বিজ্ঞান জগতে নতুন কী ঘটল? দেখে নিন একনজরে

প্রতিদিন বিজ্ঞানের জগতে ঘটছে নানা ঘটনা। প্রতিমুহূর্তে এগোচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। প্রকাশিত হচ্ছে নতুন গবেষণাপত্র, জানা যাচ্ছে নতুন গবেষণার কথা। কিছু বিষয় এত সুদূর প্রসারী যে এগুলোর প্রভাব বোঝা যাবে আরও অনেক পরে। এরকম নানা বিষয়, নানা ঘটনা দেখে নিন একনজরে, জেনে নিন সংক্ষেপে।

১. আত্মরক্ষার্থে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে এআই

মার্কিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যানথ্রোপিক সম্প্রতি এক রিপোর্টে জানিয়েছেন, তাঁদের নতুন এআই মডেল ‘ক্লড ওপাস ৪’ আত্মরক্ষার্থে ব্ল্যাকমেইলের মতো ভয়ংকর ক্ষতিকর কাজকর্ম করতেও সক্ষম। গত মে মাসে বাজারে আসা এই মডেলটি কোডিং, উচ্চতর কার্যকারণ ও এআই এজেন্টের ক্ষেত্রে নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করবে।

অ্যানথ্রোপিকের রিপোর্টে জানিয়েছে, এই মডেলটি যদি আত্মরক্ষার্থে বা কোনো ঝুঁকির মুখে পড়ে তবে এটি মানবজাতির জন্য বিপজ্জনক কাজও করতে পারে। যদিও এই ধরনের আচরণ এখনও বিরল। তবে আগের মডেলগুলোর চেয়ে নতুন মডেলে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

শুধু অ্যানথ্রোপিকের এআই মডেলেই নয়, অন্যান্য কিছু মডেলেও এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। যেমন, চ্যাটজিপিটির একটি মডেলকে আত্মরক্ষার্থে নিজের কপি গোপনে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এআই বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের আচরণ নিয়ে বারবার সতর্ক করছেন।

কিন্তু কী করেছে অ্যানথ্রোপিকের নতুন মডেল? এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে দেখুন: আত্মরক্ষার্থে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে এআই

২. সৌরজগতের শেষ প্রান্তে নতুন বামন গ্রহ

শিল্পীর কল্পনায় সৌরজগতের নবম গ্রহ
ছবি: নাসা

সৌরজগতের একদম শেষ প্রান্তে, নেপচুনেরও পরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২০১৭ ওএফ২০১ নামের একটি নতুন বামন গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন। এই আবিষ্কারকে বিজ্ঞানীরা সাধারণের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ, এটি শুধু মহাকাশের মানচিত্রে একটি নতুন বস্তু যোগ করেনি বরং এটি বহুল আলোচিত ‘প্ল্যানেট নাইন’ বা ‘প্ল্যানেট এক্স’-এর অস্তিত্ব নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সৌরজগতের নবম গ্রহটি খুঁজছেন। আর এই আবিষ্কার তাই নতুন করে ভাবাচ্ছে। আসলেই কি সৌরজগতে নবম গ্রহ থাকা সম্ভব?

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির গবেষক সিহাও চেং এবং তাঁর সহকর্মীরা প্রথম এই বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে পান চিলির ভিক্টর এম. ব্লাঙ্কো টেলিস্কোপের ডেটাবেস ঘেঁটে। সেখানকার ছবিতে একটি উজ্জ্বল বিন্দু তাঁদের নজরে আসে। সেসব বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, এটি একটি বিশাল বরফঘেরা বস্তু। নেপচুনের পরেই রয়েছে কুইপার বেল্ট নামে এক বিশাল বরফরাজ্য, যা আসলে বরফ ও পাথরে তৈরি ছোট ছোট বিভিন্ন বস্তুর সমাবেশ। এই নতুন বামন গ্রহটিও এই কুইপার বেল্টের মধ্যেই অবস্থিত।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে দেখুন: সৌরজগতের প্রান্তে নতুন বামন গ্রহের সন্ধান

৩. বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা
ছবি: লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়

সম্প্রতি একদল গবেষক বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা তৈরি করেছেন। এর আকার এত ছোট যে তা মানুষের চুলের থেকেও পাতলা বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা। তাঁদের আশা, আণুবীক্ষণিক বেহালাটি ভবিষ্যৎ ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাবে।

যুক্তরাজ্যের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদরা ন্যানোলিথোগ্রাফি (Nanolithography) সিস্টেম ব্যবহার করে এটা বানিয়েছেন। ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেম ব্যবহার করে ন্যানো স্কেলে বিভিন্ন নকশা তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এত ছোট বস্তু তৈরি করা সম্ভব, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এভাবে তৈরি করা বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এই বেহালার আকার দাঁড়িয়েছে লম্বায় ৩৫ মাইক্রন এবং চওড়ায় ১৩ মাইক্রন। অন্যদিকে মানুষের চুলের ব্যাস সাধারণত ১৭ থেকে ১৮০ মাইক্রন পর্যন্ত হয়। সে হিসেবে বেহালাটা আমাদের চুলের থেকেও প্রায় ১৪ গুণ পাতলা।

এত ছোট বেহালা কি বাজানো যাবে? বিজ্ঞানীরা কেন এত কিছু থাকতে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা বানাতে গেলেন? এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে দেখুন: বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা

৪. প্রথম মানবাকৃতি উড়ন্ত রোবট

ইতালীয় গবেষকেরা তৈরি করেছেন পৃথিবীর প্রথম উড়ন্ত মানবাকৃতির রোবট। এর নাম আয়রনকাব এমকে৩ (IronCub Mk3)। তবে এর ডাকা নাম রাখা হয়েছে আইকাব (iCub)। দেখতে এটি একটি শিশুর মতো হলেও এর পিঠে যুক্ত আছে জেটপ্যাক। এই জেটপ্যাকের সাহায্যে রোবটটি মাটি থেকে প্রায় পঞ্চাশ সেন্টিমিটার উঁচুতে উড়তে পারে। এটিই প্রথম কোনো মানবাকৃতির রোবট যা নিজ শক্তিতে মাটি ছেড়ে ওপরে উঠতে পারে। নতুন এই রোবটটি প্রায় তিন ফুট লম্বা ও এর ওজন ২২ কেজি। এর মুখটি বাচ্চাদের খেলনার মতো দেখায়। ২০০৯ সাল থেকে এই রোবটটি ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে দেখুন: প্রথম মানবাকৃতি উড়ন্ত রোবট তৈরি করেছে বিজ্ঞানীরা

৫. ভেরা রুবিন টেলিস্কোপের প্রথম ছবি

মহাকাশপ্রেমীদের জন্য দারুণ এক ছবি প্রকাশ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল টেলিস্কোপ থেকে তোলা প্রথম ছবিগুলো গত ২৩ জুন প্রকাশিত হয়েছে। এসব ছবিতে মহাবিশ্বের অবিশ্বাস্য ও বিশাল রূপ ধরা পড়েছে। সেসব দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বিজ্ঞানীরাও। ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরির এই প্রথম ছবিতে ধরা পড়েছে ট্রিফিড ও লেগুন নেবুলার এক মনোরম গোলাপি দৃশ্য। ধনু নক্ষত্রমণ্ডলে (স্যাজিটেরিয়াস) অবস্থিত এই বিশাল ধূলিকণা ও গ্যাসের মেঘগুলো পৃথিবী থেকে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এই নেবুলা দুটির ছবি আগেও অনেকবার তোলা হয়েছে এবং পেশাদার ও শখের জ্যোতির্বিদরা সেগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে দেখুন: ভেরা রুবিন টেলিস্কোপের প্রথম ছবি প্রকাশ

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি, সায়েন্স এলার্ট, বিবিসি সায়েন্স, অ্যানথ্রোপিক, হাফপাফ, নিউ সায়েন্টিস্ট ও বিজ্ঞানচিন্তা