পদার্থবিজ্ঞান আসলে কী

পদার্থবিজ্ঞানের সহজপাঠ - ১

প্রকৃতি কিছু নিয়ম মেনে চলে। প্রকৃতির কিছু সূত্র আছে। সেই সূত্রগুলো ব্যাখ্যা করে পদার্থবিজ্ঞান। প্রকৃতি বলতে অনেকেই গাছপালা বা পশুপাখি বোঝে। ব্যাপারটা এক অর্থে ঠিক। কিন্তু প্রকৃতি শুধু এতে সীমাবদ্ধ নয়। গোটা মহাবিশ্বটাই প্রকৃতির অংশ।

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, অস্ত যায়। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। চাঁদ ঘোরে পৃথিবীর চারপাশে। আটটা গ্রহ, অসংখ্য গ্রহাণু, ছোট ছোট পাথর, ধূমকেত, ধুলাবালি নিয়ে সূর্যের এক বিশাল পরিবার। এই পরিবারকে বলে সৌরজগৎ। সৌরজগৎ আবার মিল্কিওয়ে নামের এক গ্যালাক্সির অংশ। দৃশ্যমান মহাবিশ্বে দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এসব গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধুলাবালি ছাড়াও বিচিত্র কিছু বস্তু আছে। যেমন—ব্ল্যাকহোল, নিউট্রন স্টার, রেড জায়ান্ট, হোয়াইট ডোয়ার্ফ। এগুলো সবই মৃত নক্ষত্রের বিভিন্ন রূপ। দুই ট্রিলিয়ন বা তারও অনেক বেশি গ্যালাক্সি নিয়ে আমাদের যে মহাবিশ্ব, তার অংশ এই সবকিছু। আর প্রকৃতি কীভাবে চলে? কোন নিয়মে মহাবিশ্বের জন্ম হলো, কোন নিয়মে গ্যালাক্সিগুলো কোটি কোটি নক্ষত্রকে বেঁধে রেখেছে, নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে গ্রহেরা কোন নিয়মে, গ্রহের চারপাশে উপগ্রহগুলোই বা কেন ঘুরছে? এসব নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করে যে বিজ্ঞান, সেটাই পদার্থবিজ্ঞান।

তাহলে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের কী হবে? এগুলোও কি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনে চলে? এ প্রশ্নে যাওয়ার আগে আমরা একটু পেছনে চলে যেতে পারি। পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী বলা হয় গ্রিক দার্শনিক থ্যালিসকে।

শুধু মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুদের চলাচল বা আচরণ ব্যাখ্যা করেই পদার্থবিজ্ঞান দায় সারে না। বরং কীভাবে এরা জন্মাল, বেড়ে উঠল, এখন কীভাবে কাজ করে, কীভাবে এরা ধ্বংস হবে—এসবের ব্যাখ্যাও আছে পদার্থবিজ্ঞানে। তাই সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পদার্থবিজ্ঞান আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে—যেমন কোনো বস্তুর নিচে পড়ে যাওয়া, আলো জ্বলা, শব্দ শোনা, বা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়া—এই সবকিছু কেন ও কীভাবে ঘটে, তা বোঝার চেষ্টা করে।

পৃথিবীতে প্রতিদিন কত ঘটনাই তো ঘটছে। সেগুলো সবই পদার্থবিজ্ঞানের মূলনীতি মেনে চলছে। কেউ যদি দাবি করে, একটা যন্ত্র কাজ করছে, কিন্তু সেটা পদার্থবিজ্ঞানের নীতি মানছে না—আপনি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারেন, তার সেই দাবি মিথ্যা। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম না মেনে কোনো ঘটনা শুধু পৃথিবী কেন, মহাবিশ্বের কোথাও ঘটতে পারে না।

আরও পড়ুন

তাহলে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের কী হবে? এগুলোও কি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনে চলে? এ প্রশ্নে যাওয়ার আগে আমরা একটু পেছনে চলে যেতে পারি। পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী বলা হয় গ্রিক দার্শনিক থ্যালিসকে। তিনি কাকতালীয়ভাবে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেন। অ্যাম্বর পাথরকে রেশমি কাপড় দিয়ে ঘষছিলেন। ঘষার পর দেখেন রেশমি কাপড় ছোট ছোট বস্তুকে আকর্ষণ করছে। এটা কেন হলো?

তিনি বুঝলেন, রেশমি কাপড়কে পাথরে ঘষলে এর ভেতর আকর্ষণ শক্তি জমা হয়। আকর্ষণ শক্তি কী? অনেক ভেবেচিন্তে থ্যালিস সিদ্ধান্ত নিলেন, ওটা আসলে ইলেকট্রিসিটি। গ্রিক শব্দ ইলেকট্রন শব্দের অর্থ আকর্ষণকারী বস্তু। আর ইলেকট্রসিটি মানে আকর্ষণকারী বস্তুর যে ধর্ম, তাই।

থ্যালিসের বহু আগেই মানুষ বনের দাবানল দেখে আগুন জ্বালতে শিখেছিল। কীভাবে আগুন জ্বালাতে হয়, তারা সেটা শিখেছিল। কিন্তু আগুনের আচরণ বা প্রকৃতির ব্যাখ্যা তারা জানত না। তেমনিভাবে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় মানুষ উঁচু উঁচু পিরামিড বানাতে শিখেছিল, তৈরি করতে জানত নৌকা। কিন্তু এর পেছনের বিজ্ঞান সম্পর্কে তারা জানত না। তাই সে যুগের প্রকৌশলীদের আর যাহোক, বিজ্ঞানী বলা চলে না।

সেই কাজটি অনেকে করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সবাই সফল হননি। অনেক বিজ্ঞানীর কর্মযজ্ঞের ফল আজকের পদার্থবিজ্ঞানের জগৎ। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ২০০ বছর আগে বলবিদ্যা নিয়ে কাজ করেন গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস।

থ্যালিস বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছিলেন। বিদ্যুৎগতিবিদ্যা বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা। তাহলে কি আমরা থ্যালিসকে পদার্থবিজ্ঞানী বলতে পারি? সত্যি বলতে পদার্থবিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানী শব্দগুলো অনেক পরে এসেছে। একটা সময় বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী বা সায়েন্টিস্টও বলা হতো না। বলা হতো ন্যাচারাল ফিলোসফার। তাই এখন অনেক বিজ্ঞানীকে আমরা পদার্থবিজ্ঞানী বলে জানি বটে, কিন্তু জীবদ্দশায় তাঁরা পদার্থবিজ্ঞানী হিসাবে খ্যাতি পাননি। এই দলে পড়েন স্যার আইজ্যাক নিউটন, গ্যালিলিওর মতো বিজ্ঞানীরা। তবুও আজ তাঁরা পদার্থবিজ্ঞানী। কিন্তু থ্যালিসকে পদার্থবিজ্ঞানী বলা চলে না। কারণ, তিনি ইলেকট্রিসিটি বা বিদ্যুতের ধর্ম খানিকটা বুঝলেও সেগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এমনকি সেগুলো কীভাবে কাজ করে, তার কোনো সূত্র দিতে পারেননি।

আরও পড়ুন

২.

কোনো বস্তু কী, সেটা যেমন ব্যাখ্যা করতে পারে পদার্থবিজ্ঞান, তেমনি জিনিসটা এমন ‘কেন’—সেই উত্তরও দিতে পারে। মানে বস্তুটার জন্ম প্রক্রিয়া এবং সেটার কার্যক্রম কীভাবে চলে, কেন চলে, প্রকৃতির কোন নিয়ম তাকে চালায়, এসবের উত্তর দিতে পারে। এর কিছু ফর্মুলা বা সূত্রও আছে প্রকৃতিতে। পদার্থবিজ্ঞানীদের মূল কাজ হলো প্রকৃতির সেই সূত্রগুলো খুঁজে বের করা।

