জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (এনএইচএসপিসি) ২০২৫-এর পাঁচটি আঞ্চলিক পর্ব শেষ হলো। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) এবং প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা, তাদের প্রোগ্রামিং–দক্ষতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। ৩০ মে, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক পর্বের প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠিত হয়।
এই আয়োজনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং, আইসিটি কুইজ ও দাবা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে সেমিনারে অংশগ্রহণ করে। এর আগে, গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২৮ মে বুধবার তিনটি পৃথক ভেন্যু—বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এনএইচএসপিসি ২০২৫-এর আঞ্চলিক পর্বের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সমমানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জনপ্রিয় করা। এই পর্বের প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা তিনটি ক্যাটাগরিতে অংশ নিতে পারছে—ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি (জুনিয়র), নবম থেকে দশম শ্রেণি (সেকেন্ডারি) এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি (হায়ার সেকেন্ডারি)।
প্রতিযোগিতা শেষে প্রোগ্রামিং ও কুইজ বিজয়ীদের হাতে মেডেল এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন অতিথিরা। ঢাকা আঞ্চলিক পর্বে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ১০ জন, সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ১৭ জন এবং হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ১৬ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডর ক্ষেত্রে দাখিল থেকে আলিম ২০২৫ পর্যন্ত পরীক্ষার্থী এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে পলিটেকনিক চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে। ইংরেজি মাধ্যমের ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের ‘ও’ কিংবা ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত পরীক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে। শুধুমাত্র কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যাবে দুটি ক্যাটাগরিতে—ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি (জুনিয়র) এবং নবম থেকে দশম শ্রেণি (সেকেন্ডারি)। আয়োজকরা আশা করছেন, এই প্রতিযোগিতা সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রোগ্রামিং এবং প্রযুক্তি চর্চায় ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ জেলার তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টির মধ্যেও শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে ভেন্যুতে আসে। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। একইসঙ্গে ৯টা ২০ মিনিটে কার্জন হলে কুইজ প্রতিযোগিতা চলতে থাকে।
কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে শিক্ষার্থীদের আইসিটি ও এআই বিষয়ক সেমিনারে অংশ নেয়। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সভাপতি মুনির হাসান। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন।
এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সমমানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জনপ্রিয় করা। এই পর্বের প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা তিনটি ক্যাটাগরিতে
সেমিনারে অতিথিরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘আমাদের দেশের অভিভাবকেরা অনেক সচেতন। শিক্ষার্থীরাও কম্পিউটার ব্যবহার করে প্রযুক্তিকে বুঝতে চেষ্টা করছে। অভিভাবকদেরকে আরও সচেতন হতে হবে যেন তাদের সন্তানেরা প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে দূরে থাকে।’
প্রতিযোগিতা শেষে প্রোগ্রামিং ও কুইজ বিজয়ীদের হাতে মেডেল এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন অতিথিরা। ঢাকা আঞ্চলিক পর্বে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ১০ জন, সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ১৭ জন এবং হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ১৬ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কুইজ প্রতিযোগিতায় জুনিয়র ও সিনিয়র ক্যাটাগরিতে ৩০ জন করে মোট ৬০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলার প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রোগ্রামিং ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কুইজের জুনিয়র ও সিনিয়র ক্যাটাগরিতে মোট ২৬ জন এবং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় তিন ক্যাটাগরিতে সমস্যা সমাধানের ভিত্তিতে মোট ২২ জন বিজয়ী হয়। এছাড়া দাবা প্রতিযোগিতায় ১২ জনকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহমুদুল হাছান। তিনিই বিজয়ীদের হাতে মেডেল ও সনদ তুলে দেন।
ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পর্বটি হয় ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সকাল আটটায় শিক্ষার্থীরা ভেন্যুতে আসতে শুরু করে। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর পূর্ব নির্ধারিত সময়ে শুরু হয় প্রোগ্রামিং এবং আইসিটি বিষয়ক কুইজ। শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এইচ এম কামাল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. সুজন আলী এবং বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের ন্যাশনাল আরবিটার মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন। প্রোগ্রামিং, কুইজ এবং দাবা প্রতিযোগিতায় মোট ৪৭ জন বিজয়ী হয়।
এখনও আরও বেশ কয়টি আঞ্চলিক পর্ব বাকি রয়েছে। আঞ্চলিক পর্বে উত্তীর্ণ প্রতিযোগীদের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় বা চূড়ান্ত পর্ব আয়োজন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ৬-১০টি প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করতে হবে
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ভোলা, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রোগ্রামিং, কুইজ। প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তৌফিক আলম। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল। বরিশালে প্রোগ্রামিংয়ে ১ জন, কুইজে ১৫ জন এবং দাবায় ১২ জনসহ মোট ২৮ জনকে বিজয়ী করা হয়।
টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আঞ্চলিক পর্বের প্রতিযোগিতা হয়। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনির মোর্শেদ। সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন রিসার্চ সেলের ডিরেক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল নাসির। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেহেদী হাসান তালুকদার। প্রোগ্রামিংয়ে ১৪ জন, কুইজে ৪১ জন এবং দাবায় ৭টি দলকে বিজয়ী করা হয় এখানে।
এখনও আরও বেশ কয়টি আঞ্চলিক পর্ব বাকি রয়েছে। আঞ্চলিক পর্বে উত্তীর্ণ প্রতিযোগীদের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় বা চূড়ান্ত পর্ব আয়োজন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ৬-১০টি প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করতে হবে এবং কুইজ প্রতিযোগীদের ৫০টি কুইজ প্রশ্নের উত্তর কাগজে লিখে জমা দিতে হবে। এনএইচএসপিসি ২০২৫ বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন, এজ (এনহান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি) প্রকল্প এবং ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অনলাইনে নিবন্ধন ও আয়োজনের বিস্তারিত জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে।