বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালাছবি: লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়

সম্প্রতি একদল গবেষক তৈরি করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা। এর আকার এত ছোট যে তা মানুষের চুলের থেকেও পাতলা বলে দাবি করেছেন ওই গবেষকদল। তাঁদের আশা করছেন, অণুবীক্ষণিক বেহালাটি ভবিষ্যৎ ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাবে।

যুক্তরাজ্যের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদরা ন্যানোলিথোগ্রাফি (Nanolithography) সিস্টেম ব্যবহার করে এটা বানিয়েছেন। ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেম ব্যবহার করে ন্যানো স্কেলে বিভিন্ন নকশা তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এত ছোট বস্তু তৈরি করা সম্ভব হয়, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এভাবে তৈরি করা বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এই বেহালার আকার দাঁড়িয়েছে লম্বায় ৩৫ মাইক্রন এবং চওড়ায় ১৩ মাইক্রন। অন্যদিকে মানুষের চুলের ব্যাস সাধারণত ১৭ থেকে ১৮০ মাইক্রন পর্যন্ত হয়। সে হিসেবে বেহালাটা আমাদের চুলের থেকেও প্রায় ১৪ গুণ পাতলা।

ন্যানো মিটার (nm) হলো এক মিটারের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ। অন্য ভাবে বললে, ১০টি হাইড্রোজেন পরমাণুকে পরপর রাখলে তার দৈর্ঘ্য হয় এক ন্যানো মিটার।

আরও পড়ুন
এই ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেম ব্যবহার করে একটি বেহালা তৈরি করতে সাধারণত প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। তবে, গবেষক দলটি যেহেতু বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তাই তাঁদের এটি তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লেগেছে।

অনেকে ভাবতে পারে, এত ছোট বেহালা কি বাজানো যাবে? বিজ্ঞানীরা কেন এত কিছু থাকতে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা বানাতে গেলেন?

আসলে লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বেহালাটি বাজিয়ে দেখার জন্য তৈরি করেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, নতুন ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেমের সক্ষমতা যাচাই করতে এটা তৈরি করা হয়েছে। গবেষকেরা অতি ক্ষুদ্র কাঠামো তৈরি করতে, পরবর্তী প্রজন্মের ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো কীভাবে তৈরি করা যেতে পারে এবং সেগুলোর ওপর গবেষণা করার কাজে এটি ব্যবহার করবেন। আর বেহালা বেছে নেওয়ার কারণ ১৯৭০-এর টিভি সিরিজ M*A*S*H-এর একটি সংলাপের কারণে। বিজ্ঞানীরা মজা করে বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বেহালা বাজাতে হলে অণুবীক্ষণিক প্রাণী টার্ডিগ্রেডের আকারের হতে হবে।’

ন্যানো-স্কাল্পটিং মেশিন বা ন্যানোফ্রেজার নামের একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে বেহালাটি তৈরি করেছেন গবেষকরা
ছবি: লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়

লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কেলি মরিসন এ ব্যাপারে বলেন, ‘উপকরণগুলো কীভাবে কাজ করে, তা একবার বুঝতে পারলে সেই জ্ঞানকে নতুন প্রযুক্তি তৈরিতে কাজে লাগানো সম্ভব। এর মাধ্যমে কম্পিউটিংয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর নতুন উপায়ও খুঁজে বের করা যাবে। এর সম্ভাবনা অনেক। তবে, এর জন্য প্রথমে আমাদের মৌলিক বিজ্ঞান বুঝতে হবে, আর এই নতুন সিস্টেমটি ঠিক সেই কাজটাই করতে সাহায্য করছে।’

আরও পড়ুন
যুক্তরাজ্যের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদরা ন্যানোলিথোগ্রাফি (Nanolithography) সিস্টেম ব্যবহার করে এটা বানিয়েছেন। ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেম ব্যবহার করে ন্যানো স্কেলে বিভিন্ন নকশা তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা।

ন্যানো-স্কাল্পটিং মেশিন বা ন্যানোফ্রেজার নামের একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে বেহালাটি তৈরি করেছেন গবেষকরা।। প্রথমে, তাঁরা অতি সূক্ষ্ম ও উত্তপ্ত সুচ ব্যবহার করে পলিমার লাগানো একটি চিপের ওপর বেহালার নকশা আঁকেন। এরপর, পলিমারের যে অংশগুলোতে নকশা আঁকা হয়েছিল, সেগুলো দ্রবীভূত করে সরিয়ে ফেলা হয়। তৃতীয় ধাপে, পলিমারের ফাঁকা জায়গাটি প্লাটিনাম দিয়ে পূরণ করা হয়, যা থেকে মূল বেহালাটি তৈরি হয়েছে। শেষে চিপ ও অবশিষ্ট পলিমার সরিয়ে ফেলে কেবল বেহালাটি তৈরি করে হয়। প্রক্রিয়াটি কিন্তু প্রিন্টিং থেকে অনেকটায় ভিন্ন। কেন না ন্যানোলিথোগ্রাফি যে নকশাটা করেছে তার আকার অনেক ছোট।

এই ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেম ব্যবহার করে একটি বেহালা তৈরি করতে সাধারণত প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। তবে, গবেষক দলটি যেহেতু বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তাই তাঁদের এটি তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লেগেছে। মরিসন বলেন, ‘এই সেটআপের নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহার ও সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে সত্যিই উত্তেজিত। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা কী কী অর্জন করতে পারি, তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। একই সঙ্গে এই সিস্টেম ব্যবহার করে অন্যরা কী করতে পারে, সেটাও দেখার জন্য অপেক্ষায় আছি।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: সায়েন্স এলার্ট, বিবিসি সায়েন্স

আরও পড়ুন