সেই কাজটি অনেকে করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সবাই সফল হননি। অনেক বিজ্ঞানীর কর্মযজ্ঞের ফল আজকের পদার্থবিজ্ঞানের জগৎ। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ২০০ বছর আগে বলবিদ্যা নিয়ে কাজ করেন গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস। তিনি বিভিন্ন জিনিসপত্র বানিয়ে দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে তুলেছিলেন। পুলি আর লিভারের আবিষ্কারক তিনি। এসব সরল যন্ত্রপাতি দিয়ে যে কঠিন কাজ করানো যায়, তা তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন। এখনো বড় বড় বিল্ডিং বানাতে, পানির পাম্পের জন্য গর্ত খুঁড়তে ব্যবহৃত হয় আর্কিমিডিসের বানানো পদ্ধতি। এমনকি বাষ্পীয় ইঞ্জিনগুলোতে লিভারের আদলে নানা যন্ত্রপাতি বসানো থাকে। তিনি আয়তক্ষেত্র, বৃত্ত ও গোলকের ক্ষেত্রফল বের করার সূত্রও আবিষ্কার করেন। সেগুলো আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানেও বড় ভূমিকা রাখছে। পুলির জন্য একটি সূত্র আবিষ্কার করেন তিনি। সেই সূত্রকে বলে পুলির নীতি। আর্কিমিডিসের আরেকটি আবিষ্কার আর্কিমিডিসের স্ক্রু নামের একটি যন্ত্র, যা দিয়ে নিচু স্থান থেকে উঁচু স্থানে পানি তোলা যায়। লিভারের কর্মপদ্ধতিও আর্কিমিডিস ব্যাখ্যা করেছেন। আরও আবিষ্কার করেছেন বস্তুর আপেক্ষিক গুরুত্বের সূত্র। সেগুলো জ্যামিতি ও যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর সূত্রগুলোর গাণিতিক রূপ দিয়েছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন, ফরাসি গণিতবিদ ড্যানিয়েল বার্নুলি ও সুইস গণিতবিদ লিওনার্দ অয়লার। সুতরাং আর্কিমিডিসকে পদার্থবিজ্ঞানী বলাই যায়।

মধ্যযুগ জুড়ে ইউরোপে ছিল অন্ধকার যুগ। সেসময় জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকশিখা জ্বালিয়ে রেখেছিলেন ভারতীয়, চীনা, আরব আর পারস্যের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনেক কাজই পরে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। কিন্তু ওভাবে তাঁরা প্রচারের আলো পাননি। পদার্থবিজ্ঞানে এসব বিজ্ঞানীদের কাজ আছে অনেক। সেগুলো নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

মধ্যযুগের শেষভাগে ইউরোপীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম অগ্রপথিক হলেন টাইকো ব্রাহে, জিওর্দানো ব্রুনো ও কোপর্নিকাস। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানের যোগযোগটা তৈরি করে যেতে পারেননি। কাউকে না কাউকে তো কাজটা করতেই হতো। সেই কাজটাই একসঙ্গে করেছেন দুই প্রতিবেশি দেশের দুই অমর বিজ্ঞানী। একজন জার্মান বিজ্ঞানী জোহান কেপলার। অন্যজন ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি।

শুরুতে বলেছিলাম, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানও পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে। আগে রাসায়নিক বিক্রিয়া করা হতো অনেকটা উপাদানগুলোর বাহ্যিক হিসাব থেকে। কিন্তু এর ভেতরে যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আইন চলে, সেটা রসায়নবিদরা জানতেন না।

কেপলার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করে নক্ষত্রের শ্রেণিবিন্যাস করতেন। সেটা করতে গিয়েই এক সময় তাঁর হাতে চলে আসে গ্যালিলিওর তৈরি একটা উন্নতমানের দূরবিন। এই দূরবিন জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানের মেলবন্ধনের পথ খুলে দেয়।  তিনি গ্রহদের গতি-প্রকৃতি ব্যাখ্যা করেন। ১৬০৯-১৬১৯ সালের মধ্যে তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন তিনি। তবে গাণিতিক ফর্মুলায় সূত্রগুলো গেঁথে যেতে পারেননি। তাঁর সূত্রগুলো গ্রহদের চলার পথ, এদের কক্ষপথের আকার, গ্রহের গতি ইত্যাদি ব্যাখ্যা করতে পারে। নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের বীজ লুকিয়ে ছিল এই সূত্রগুলোর মধ্যেই। কেপলারের সূত্রগুলোও জ্যামিতি আর যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে হতো। এগুলোর গাণিতিক রূপ দেন আইজ্যাক নিউটন। কেপলারকেও তাই পদার্থবিজ্ঞানী বলাই যাই।

সত্যিকার অর্থেই পদার্থবিজ্ঞানী বললে ইতিহাসে সবার আগে জ্বলজ্বল করে ওঠে গ্যালিলিওর নাম। তিনি চারপাশের বস্তুজগৎ ও বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে নানারকম যুক্তি কষতেন মনে মনে। তারপর সেসব যুক্তি পরীক্ষা করতেন। পরীক্ষায় পাশ করলেই সেগুলো সূত্র ও ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলতেন। এভাবেই গ্যালিলিও সরল দোলকের সূত্র আবিষ্কার করে আবিষ্কার করেন পড়ন্ত বস্তুর সূত্র। নিউটনের গতিসূত্রগুলোও গ্যালিলিওর কাজের আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা। আলবার্ট আইনস্টাইন যে বিশেষ ও সাধারণ আপেক্ষিকতা আবিষ্কার করেছেন, সে জন্যও তিনি গ্যালিলিওর কাছে অনেকটাই ঋণী।

গ্যালিলিও সেই যুগে সবচেয়ে উন্নত টেলিস্কোপ তৈরি করেন। সেই টেলিস্কোপের সাহায্যে তিনি আবিষ্কার করেন বৃহস্পতি গ্রহের চারটি চাঁদ। গতিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা ও বলবিদ্যাকে একটা কাঠামোতে আবদ্ধ করে পদার্থবিজ্ঞানে ভিত্তি তৈরি করে দেন তিনি।

আরও পড়ুন

৩.

পদার্থবিজ্ঞান কোনো প্রাকৃতিক ঘটনার ‘কী’, ‘কেন’ ও ‘কীভাবে’-এর ব্যাখ্যা দিতে পারে। তাই শুধু বস্তু নয়, বল ও শক্তির মতো যেসব জিনিস ধরা যায় না বা ছোঁয়া যায় না, সেসবের আচরণেরও ব্যাখ্যা দিতে পারে। মোট কথা, পরিমাপযোগ্য সবকিছুরই চরিত্র ও ধর্মের ব্যাখ্যা রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানে। এর বেশ কিছু মৌলিক ও ফলিত শাখা আছে।

তাপ বা আলো কোনো বস্তু নয়, তবু এদের প্রাকৃতিক চরিত্র ব্যাখ্যা করতে পারে পদার্থবিজ্ঞান। এজন্য আছে দুটি শাখা—আলোকবিজ্ঞান ও তাপগতিবিদ্যা। বড় বস্তুদের গতি-প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয় বলবিদ্যা বা গতিবিদ্যা। মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রদের গতি-প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার জন্য আছে জ্যোতির্বিদ্যা। মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করে কসমোলজি। আর বিদ্যুৎগতিবিদ্যা ব্যাখ্যা করে বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ।

কেপলার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করে নক্ষত্রের শ্রেণিবিন্যাস করতেন। সেটা করতে গিয়েই এক সময় তাঁর হাতে চলে আসে গ্যালিলিওর তৈরি একটা উন্নতমানের দূরবিন। এই দূরবিন জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানের মেলবন্ধনের পথ খুলে দেয়।

পদার্থবিদ্যার সবগুলো শাখাকে মোটা দাগে দুটি বড় শাখায় ফেলা যায়। একটা চিরায়ত বলবিদ্যা—জ্যোতির্বিদ্যা, গতিবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, বিদ্যুৎ ও তাপ গতিবিদ্যা। অন্যদিকে খুদে কণার জগতে আছে পরমাণুর ভেতরের জগৎ ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ও কোয়ার্কের চরিত্র বিশ্লেষণ করে আরেকটি শাখা। এই শাখাকে বলে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা।

শুরুতে বলেছিলাম, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানও পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে। আগে রাসায়নিক বিক্রিয়া করা হতো অনেকটা উপাদানগুলোর বাহ্যিক হিসাব থেকে। কিন্তু এর ভেতরে যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আইন চলে, সেটা রসায়নবিদরা জানতেন না। এমনকি পরমাণুর অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার পরও এর কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে ছিল না। ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন পরামাণু তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্যে। এছাড়া রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো তাপগতিবিদ্যা ও বিদ্যুৎগতিবিদ্যার নিখুঁত হিসাব মেনে চলে।

জীবদেহের ভেতরে চলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার খেলা। সেগুলো যেহেতু পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলো মেনে চলে, তাই জীববিজ্ঞানও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনে চলতে বাধ্য। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, প্রাণীদের মস্তিষ্কে স্নায়বিক সব কার্যাবলি নিয়ন্ত্রিত হয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাহায্যে।

লেখক: সাংবাদিক

আরও পড়ুন