়ে এটিকে চিহ্নিত করা হয়। আর্কগুলো সব আঙুলের ছাপের প্রায় ৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: সায়েন্স ইলাস্ট্রেটেড ম্যাগাজিন

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার সেপ্টেম্বর ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন