ত্রিকোণমিতি ছাড়াই জ্যামিতির সমস্যা সমাধানের উপায়

গণিতে অনেকের অনীহা আছে। ত্রিকোণমিতি তো আরও এক কাঠি সরস। ত্রিভুজের এই নিয়মকানুন অনেকের কাছে জটিল মনে হয়। তাই ত্রিকোণমিতি ছাড়াই অঙ্ক করতে পারলে কেমন হয়!  

মাধ্যমিকের গণিতে আমরা ত্রিকোণমিতির সঙ্গে পরিচিত হই। অনেকের কাছেই বিষয়টা কঠিন লাগে। একসঙ্গে মুখস্ত করতে হয় অনেক সূত্র। তাই ত্রিকোণমিতির ভয়টা থেকেই যায়। এ জন্য আজ আমরা ত্রিকোণমিতি ছাড়াই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।

তবে একটা ব্যাপার শুরুতেই জানিয়ে রাখি। যে সমস্যার সমাধান আমরা এখন করব, তা ত্রিকোণমিতির সাহায্যে খুব অল্প সময়ে করা যায়। কিন্তু ত্রিকোণমিতির সাহায্য না নিলে এই সমস্যা সমাধান করতে অনেকটা সময় লাগবে। তবে এটাও সমস্যা সমাধানের একটা নতুন উপায়। একটা নতুন নিয়ম শিখে রাখলে তো ক্ষতি নেই। তাছাড়া যারা সত্যিই ত্রিকোণমিতিকে দুই চোখে দেখতে পারে না, তাদের জন্যও একটা বিকল্প পদ্ধতি।

ওপরের ছবিটা খেয়াল করুন। ABC একটা ত্রিভুজ। এখানে অতিভুজ AC-এর মান দেওয়া আছে ২। C কোণের মান ১৮ ডিগ্রি। আমাদের লম্ব AB-এর মান বের করতে হবে। সাধারণত এই মান বের করার জন্য আমরা sin-এর সূত্র ব্যবহার করি। সাইনের মান বের করার সূত্র হলো, লম্ব:অতিভুজ, মানে লম্বকে অতিভুজ দিয়ে ভাগ করতে হবে। অর্থাৎ, sin18 = x/2। এখন সহজেই x-এর মান বের করা যাবে। কিন্তু আমরা এখন এই পদ্ধতিতে সহজে মান বের না করে, ত্রিকোণমিতির সাহায্য ছাড়াই মান বের করার চেষ্টা করব। এখানে আমরা কোনো সাইন, কোসাইন বা ট্যানজেন্টের ব্যবহার করব না।

প্রথমেই আমরা এই ত্রিভুজের মতো আরেকটা ত্রিভুজ কল্পনা করব। ওপরে ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে, ঠিক তেমন। একে বলে সদৃশ ত্রিভুজ। একটু বুঝিয়ে বলি। একটি ত্রিভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য যদি হয় ৩ সেমি, ৪ সেমি ও ৫ সেমি এবং আরেকটি ত্রিভুজের বাহুগুলো যদি হয় ৬ সেমি, ৮ সেমি ও ১০ সেমি, তবুও ত্রিভুজ দুটি সদৃশ হবে। কারণ এদের অনুপাত সমান। যেমন, ৬:৩ = ২, ৮:৪ = ২, ১০:৫ = ২।

আরও পড়ুন

এখন এই ত্রিভুজ থেকে আমরা BAC কোণের মান বের করব। যেহেতু ABC একটি সমকোণী ত্রিভুজ, তাই এর একটা কোণ অবশ্যই ৯০ ডিগ্রি হবে। এখানে B কোণ ৯০ ডিগ্রি। আর C কোণের মান তো ১৮ ডিগ্রি দেওয়াই আছে। বাকি রইল শুধু A কোণের মান।

আমরা জানি, একটা সমকোণী ত্রিভুজ ১৮০ ডিগ্রি। এরমধ্যে দুটি কোণের মান ৯০ ডিগ্রি ও ১৮ ডিগ্রি। তাহলে এই দুই কোণের মোট মান হলো ৯০ + ১৮ = ১০৮ ডিগ্রি। অর্থাৎ, A কোণের মান হবে = ১৮০ - ১০৮ = ৭২ ডিগ্রি। মানে BAC কোণের মান হলো ৭২ ডিগ্রি। যেহেতু BAC কোণের মান ৭২ ডিগ্রি, সেহেতু BMC কোণের মানও ৭২ ডিগ্রি হবে। কারণ ত্রিভুজ দুটি সদৃশ। একই কারণে BCM কোণের মানও ১৮ ডিগ্রি হবে, যেমনটা নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে।

এখন আমরা এই সম্পূর্ণ ত্রিভুজের সবগুলো কোণের মান জানি। এখানে একটি চমৎকার প্যাটার্ন তৈরি হচ্ছে। এই প্যাটার্ন ধরেই আমরা সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবো।

আমাদের পরের কাজ হলো BMC কোণকে দুই ভাগে ভাগ করা। কেন এই কাজটি করব? কারণ, কোণ দ্বিখণ্ডিত করলে আমরা দুটি নতুন কোণ পাবো। এই নতুন কোণগুলো আমাদের আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করতে সাহায্য করবে।

এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে আমরা MN ও NC-এর দৈর্ঘ্য বের করতে পারব। তবে এ জন্য আমাদের সমস্যাটিকে দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রতিটি প্রধান ত্রিভুজ নিয়ে কাজ করতে হবে আলাদাভাবে।

আরও পড়ুন

প্রথমে আমরা AMN ত্রিভুজকে আলাদাভাবে বিবেচনা করি। সহজে বোঝার জন্য নিচের ছবিটি খেয়াল করুন। এটা একটা সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ। কারণ, এর দুটি বিপরীতে কোণ সমান। আর জ্যামিতির নিয়মানুসারে, যে ত্রিভুজের দুটি কোণ সমান, তার দুটি বাহুও সমান হয়। সেক্ষেত্রে AM বাহুর দৈর্ঘ্য যদি 2x হয়, তাহলে MN বাহুর দৈর্ঘ্যও হবে 2x।

এবার দ্বিতীয় ত্রিভুজ দেখি। MNC ত্রিভুজেও দুটি কোণ সমান। মানে এটিও একটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ। অর্থাৎ, MN ও NC বাহুর দৈর্ঘ্য সমান হবে। আমরা আগেই জেনেছি, MN বাহুর দৈর্ঘ্য 2x। তাহলে NC বাহুর দৈর্ঘ্যও হবে 2x।

এবার আমরা প্রায় সমাধানের শেষ দিকে চলে এসেছি। দেখুন, AMN কোণ এবং ACM কোণ সমান, অর্থাৎ ৩৬ ডিগ্রি। আবার ANM কোণ ও AMC কোণও সমান, ৭২ ডিগ্রি। এই সমতা প্রমাণ করে যে AMN ও AMC ত্রিভুজ দুটি সদৃশ।

যেহেতু ত্রিভুজ দুটি সদৃশ, তাই এর থেকে আমরা একটা অনুপাত পেতে পারি। সেই অনুপাত থেকে পাবো x-এর মান। অনুপাতটি হলো,

মান বসালে পাবো,

এবার সাধারণ আড় গুণ করলে পাবো,

ওপরে একটু সংক্ষেপে দেখানো হয়েছে। ওটা থেকে না বুঝলে নিচের সমাধানটা দেখে নিতে পারেন।

4x2 + 4x - 4 = 0

4(x2 + x - 1) = 0

(x2 + x - 1) = 0 ÷ 4  [4 দিয়ে ভাগ]

(x2 + x - 1) = 0  [0-কে 4 দিয়ে ভাগ করলে 0 হয়]

এখন আমাদের একটা কাজ বাকি। দ্বিঘাত সমীকরণের মূল নির্ণয়ের সূত্রে শুধু মান বসালেই পেয়ে যাবো x-এর মান। সূত্রটা হলো:

এখানে a = 1, b = 1 এবং c = -1। আর এই মানগুলো বসিয়ে x-এর যে মান পাওয়া যাবে, তা হলো:

আরও পড়ুন

এবার শুরুর ত্রিভুজটার কথা একটু মনে করুন। x ছিল ত্রিভুজের লম্ব। এখানে আমরা দুটি মান পেয়েছি। প্রথমটার মান হয় ০.৬১৮০ এবং দ্বিতীয়টির -১.৬১৮। লম্ব তো ঋণাত্মক হতে পারে না, তাই দ্বিতীয় মানটা গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ, আমাদের x-এর মান ০.৬১৮০।

এতটা পথ এই অভিযানের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই একই সমাধান আপনি ক্যালকুলেটর চেপে কয়েক সেকেন্ডে করতে পারবেন। তবে এখানে আমরা ত্রিকোণমিতি ছাড়া একটা সমস্যার সমাধান করলাম। জ্যামিতির আরও কিছু নিয়ম ঝালিয়ে নেওয়া হলো। পাশাপাশি আমরা এটাও বুঝতে পারলাম, একটি সমস্যার একাধিক সমাধান থাকতে পারে। কিছু সমাধান হয় সহজ ও দ্রুত। কিন্তু কিছু সমাধান সময়সাপেক্ষ হলেও সুন্দর। মাঝেমধ্যে নিজেই এ ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলে মস্তিষ্কের ভালোই ব্যায়াম হবে। মস্তিষ্ক একটু বেশি সচল থাকলে ক্ষতি কী!

সূত্র: থিঙ্ক আর্ট

আরও পড়ুন