থিয়া আগের মতো মোবাইলে ডুবে থাকে না। আবোল তাবোল প্রশ্ন করাটাও কিছুটা কমেছে। দেখা হলেই এসে রিপোর্ট করে, চাচ্চু আজ এই কয়টা গুণ করেছি। গুণের এ সহজ কৌশলগুলো শিখে ইদানিং ও ভালোই মজা পাচ্ছে। অবশ্য, মজা পাওয়ার আরও একটা ব্যাপার আছে। আজকাল স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে থিয়ার কদর বেড়েছে। গুণের এ কৌশল শিখিয়ে স্কুলেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ বাসায় আসতেই কাছে এসে বলছে, ‘চাচ্চু আরেকটা গুণ শিখাও না। আগেরগুলো সব শেখা হয়ে গেছে। নতুন কিছু শিখাও।’ আসলে ওর স্টক খালি হয়ে গেছে। বন্ধুদের আর নতুন কিছু শিখাতে পারছে না। তাই ওর এই আবদার। যাহোক, চলো তোমাদের নতুন একটা গুণের কৌশল শিখাই।
এতদিন আমরা দশ বা ১০০-এর চেয়ে কম সংখ্যার গুণ করেছি। আজকে দশের বেশি সংখ্যার গুণ শিখবো। ফলে নিয়মটাও একটু পরিবর্তন হবে। আগের নিয়মে যে সংখ্যাগুলো গুণ করতাম সেগুলো রেফারেন্স নাম্বার ১০ থেকে বিয়োগ করা হতো। এবারের সংখ্যাগুলো যেহেতু ১০-এর বেশি তাই যোগ করবো। চলো ১৩-এর সঙ্গে ১৫ গুণ করে দেখা যাক।
এখানে যে দুটি সংখ্যাই রেফারেন্স নাম্বার ১০-এর চেয়ে বড়। তাই এখন বৃত্ত আঁকবো বৃত্তের ওপরে। আগে যেমন গুণকৃত সংখ্যা ছিল ১০-এর ছোট, তাই বিয়োগ করতাম। বৃত্তও বসাতাম নিচে।
এখন হিসাব করতে হবে ১০-এর চেয়ে সংখ্যাগুলো কত বেশি। যেমন, ১৩ আছে। সুতরাং ১০-এর চেয়ে ৩ বেশি। আবার ১৫ হলো ১০-এর চেয়ে ৫ বেশি। তাই বৃত্তের মধ্যে যথাক্রমে ৩ ও ৫ বসালাম।
এবার, কোনাকুনি ১৫-এর সঙ্গে ৩ বা ১৩-এর সঙ্গে ৫ যোগ করলে পাবো ১৮। এই সংখ্যাটা সমান চিহ্নের ডানপাশে লিখলাম। এবার ১৮-এর সঙ্গে রেফারেন্স নাম্বার ১০ গুণ করলে হবে ১৮০। সমান চিহ্নের ডানপাশে ১৮০ লিখলাম।
এখন বৃত্তের ভেতরের ৩ ও ৫ গুণ করতে হবে। গুণ করলে পাবো ১৫। ১৮০-এর সঙ্গে এই ১৫ যোগ করে দিলেই পেয়ে যাবো উত্তর। উত্তর ১৯৫।
এবার ১২-এর সঙ্গে ১৭ গুণটা তোমরা করো তো। নিজেরা চেষ্টা করো। তারপরে এই লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখ, তোমার উত্তর ঠিক আছে কিনা।
১২ ও ১৭ রেফারেন্স নাম্বার থেকে যথাক্রমে ২ ও ৭ বেশি। বৃত্তের মধ্যে তাই সংখ্যাটা লিখে ফেললাম। এবার ১৭-এর সঙ্গে ২ বা ১২-এর সঙ্গে ৭ যোগ করলে হবে ১৯। এখানে তোমরা একটা ছোট্ট চালাকি করতে পারো। ১২ ও ৭ যোগ করার যেয়ে ১৭ ও ২ যোগ করা সহজ। তুমি কোনাকুনিভাবে যেটাই যোগ করো না কেন উত্তর একই হবে। তাই সব সময় সহজটা যোগ করতে হবে। যাহোক, যোগফল পেলাম ১৯।
যোগফলের সঙ্গে রেফারেন্স নাম্বার ১০ গুণ করলে হয় ১৯০। সমান চিহ্নের ডানপাশে লিখবো ১৯০। এখানেও একটা চালাকি তোমরা করতে পারো। কোনাকুনি যোগ করে যে সংখ্যাটা পাবে তার সঙ্গে সব সময় একটা শূন্য বসিয়ে দেবে। আবার রেফারেন্স নাম্বার ১০০ হলে বসাবে ২টা শূন্য। এককথায়, রেফারেন্স নাম্বারে ঠিক যতটা শূন্য থাকবে, তুমিও গুণে গুণে ততটা শূন্য যোগফলের পাশে বসিয়ে দেবে।
এরপর আর একটা কাজই বাকি। বৃত্তের সংখ্যাদুটি গুণ করে ১৯০-এর সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে। তাহলে, ৭ ও ২ গুণ করলে হবে ১৪। ১৯০-এর সঙ্গে ১৪ যোগ করে পেলাম ২০৪। এখানেও ব্যবহার করতে পারো কৌশল। যেমন, ১৯০-এর সঙ্গে সরাসরি ১৪ যোগ করা তোমার জন্য কঠিন হতে পারে। তাই প্রথমে ১৯০-এর সঙ্গে ১০ যোগ করো। তাহলে পাবে ২০০। এবার এই ২০০-এর সঙ্গে অবশিষ্ট ৪ যোগ করে পেলে ২০৪। যোগেরও অনেক কৌশল আছে। সে সম্পর্কে পরে একদিন লিখবো।
যাহোক, উত্তর হলো ২০৪। তোমার উত্তরও কি ২০৪ হয়েছে? যদি হয় তাহলে তুমি এ নিয়মটা বেশ ভালো করেই আয়ত্ত করেছো। আর যদি আমার সঙ্গে তোমার উত্তর না মেলে, তাহলে বুঝতে হবে কোথাও ভুল হয়েছে তোমার। এই সমাধানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখ ভুলটা কোথায় হলো। তারপর আবার নিজেই চেষ্টা করো।
এবার বাসায় বসে নিচের সংখ্যাগুলো গুণ করো। ভালোকরে এই পদ্ধতিটা শিখে নিয়ে তুমিও কিন্তু থিয়ার মতো স্কুলে নিজের কদর বাড়াতে পারো।
অনুশীলন
ক. ১২ × ১২ =
খ. ১২ × ১৩ =
গ. ১৬ × ১৪ =
ঘ. ১৪ × ১৪ =
ঙ. ১২ ××১৬ =
উত্তর:
ক. ১৪৪
খ. ১৫৬
গ. ২২৪
ঘ. ১৯৬
ঙ. ১৯২
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: স্পিড ম্যাথ ফর কিডস অবলম্বনে
দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল