সবচেয়ে বিষাক্ত দশ উদ্ভিদ

ওলেন্ডার

কিছু কিছু উদ্ভিদ দেখতে বড় সুন্দর। কিন্তু এরা আসলে বসে রয়েছে আপনার জন্য মৃত্যুফাঁদ সাজিয়ে। এরকম দশটি ভয়াবহ বিষাক্ত উদ্ভিদের কথা বলব এ লেখায়।

প্রথমেই ওলেন্ডারের কথা বলা যাক। বিশ্বব্যাপী এটি সবচেয়ে বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসাবে পরিচিত। এর মূল থেকে পাপড়ি পর্যন্ত বিষাক্ত। এই গাছে আছে ওলেন্ড্রিন নামক বিষ। এর প্রভাবে বমি হতে পারে, হৃদস্পনন্দন অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওঠানামা করতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এর একটিমাত্র পাতাও একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ইউরেশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় এদের মূল জন্মস্থান। ওলেন্ডারের বৈজ্ঞানিক নাম নেরিয়াম ওলেন্ডার

ওয়াটার হেওমলকও বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গাছের দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। এর সুন্দর ফুল দেখে যে কেউ প্রেমে পরে যেতে পারে। তবে ফুল দেখে প্রতারিত হলেই করবেন মস্তবড় ভুল। কারণ ওয়াটার হেমলকের প্রতিটি অংশে সিকুটক্সিন নামক বিষ থাকে। এই বিষের প্রভাবে খিঁচুনি দেওয়া, পেশির কম্পন, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এর সবচেয়ে বেশি বিষ থাকে শিকড়ে। ওয়াটার হেমলকের বৈজ্ঞানিক নাম সিকুটা ম্যাকুলাটা

ওয়াটার হেওমলক
আরও পড়ুন
রক্ত কুচ বা রোজারি মটর

রক্ত কুচ বা রোজারি মটরের মূল জন্মস্থান এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। রক্তকুচের তিন মাইক্রোগ্রামের চেয়েও কম বিষ জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এই ফলে থাকে অ্যাব্রিন বিষ। রিসিনের চেয়েও মারাত্মক এই বিষ। তবে সৌভাগ্যের ব্যাপার, এই বিষ শুধু বীজের খোলসের ভেতরে থাকে। বীজ ভেঙ্গে গেলে তবেই অ্যাব্রিন বের হয়। বীজ না ভেঙ্গে গিলে ফেললেও তেমন ভয়ের কিছু নেই। কারণ রক্তকুচ বীজের দেহাবরণ বা খোলস খুব শক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাবরুস প্রিস্যাটোরিয়াস। বাংলাদেশেও এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। আগে স্বর্ণকারেরা সোনা মাপার বাটখারা হিসাবে ব্যবহার করত রক্তকুচের বীজ।

শরীরের স্নায়ুকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করার ক্ষমতা আছে ডেডলি নাইটশেডের। এটি হৃৎপিণ্ড এবং অন্ত্রের পেশিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য ১০ থেকে ২০টি ফলই যথেষ্ঠ। বিষাক্ত এই গাছটির মূল জন্মস্থান ইউরেশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা। ডেডলি নাইটশেডের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাট্রোপা বেলাডোনা

ডেডলি নাইটশেড
আরও পড়ুন
ভেন্না বা রেড়ি গাছ

পূর্ব আফ্রিকায় পাওয়া যায় ভেন্না বা রেড়ি গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম রিসিনাস কমিউনিস। ভেন্নার তেল নিরাপদ। খাদ্য ও ওষুধের পাশাপাশি এটি সৌন্দর্যবর্ধক তেল হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। তবে ভেন্নার বীজে রিকিন নামক বিষ থাকে। একটি মাত্র ভেন্নার বীজ খাওয়ার ফলে রক্তপাত ও বমি হতে পারে। এমনকি রক্ত সঞ্চালনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সুইসাইড ট্রি। নামেই কেমন একটা মৃত্যু ভয়। গাছটি দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ গাছের মতোই। তবে এর ক্ষতিকর ফলের কারণে গাছটির নাম দেওয়া হয়েছে সুইসাইড ট্রি। এই ফলের বীজে আছে শক্তিশালী কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড। একে বলা হয় সারবেরিন। কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড এক ধরণের জৈব যৌগ যা হৃৎপিণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই গাছের বীজ হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের হার কমিয়ে দেয়। ফলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই ভয়ঙ্কর গাছের দেখা পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম সেরবেরা ওডোলাম

সুইসাইড ট্রি
আরও পড়ুন
হোয়াইট স্নেকরুট

হোয়াইট স্নেকরুট উত্তর আমেরিকায় দেখা যায়। এই উদ্ভিদটি গবাদি পশুর জন্য ক্ষতিকর। ট্রেমাটল নামক এক ধরণের বিষাক্ত অ্যালকোহল থাকে এই উদ্ভিদে। এই অ্যালকোহল গবাদি পশুর মাংস এবং দুধের উপজাতগুলিকে বিষাক্ত করে। ফলে গবাদি পশুর মাংস বা দুধ খেলে বমি হতে পারে এবং পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার আশংখ্যা থাকে। এতে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। হোয়াইট স্নেকরুটের বৈজ্ঞানিক নাম এগারটিনা আলটিসিমা

অ্যাকোনাইট উদ্ভিদের ফুল অত্যন্ত বিষাক্ত। শুধু ফুল স্পর্শ করলে শরীর অসাড় হয়ে যেতে পারে। এমনকি ফুল স্পর্শ করলে দেখা দিতে পারে হার্টের সমস্যা। অনেকে এই উদ্ভিদটি চিনতে ভুল করে। এটি খেলে বমি, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়েরিয়া হতে পারে। বর্ণচোরা এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাকোনাইট ন্যাপেলাস

অ্যাকোনাইট
আরও পড়ুন
ধুতুরা ফুল

ধুতুরা ফুলকে আমরা কমবেশি সবাই চিনি। মধ্য আমেরিকায় এর দেখে মেলে বেশি। আমেরিকায় এই গাছ জিমসন নামে পরিচিত। একে মৃত্যুর ফাঁদ বলা হয় সেখানে। এটি নাইটশেড পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ধুতুরা ফুল খেলে শরীরে খিঁচুনি দিতে পারে। মাত্র কয়েকটি ফুলই আপনাকে কোমায় পাঠানোর জন্য যথেষ্ট। এই ফুলে আছে অ্যালকালয়েড নামক বিষ। এতে হ্যালুসিনেশনের সৃষ্টি হতে পারে। ধুতুরা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ডাতুরা স্ট্রামোনিয়াম

আরও পড়ুন
ম্যানকিনেল

এই পর্বের শেষ উদ্ভীদ ম্যানকিনেল গাছ। এই উদ্ভিদ স্পর্শ করলেই বিপদ। সঙ্গে সঙ্গে ত্বক এবং চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হবে। এর ফলগুলো দেখতে অনেকটা আপেলের মতো। কিন্তু আপেল ভেবে একবার কামড় বসালেই আপনার মুখে ফোস্কা পড়ে যাবে। তাই এই ফল থেকে সাবধান। অবশ্য এই উদ্ভিদ পাওয়া যায় মধ্য আমেরিকায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপ্পোমেন ম্যানকিনেল

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস