প্রযুক্তি
স্টারলিংক: নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের পথে
গত ২০ মে, মঙ্গলবার বাংলাদেশে দুটি প্যাকেজ চালু করে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালিত স্টারলিংক। বিশেষ এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে? কীরকম খরচ পড়বে এর জন্য? বিস্তারিত জেনে নিন...
গত বছর ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শুরুর দিকটায় সারা দেশে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেট আংশিক বা সামগ্রিক বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ১০-১১ দিন ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কয়েক মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি ছোট ছোট ব্যবসা ও ব্যক্তিপর্যায়ে আইটি পেশাজীবীদেরও বেশ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বড় পোশাক কারখানা ও ছোট-মাঝারি ব্যবসাগুলো সময়মতো ডেলিভারি ও বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় অর্ডার হারিয়েছে। আইটি পেশায় নিযুক্ত প্রফেশনালদের হারাতে হয়েছে চাকরি বা ক্লায়েন্ট ও ক্লায়েন্টের অর্ডার। পাশাপাশি মাথা পেতে নিতে হয়েছে নেগেটিভ রিভিউ।
এত বড় একটা ধাক্কা বাংলাদেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে সামলে উঠতে হবে, তা কোনো দিন কল্পনাও করেননি কেউ। তাই এ রকম পরিস্থিতিতে ব্যাকআপ জোগান দেওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তিও ছিল না। ফলে অনেককেই নিজের ব্যবসা, চাকরি ও কাজের খাতিরে ভারত বা নেপালে পাড়ি জমাতে হয়েছিল ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের দিনগুলোয়।
স্টারলিংক হলো স্পেসএক্স পরিচালিত এক বিশেষ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, বিশেষ করে অবকাঠামোগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া।
এ রকম ভঙ্গুর ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অন্ধ-অনুগত ইন্টারনেট অবকাঠামো নিয়ে তাই ভাবতে বাধ্য হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবা স্টারলিংক বাংলাদেশে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান সরকার।
স্যাটেলাইটনির্ভর এ ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সাধারণ ব্রডব্যান্ডের মতো তারের ওপর এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মতো ছোট ছোট টাওয়ারের মতো অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল নয়। এ ছাড়া দেশের সব ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল ইন্টারনেট যেভাবে বিটিআরসির নির্ধারিত ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট এবং দেশে অবস্থিত বিভিন্ন সার্ভারের ওপর নির্ভরশীল, স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট ততটা অবকাঠামোগতভাবে ভঙ্গুর নয়। চাইলে প্রচলিত সার্ভার বা এক্সচেঞ্জ পয়েন্টগুলো বন্ধ করার মাধ্যমে ব্যক্তিপর্যায়ে ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ নেই।
গত ফেব্রুয়ারিতেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করার বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি মাস্ককে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং ৯০ দিনের মধ্যে এ দেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর আহ্বান জানান। ফলে স্টারলিংকের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন কোম্পানি, বিশেষ করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশের অভ্যন্তরে গ্রাউন্ড আর্থস্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেন। গত ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট চালু হয় দেশে।
স্টারলিংক কী
স্টারলিংক হলো স্পেসএক্স পরিচালিত এক বিশেষ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, বিশেষ করে অবকাঠামোগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া। উচ্চ কক্ষপথে (জিওস্টেশনারি অরবিট) থাকা স্যাটেলাইটের তুলনায় স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর খুব কাছাকাছি—লো আর্থ অরবিটে (LEO) থাকে। বর্তমানে স্টারলিংকের এ রকম প্রায় ৭ হাজার লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট আছে। এ কারণে স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে কম দূরত্ব অতিক্রম করে সিগন্যাল পাঠাতে পারে। ফলে প্রচলিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম বিলম্বে ও উচ্চগতির সেবা দেওয়া সম্ভব হয়।
স্টারলিংক কীভাবে কাজ করে
স্টারলিংক নেটওয়ার্ক মূলত তিনটি প্রধান উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। সেগুলো হলো লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট, গ্রাউন্ড স্টেশন ও ইউজার টার্মিনাল। শুরুতেই আসছি লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট প্রসঙ্গে। এগুলো ছোট আকৃতির স্যাটেলাইট। প্রায় ২৬০ কেজি ওজনের একেকটি স্যাটেলাইট পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে। এসব স্যাটেলাইট একই নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে লেজার লিংকের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। তারা গ্রাউন্ড স্টেশনের কাছ থেকে ডেটা নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবহারকারীর টার্মিনালে তা পৌঁছে দেয়।
স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোর সঙ্গে পৃথিবীর ইন্টারনেট অবকাঠামোর সংযোগ ঘটায় গ্রাউন্ড স্টেশন (Gateways)। এই গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো স্যাটেলাইটে ডেটা পাঠায় ও স্যাটেলাইট থেকে ডেটা গ্রহণ করে। পরে সেই ডেটা প্রচলিত ইন্টারনেট সার্ভারের সঙ্গে শেয়ার করে। আর সবশেষে রয়েছে ইউজার টার্মিনাল। স্টারলিংকের ইন্টারনেটে সংযুক্ত হওয়ার জন্য গ্রাহকেরা একটি বিশেষ ডিশ বা অ্যানটেনা প্যান (যাকে ‘স্টারলিংক কিট’ বলা হয়) ব্যবহার করেন। এতে ফেজড-অ্যারে অ্যানটেনা, মাউন্টিং সরঞ্জাম ও ওয়াই-ফাই রাউটার থাকে। এই ডিশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আকাশের নির্দিষ্ট স্যাটেলাইটের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত রাখতে পারে। এটাই উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করে।
স্টারলিংক নেটওয়ার্ক মূলত তিনটি প্রধান উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। সেগুলো হলো লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট, গ্রাউন্ড স্টেশন ও ইউজার টার্মিনাল। শুরুতেই আসছি লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট প্রসঙ্গে।
ইউজার টার্মিনাল থেকে যখন কোনো ওয়েব পেজ বা অনলাইন পরিষেবা অ্যাকসেসের অনুরোধ করা হয়, তখন সেই সিগন্যাল স্যাটেলাইটের কাছে যায়। স্যাটেলাইট আবার গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠায়, যেখান থেকে ইন্টারনেট ব্যাকবোনের মাধ্যমে অনুরোধ করা সার্ভারে পৌঁছে যায়। সার্ভারের জবাবও ঠিক একই পথে ফিরে আসে। যেহেতু স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থান করে, তাই সিগন্যাল যাতায়াতে সময় অনেক কম লাগে। এতে অপেক্ষাকৃত কম বিলম্বে ইন্টারনেট অ্যাকসেস রিকোয়েস্টটি সম্পন্ন হয়।
এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার আকাশের দিক (line of sight) থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বড় গাছপালা, ভবন বা অন্যান্য অবকাঠামো থাকলে সংযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
প্রশ্ন আসতে পারে, স্টারলিংকের সুবিধা কী
এর উত্তরে প্রথমে বলতে হয়, উচ্চগতি ও কম বিলম্বের কথা। স্টারলিংকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এর উচ্চগতির ইন্টারনেট–সেবা এবং স্বল্প বিলম্ব (low latency)। এ স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে প্রাথমিক ব্যবহারে ব্যবহারকারীরা ৫০ এমবিপিএস থেকে ২০০ এমবিপিএস পর্যন্ত ডাউনলোড গতি পেয়েছেন। যদিও অবস্থান ও নেটওয়ার্ক ভিড়ের ওপর গতি নির্ভর করে।
দ্বিতীয় সুবিধার মধ্যে আছে প্রত্যন্ত ও অনুন্নত অঞ্চলে ইন্টারনেট–সুবিধা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলে ভূ-অবকাঠামো উন্নয়নে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাহাড়ি, দ্বীপ বা প্রত্যন্ত এলাকায় ফাইবার অপটিক কেবল বা ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ব্যয়বহুল ও জটিল। স্টারলিংক এসব চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে শুধু একটি বিদ্যুৎ-সংযোগ ও আকাশের স্পষ্ট দৃশ্যের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড সরবরাহ করতে পারে। ফলে প্রত্যন্ত স্কুল, ক্লিনিক বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও উচ্চগতির ইন্টারনেট পেতে পারে।
তৃতীয়ত, ডিজিটাল বিভাজন কমানো। বাংলাদেশে ডিজিটাল সংযোগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে, কিন্তু শহর ও গ্রামের মধ্যে এখনো অনেক ক্ষেত্রে গতি ও মানের পার্থক্য রয়ে গেছে। স্টারলিংক এই ফাঁক পূরণে সাহায্য করতে পারে। উচ্চগতির নির্ভরযোগ্য সংযোগ পেলে গ্রামীণ এলাকা এবং বঞ্চিত জনগোষ্ঠীও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা ও কৃষিতে নতুন সুযোগ পেতে পারে।
সর্বশেষ রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ–সুবিধা। ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি চাইলেই সরকারের আদেশে যেকোনো সময়ে ইন্টারনেট একচেঞ্জ পয়েন্ট বা সার্ভার বন্ধ করার মাধ্যমে যেকোনো অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ছাড়া ইন্টারনেটের অবকাঠামো, যেমন নেটওয়ার্ক টাওয়ার বা ফাইবার অপটিক কেবল ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হয়। স্টারলিংকের মতো স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবার ক্ষেত্রে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার তেমন সুযোগ নেই, যদি না স্টারলিংককেও বিটিআরসির নির্দেশমতো সেবা চালু বা বন্ধ রাখার জন্য বাধ্য করা হয়। ইউজারের কাছে থাকা অ্যানটেনা ও রাউটার কিটটি ঠিক থাকলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন স্টারলিংকের গ্রাহকেরা।
স্টারলিংকের প্যাকেজ ও ব্যবহারের খরচ কেমন
স্টারলিংক ব্যবহারের খরচই হলো এর সবচেয়ে বড় অসুবিধা। এর রেসিডেনসিয়াল প্যাকেজ প্রতি মাসে প্রায় ১২০ ডলার অথবা ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে ইউজার টার্মিনালের জন্য ৩৫০-৬৯৯ ডলার মতো এককালীন খরচ লাগবে, যা টাকায় ৪৩ হাজার থেকে ৮৫ হাজারের মধ্যে। ব্যবসায়িক চাহিদা মেটাতে স্টারলিংক বিজনেস নামের উচ্চমূল্যের একটি প্ল্যানও রয়েছে, যা মাসিক ৫০০ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু। তবে এ অতিরিক্ত খরচের বদলে আরও উচ্চগতি ও স্থিতিশীল সংযোগ পাওয়া যাবে। এসব ছাড়াও আমদানি শুল্ক, স্থানীয় ট্যাক্স ইত্যাদির কারণে খরচ বাড়তে পারে।
আপাতদৃষ্টে সাধারণ ব্রডব্যান্ড সেবার তুলনায় বেশি স্টারলিংক অনেক ব্যয়বহুল মনে হতে পারে। তবে খুবই প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বিকল্প নেই, সেখানে উচ্চগতির স্টারলিংক সেবার মূল্য অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হলে এবং উৎপাদন খরচ কমলে ভবিষ্যতে এর দাম কমার সুযোগ রয়েছে।
ঠিক এ মুহূর্তে স্টারলিংক বাংলাদেশে চালু হলে এর মূল গ্রাহক হবে ছোট ও মাঝারি ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যেন গতানুগতিক তারভিত্তিক ইন্টারনেটের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমে আসে।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্টারলিংকের ডেটা পলিসি
সব ইন্টারনেট সেবাদাতার মতোই স্টারলিংক নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে কিছু ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে। যেমন সিস্টেম ডায়াগনস্টিক, কানেকশন পরিসংখ্যান ইত্যাদি। গ্লোবাল প্রাইভেসি পলিসি অনুযায়ী, তারা সাধারণত অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ডেটা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে না।
তা ছাড়া বাংলাদেশে এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপিআরের মতো ব্যাপক ডেটা সুরক্ষা আইন নেই। তবে ভবিষ্যতে ডেটা প্রাইভেসি আইন আরও কঠোর হলে স্টারলিংককে সেগুলোর সঙ্গেও মানিয়ে চলতে হবে। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সিকিউরিটি রক্ষায় কোম্পানিকে স্পষ্ট নীতিমালা প্রকাশ করতে হবে।
পাশাপাশি স্টারলিংক সাধারণত ব্যবহারকারীর ডেটা (যেমন ব্যবহারের ধরন, অবস্থান ইত্যাদি) অ্যাগ্রেগেটেড বা কেটে-ছেঁটে সংরক্ষণ করে নেটওয়ার্ক অপটিমাইজেশনে ব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক সেবাপ্রদানকারী হিসেবে এ তথ্য সংরক্ষণ বা স্থানান্তর বিদেশেও হতে পারে। স্থানীয় আইন অনুযায়ী, ডেটা দেশের অভ্যন্তরে রাখতে হলে তার আলাদা ব্যবস্থাও রাখতে হবে স্টারলিংককে। তা ছাড়া সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্থানীয় আইন প্রয়োগের মাধ্যমে স্টারলিংককে নির্দিষ্ট ডেটা শেয়ার করতে বাধ্য করতে পারে।
যদি এবারও বিটিআরসি তাদের নীতিমালা শিথিল না করে, বিশেষ করে প্রাইভেসি সুরক্ষা নিশ্চিত করে আড়িপাতার শর্ত উঠিয়ে না নেয়, তাহলে স্টারলিংককে এ দেশে আনার সব প্রচেষ্টাই বিফলে যেতে পারে।
স্টারলিংক কীভাবে ব্যবহৃত হবে, জনসাধারণের কাছে কীভাবে গৃহীত হবে এবং এর মাধ্যমে দেশে কী কী সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে, তা সম্পূর্ণই নির্ভর করবে স্টারলিংক এবং বিটিআরসির মধ্যে চুক্তি ও ব্যবহারের নীতিমালা কেমন হবে, তার ওপর। এর আগে ২০২৩ সালের দিকে স্টারলিংকের একটি দল বাংলাদেশ সফরে এসেছিল পরীক্ষামূলক পরিচালনার জন্য। তবে সেবার বিটিআরসি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবার জন্য আড়িপাতার সুযোগের শর্ত রেখে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে। ফলে স্টারলিংকের সেবা চালু বিষয়ে তেমন অগ্রগতি আসেনি।
যদি এবারও বিটিআরসি তাদের নীতিমালা শিথিল না করে, বিশেষ করে প্রাইভেসি সুরক্ষা নিশ্চিত করে আড়িপাতার শর্ত উঠিয়ে না নেয়, তাহলে স্টারলিংককে এ দেশে আনার সব প্রচেষ্টাই বিফলে যেতে পারে। এ ছাড়া ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট যেভাবে বিটিআরসির নির্দেশে বন্ধ-চালু হয়, স্টারলিংক সেবাও যদি একইভাবে পরিচালিত হয়, তবে যে উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্টারলিংককে দেশে আমন্ত্রণ করেছে, তা ব্যাহত হবে। দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগব্যবস্থাকে কোনো একদিন হয়তো আবারও গ্রাস করবে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের অন্ধকার।