স্মরণ
দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে
১৯২৯ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দ্বিজেন শর্মা। একাধারে তিনি ছিলেন প্রকৃতিবিদ, জীববিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক। দ্বিজেন শর্মার জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ।
গন্তব্য ছিলো সিলেটের কুলাউড়া হয়ে পাথারিয়ার বিস্তীর্ণ টিলাময় অঞ্চল। সেইসঙ্গে ওখানকার গ্রামগুলো আর অপরূপ পাহাড়ী ঝর্ণা মাধবকুণ্ড।
চারিদিকে দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছিল। ঢাকা থেকে দূরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছিল সবুজের পরিমাণ। কখনো কালভার্ট, কখনো ব্রিজ আর মাঝে মাঝে দিগন্ত বিস্তৃত বিশাল প্রান্তর। হঠাৎ দ্বিজেনদা বলে উঠলেন, ‘দেখ, ইউক্লিপটাস গাছগুলোকে কেমন বিসাদৃশ লাগছে। এগুলো অত্যাধিক পানি শোষণ করে জমি শুকিয়ে ফেলে, শিকড় গভীরে প্রোথিত না হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ফলে আশেপাশে অন্য গাছপালাকে থাকতে দেয় না।’ কিন্তু শিমুল, শিরিষ ও জারুল, হিজল গাছ দেখিয়ে বললেন, ‘এগুলো জলজ উদ্ভিদ। তাই আমাদের দেশে জলজ জায়গার জন্য বেশি উপযোগী।‘
সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে আখাউড়া স্টেশনে এলো ট্রেন। রেল জাংশন হিসেবে আখাউড়া বেশ বড়। আখাউড়ার পর মাটি লাল হয়ে গেছে। সমতলের সঙ্গে টিলা টাইপের পার্থক্যটা বোঝা যায়। রওনা দিয়েছিলাম সেই সকাল ৭টায়। এখন ১০টা বাজতে ৫ মিনিট বাকী। আমরা এক ধরনের পাহাড়ি পরিবেশে ঢুকেছি। সত্যিই তাহলে আমরা পাথারিয়া যাচ্ছি। মেঘের গর্জনের মতো প্রতিধ্বনি করে ছুটে চলেছে আমাদের ট্রেন। ভ্রমনের এই সময়টা ছিল ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে।
আমরা কুলাউড়াতে পৌঁছে গেলাম ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে। ট্রেনটা পুরো ঘুরে দেখার একটা ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তা আর হলো না। কুলাউড়ায় এলাম দ্বিতীয় বারের মতো। কুলাউড়াতে নেমে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি। তারপর একটা বেবিট্যাক্সি ভাড়া করলাম। বড়লেখা উপজেলার ভেতর দিয়ে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে ছুটে চললাম আমরা। রশিদাবাদ চা বাগান চোখে পড়লো। হঠাৎ করে এরকম পাহাড়ি আলো ছায়ায় ঘেরা অঞ্চল দিয়ে যাব, আর পাহাড়ি গ্রামে থাকবো, ভাবিনি। চলন্ত অবস্থায় সবকিছুই কেমন যেন ঘোরের মতো লাগে।
দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে দেখা হয়েছিল প্রায় ২০ বছর আগের এক দুপুরে। প্রতিদিন এ সময়টাতে আমি বাড়ী থেকে বের হতাম। কখনো নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন পার হয়ে সস্তাপুরের রাস্তা ধরে হাঁটতাম। কখনো দেখতাম শীতলক্ষ্যার পাড়ে বয়ে যাওয়া নদীকে।
দ্বিজেনদাও আচ্ছন্নের মতো দূরের পাহাড়গুলোকে দেখালেন। আমিও স্বপ্নময় দৃষ্টি মেলে দূরে কুয়াশাচ্ছন্ন পাথারিয়াকে দেখলাম। ছড়িয়ে থাকা পাথারিয়া পাহাড়ের কোলে এই মানবিক মানুষটির জন্ম হয়েছে। ১৭টি গ্রন্থের লেখক, প্রায় ৪০টি গ্রন্থের অনুবাদক ও উদ্ভিদ গবেষক এবং সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের সামনে। এশিয়াটিক সোসাইটির ফ্লোরা ও ফুনার ওপর ৩০ খণ্ড এনসাইক্লোপেডিয়ার সম্পাদকও ছিলেন।
আমরা নামলাম কাঠালতলীতে। এখান থেকে যেদিক দিয়ে মাধবকুণ্ডে যাওয়া যায় তার বিপরীত দিকে। যাওয়ার পথে তিনি বিলাতি লাউয়ের গাছ (স্কোয়াস), বোগন বেলিয়া এবং জবা গাছও দেখালেন। অবশেষে পৌঁছে গেলাম দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কবিরাজ বাড়ীতে। একদিন এখানেই জন্মেছিলেন দ্বিজেন শর্মা। আমাদের দ্বিজেনদা।
২.
দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে দেখা হয়েছিল প্রায় ২০ বছর আগের এক দুপুরে। প্রতিদিন এ সময়টাতে আমি বাড়ী থেকে বের হতাম। কখনো নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন পার হয়ে সস্তাপুরের রাস্তা ধরে হাঁটতাম। কখনো দেখতাম শীতলক্ষ্যার পাড়ে বয়ে যাওয়া নদীকে। দুপুরের রোদ আর নদীর মৃদুমন্দ বাতাসে কেমন যেন ছড়িয়ে পড়তে ইচ্ছা করতো। জেলা, দেশ আর মহাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীটা সামনে এসে ধরা দিত। নিজেকে একটা অঞ্চলের মানুষ মনে না হয়ে মানব প্রজাতির অংশ মনে হতো। কখনো কখনো চলে যেতাম ‘বেলাভূমি’ নামে চাষাড়ার একটি বইয়ের দোকানে। অনেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হতো, পছন্দের বই দেখলে নড়াচড়া করতাম।
সেদিনও গিয়েছিলাম। একজনকে দেখিয়ে বেলাভূমির স্বত্বাধিকারী রণজিৎ কুমার আমাকে বললেন, ‘উনি হচ্ছেন দ্বিজেন শর্মা।’
চমকে উঠেছিলাম! মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল, ‘ননী ভৌমিক, দ্বিজেন শর্মা।’
‘হ্যাঁ, গহন কোনো বনের ধারে এবং সতীর্থ বলয়ে ডারউইন-এর লেখক দ্বিজেন শর্মা।’
সত্যিই, আমার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন সোভিয়েত প্রগতি প্রকাশনার সেই দ্বিজেন শর্মা। মুহূর্তের মধ্যে অনেক রুশ থেকে বাংলা অনুবাদ বইয়ের নাম মনে পড়ে গিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ছিলো লুবানিকের কেন আমি বাবার মতো (১৯৭৭, প্রগতি); ভদ্মাসভ ও ত্রিকোনভের রসায়নের শত গল্প (১৯৭০); মিখাইল নেস্তুর্খের মানব সমাজ: প্রজাতি, জাতি, প্রজাতি (১৯৭৬, প্রগতি); আলেক্সান্দার বেলায়েভের উভচর মানুষ, ইউরি দ্রুজনভের পেন্সিল ও সর্বকর্মার অ্যাডভেঞ্চার, ভেরা চাপলিনার আমাদের চিড়িয়াখানা আর আর্কাদি গাইদারের ইশকুল, আনাতোলি তমালিনের পৃথিবী কী গোল, মিখাইল ইলিনের মানুষ কী করে বড়ো হলো, এবং কোকা আন্তোনভার ভারতবর্ষের ইতিহাস। ননী ভৌমিক, দ্বিজেন শর্মা, অরুন সোমসহ যাঁরা রুশ গল্প উপন্যাস ও বিজ্ঞানের বইগুলো অনুবাদ করে আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন, তাঁরা এসব বই দিয়ে বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রবাহের সঙ্গে আমাদের যুক্ত করেছিলেন।
দ্বিজেনদার বাড়ির উঠানে বসে আমি তাঁর কাছ থেকে শুনেছি। আবার গহন কোনো বনের ধারে বইয়ের ভূমিকায় দ্বিজেন শর্মা লেখেন, ‘গহন কোনো বনের ধারে কাহিনীটিতেও সত্যতার অংশভাগ কিছু কম নয়। সিলেটের পাথারিয়া পাহাড়ে আমাদের ছিল একটা বাগানবাড়ি। আজও আছে।
আলাপে দু’এক কথার পর ‘মহাবৃত্তীয় সভ্যতা’র কথা চলে এসেছিল। রুশ লেখক ইভান ইয়েফ্রেমভের মহাজাগতিক কল্পবিজ্ঞানের ওপর উপন্যাস, অ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকা উপন্যাসে বিধৃত মহাবৃত্তীয় সমাজ ব্যবস্থা দ্বিজেনদাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি তাঁর সমাজতন্ত্রে বসবাস গ্রন্থের একটি অধ্যায়ে এ নিয়ে লিখেছিলেন। বইটি সম্পর্কে সাংস্কৃতিক দর্শনের অগ্রপথিক ওয়াহিদুল হক বেশ কয়েকবার মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়া জরুরি। কেননা অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি আর অনুভব দিয়ে ঘেরা এ এক অসাধারণ গ্রন্থ।
‘মহাবৃত্তীয় সভ্যতা’ বিষয়টি আমাকে দ্বিজেনদার খুব কাছে নিয়ে আসে। তাঁর সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়, ট্রেনে যেতে যেতে, তাঁর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বড়লেখার শিমুলিয়ার বাগানে কাজ করার সময়, পাথারিয়ার পাহাড়ি পথে অথবা মাধবকুণ্ডের টিলাময় প্রান্তর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনর্গল আলাপ-আলোচনায় আমরা ছিলাম মগ্ন। কখনও শুনেছি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লোভে আমাজনের বন ধ্বংসের গল্প আর প্রকৃতি রক্ষায় চিকোমেন্ডিসের আত্মত্যাগের কথা, আলোচনা করেছি মহাজাগতিক সভ্যতার প্রকৃতি নিয়ে।
তিনি তাঁর জীবনে প্রায় ১৭টি বই লিখেছেন। শ্যামলী নিসর্গ (১৯৮০,১৯৯৭, ২০১৫), জীবনের শেষ নেই (১৯৮০, ২০০০, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র), সমাজতন্ত্রে বসবাস (১৯৯৯, ইউপিএল), গহন কোনো বনের ধারে (১৯৯৪, সাহিত্য প্রকাশ), হিমালয়ের উদ্ভিদ রাজ্যে ডালটন হুকার (২০০৪, সাহিত্য প্রকাশ), মম দুঃখের সাধন (১৯৯৪, সাহানা) ইত্যাদি।
দ্বিজেনদার বাড়ির উঠানে বসে আমি তাঁর কাছ থেকে শুনেছি। আবার গহন কোনো বনের ধারে বইয়ের ভূমিকায় দ্বিজেন শর্মা লেখেন, ‘গহন কোনো বনের ধারে কাহিনীটিতেও সত্যতার অংশভাগ কিছু কম নয়। সিলেটের পাথারিয়া পাহাড়ে আমাদের ছিল একটা বাগানবাড়ি। আজও আছে। ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি আমার অগ্রজ একটি চা-বাগানের শ’খানেক বিঘা জঙ্গলা জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে আবাদ করেন। আমার ছেলেবেলার একটা বড়ো অংশ ওখানেই কেটেছে। শোভা বুড়ো, কপচে ও রোগা বাস্তব চরিত্র। সত্যিই শোভা বুড়ো অধিক বয়সে বিস্মৃত জন্মভিটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল এবং আমরা কোনদিন তার পৌঁছানোর সংবাদ পাইনি। চলে যাবার সময় সে তার ধনুক আর অবশিষ্ট তীরগুলো আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। আজও সেই হাস্যকর পরিস্থিতি চোখে ভাসে: মহাকুমা সদর স্কুলের নবম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য শহরে দিদির বাড়ি উঠেছি, সুটকেস আর বিছানাপত্রের সঙ্গে সেই ধনুক ও তীর দেখে আমার শহুরে আত্মীয়রা তো অবাক, আমাকে রীতিমতো এক জংলী ঠাউরে থাকবেন নিশ্চয়ই।’
৩.
দ্বিজেন শর্মার জন্ম ২৯ মে, ১৯২৯। মৃত্যু ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭। ১৯৬২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত নটর ডেম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। এ ছাড়া এ কলেজের প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠনেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৫৮ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে। সেখানে কর্মরত ছিলেন ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত প্রকাশনা সংস্থা প্রগতি প্রকাশনের অনুবাদকের চাকরি নিয়ে চলে যান মস্কো। প্রগতি, রাদুগা ও মীর প্রকাশনা থেকে দ্বিজেন শর্মার প্রায় ৪০টি অনুবাদের বই প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে অনুবাদ বন্ধ করার নির্দেশ পাওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সব সম্পর্ক চুকে গিয়েছিল।
সমাজতন্ত্রের মধ্য থেকে সমাজ কিছু মানবিক গুণাবলি অর্জন করলেও সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্রের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্তভাবে এককেন্দ্রিক, যা ক্ষমতার দম্ভ তৈরি করে। এটি এককেন্দ্রীকতা ও তাৎক্ষণিক লাভের জায়গা থেকে কখনো বের হতে পারবে না।
তিনি ‘মম দুঃখের সাধন’ গ্রন্থে লেখেন, ‘সমাজতন্ত্র বিশ্বের পতনে পুঁজিবাদী বিশ্বে যে উল্লাস এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে পুঁজিবাদের জয়গান শুরু হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে স্বল্পায়ু হবে। কেননা শ্রম ও পুঁজির সঙ্গে ধনতন্ত্র আজ গুরুতর দ্বন্দ্বের সম্মুখীন। সেটা প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্ট।’
এক আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন, সমাজে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান আর নিগুঢ় সম্পর্ক ছাড়া মানুষ আসলে স্বার্থপরতা থেকে বের হতে পারবে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণের পথে নিয়ে যেতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সৌরশক্তি স্বভাবগতভাবে কেন্দ্রীভূত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সমাজতন্ত্রের মধ্য থেকে সমাজ কিছু মানবিক গুণাবলি অর্জন করলেও সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্রের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্তভাবে এককেন্দ্রিক, যা ক্ষমতার দম্ভ তৈরি করে। এটি এককেন্দ্রীকতা ও তাৎক্ষণিক লাভের জায়গা থেকে কখনো বের হতে পারবে না। এগুলো দ্বিজেন শর্মাকে কখনো কখনো হতাশাগ্রস্থ করেছে। কিন্তু খ্যাতনামা পর্যটক থর হেয়ারডেলের কথাকে অবলম্বন করে বলেছেন, ‘বই হলো মানবজাতির পদচিহ্ন’। তাই কাজ করে গেছেন অবিচল ধারায়, যতটুকু তিনি পেরেছেন। কেননা কর্ম আর গ্রন্থ ভবিষ্যত প্রজন্মকে পথ দেখাবে।
জীববিদ্যা বলে, মানুষের মস্তিষ্কের যে প্যাটার্ন তাতে আমিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের গুনগান করে। মানুষের অস্তিত্ব টিকে থাকার ইতিহাসে লাখ লাখ বছর এই প্রবণতা কাজ করেছে। বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে এই প্রবণতা প্রবল। আমরা জানতে শুরু করেছি এটা মস্তিষ্কের অসংগতি। এর জন্য প্রকৃতিঘনিষ্ঠ হতে হবে, যাতে এর থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি। কীভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ বহুমত, বহুধারা একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারে, তা এর থেকে শিক্ষা নিতে পারি। খ্যাতনামা বিজ্ঞান সংস্কৃতির ব্যাখ্যাকার সিপি স্নোর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকে আলাদা করা যাবে না। বিজ্ঞানকে সংষ্কৃতির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত করতে হবে। তবে গড়ে উঠবে বিজ্ঞান সংষ্কৃতি নির্ভর সমাজ ও সভ্যতা।‘
তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। ৮৯ বছরের জীবনে দ্বিজেন শর্মা আমাদের তাই শিখিয়ে গেছেন কখনো শিক্ষকের মতো, পিতার মতো, কখনো বন্ধুর মতো, ‘মানবজাতির যে অনিশ্চিত যাত্রা আমাদের ঘিরে রেখেছে, তার থেকে আমরা একটু হলেও বেড়িয়ে আসতে পারি।’