আবিষ্কারের কাহিনি
কোয়ান্টামের রাজপুত্র
ইলেকট্রন কণা, নাকি তরঙ্গ? কিংবা ফোটন? কোয়ান্টামের রাজপুত্র লুই ডি ব্রগলি। বাস্তবেও তিনি সত্যিকার এক রাজপুত্র। সেই রাজপুত্র আপাত অবাস্তব এক ধারণার কথা বললেন। ইলেকট্রন বা ফোটনই শুধু নয়, সবকিছুই নাকি একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গ! কীভাবে এ ধারণায় পৌঁছালেন তিনি? ফ্রান্সের রাজপুত্র কীভাবে কোয়ান্টামের রাজপুত্র হয়ে উঠলেন?
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ঘটনা। সময়টা ১৯২৪ সালের বসন্ত। একটা পার্সেল পড়ে আছে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের ডেস্কে। প্যারিসের এক ডাকঘরের সিলছাপ্পর মারা। খাম খুললেন আইনস্টাইন। প্যারিস থেকে তাঁর এক বন্ধু পাঠিয়েছেন পার্সেলটা। নাম পল লজভা। একাধারে ফ্রান্সের অন্যতম সম্মানিত পদার্থবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক। তাঁর আরও পরিচয়—মেরি কুরির সাবেক প্রেমিক। চিঠির সঙ্গে একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রও রয়েছে। সেটা পড়ে তাঁকে মতামত দিতে বলেছেন লজভা।
গবেষণাপত্রটা সামনে মেলে ধরলেন আইনস্টাইন। ফরাসি ভাষায় শিরোনাম লেখা ‘রিসার্চেস সার লা থিওরি ডেস কোয়ান্টা’। সরল বাংলায়, ‘কোয়ান্টাম নিয়ে গবেষণা’। গবেষণাপত্রটা বেশ ছোট। লেখক নিজের ডক্টরাল থিসিস হিসেবে উপস্থাপন করতে চান সেটা। তবে তাঁর নামটা আগে শোনেননি আইনস্টাইন। নাম লুই ডি ব্রগলি। ফ্রান্সের প্রিন্স। একজন সত্যিকার রাজপুত্র! তবে লেখকের বয়সটা বেশি বলে মনে হলো আইনস্টাইনের কাছে। ৩১ বছর। সাধারণত আরও আগেই ডক্টরেট থিসিস করে ফেলেন অন্যরা। এ ক্ষেত্রে বয়সটা একটু বেশিই বটে। আইনস্টাইন মনে মনে ভাবেন, লোকটা আজীবনের ছাত্র নাকি? কবি সুনির্মল বসুর সেই কবিতার মতো, ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবে নানান জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’
অনেক আগে থেকে তাঁদের পরিবার ফ্রান্সে অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত হিসেবে পরিচিত। পরিবারটি ফ্রান্সে আসে উত্তর ইতালির পিডমন্ট থেকে। দ্বাদশ শতক থেকেই সেখানে পরিবারের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কমান্ডার ও মঠের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
লজভা যেহেতু পাঠিয়েছেন, কাজেই গবেষণাটা যে এলেবেলে হবে না, তাতে নিশ্চিত আইনস্টাইন। সেটা পড়তে শুরু করলেন। সত্যি বলতে কি, গবেষণাপত্রটা বেশ সহজ-সরল। তাঁর নিজের আবিষ্কৃত আপেক্ষিকতার সমীকরণও ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে। পড়ে মুগ্ধ হন আইনস্টাইন। বস্তুর প্রকৃতিকে নতুন চোখে দেখার উপায় বাতলেছেন ডি ব্রগলি। ধারণাটাকে বৈপ্লবিকও বলা চলে। কিন্তু এর লেখক যে দাবি করেছেন, সেটা কি সত্যি? আর কেই–বা এই লোক?
২.
লোকটির পুরো নাম প্রিন্স লুই ভিক্টর পিয়েরে রেমন্ড ডি ব্রগলি। তবে সবার কাছে লুই ডি ব্রগলি নামে পরিচিত। লুইয়ের জন্ম ১৮৯২ সালের ১৫ আগস্ট। ফ্রান্সের দিয়েপে। চার ভাইবোনের মধ্যে লুই ছিলেন সবার ছোট।
অনেক আগে থেকে তাঁদের পরিবার ফ্রান্সে অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত হিসেবে পরিচিত। পরিবারটি ফ্রান্সে আসে উত্তর ইতালির পিডমন্ট থেকে। দ্বাদশ শতক থেকেই সেখানে পরিবারের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কমান্ডার ও মঠের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এ পরিবারের বংশধরেরা ফ্রান্সে রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েক শতক ধরে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের তিন মার্শাল ও দুই প্রধানমন্ত্রী। ফরাসি সম্রাট এককালে তাঁদের ‘ডিউক’ উপাধি দিয়েছিলেন। ‘প্রিন্স’ উপাধি দিয়েছিলেন জার্মান সম্রাট। কাজেই জন্মগতভাবে লুই ডি ব্রগলি একাধারে ফরাসি ডিউক ও জার্মান প্রিন্স। আক্ষরিক অর্থেই রাজপুত্র। লুইও যে পূর্বপুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একদিন কেউকেটা হবেন, ছোটবেলা থেকেই সেটা আশা করত তাঁর পরিবার।
ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক বিলাসিতা ও অঢেল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেড়ে ওঠেন লুই। অবশ্য পারিবারিক নিয়মকানুনের বেড়াজালে মা-বাবার সঙ্গ সেভাবে পাননি। শুধু মা–বাবা নন, ভাইবোনদের মধ্যেও সম্পর্কটা বাঁধা ছিল আভিজাত্যের কাঁটাতারে। অনেকটা আনুষ্ঠানিক। গৎবাঁধা। পড়ালেখাও শুরু হয়েছিল পারিবারিক গণ্ডির মধ্যেই। স্কুল-কলেজে নয়, প্রাইভেট টিউটর বাসায় এসে পড়াতেন। ছোটবেলা থেকে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তে হতো লুইকে। শুধু পড়াই শেষ কথা নয়, পরিবারের কাছে পত্রিকা পড়ে বক্তৃতাও দিতে হতো প্রতিদিন। মাত্র ১০ বছর বয়সে ফ্রান্সের থার্ড রিপাবলিক সরকারের সব মন্ত্রীর নাম গড়গড় করে মুখস্থ বলে যেতে পারতেন লুই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা দেরিতে পা রেখেছিলেন। পেছনে কারণও ছিল যথেষ্ট। আসলে অভিজাত পরিবারের দায়িত্ব এবং ইউরোপের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে তাঁর একাডেমিক ক্যারিয়ারের গতি ধীর হয়ে গিয়েছিল।
লুই ডি ব্রগলির বাবা লুই আলফোন্স-ভিক্টর পঞ্চম ডাক ডি ব্রগলি ছিলেন ফ্রান্সের পার্লামেন্টারি ডেপুটি। দাদা ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ভবিষ্যতে তিনিও যে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফ্রান্সের রাষ্ট্রনায়ক বা বড় কোনো দায়িত্ব পালন করবেন, এমনটাই চাইত তাঁর পরিবার। সেভাবে তাঁকে গড়ে তোলা হচ্ছিল। কিন্তু লুইয়ের ১৪ বছর বয়সে বাবা মারা যান। লুইকে দেখভালের দায়িত্ব পড়ে বড় বোন পলিনের কাঁধে। মানে কাউন্টেস ডি পঞ্জ পলিন ডি ব্রগলি। ছোট ভাইকে ভালোবাসতেন, আগলে রাখতেন। তাঁর চোখে ছোট্ট লুই ছিলেন ধোপদুরস্ত ছেলে, যার মাথায় পুডলের মতো কোঁকড়ানো চুল, হাসিখুশি মুখ আর চোখের তারায় দুষ্টুমি।
সারা দিন বালকসুলভ কথার খই ফুটত লুইয়ের মুখে। কঠোর নিষেধ সত্ত্বেও খাবারের টেবিলে বকবক থামাতে পারতেন না। সঙ্গে ছিল দুরন্তপনা। এভাবে দুর্গের মতো অট্টালিকার অন্ধকার কোণের নির্জনতাও ভেঙে খানখান হয়ে যেত। বিশাল অট্টালিকার নির্জনতায় সমবয়সী বন্ধুর অভাব পূরণ করেছিল পারিবারিক লাইব্রেরি। ছোটবেলা থেকে প্রচুর বই পড়তেন। এভাবে মনের মধ্যে গড়ে ওঠে একান্ত ফ্যান্টাসির এক জগৎ। তবে এই প্রায় নিরালা–নির্জন পরিবেশ তাঁর মনে এক ভয়ের জগৎও তৈরি করেছিল। তাই পায়রার ডানা ঝাপটানোতেও আঁতকে উঠতেন তিনি। ভয় পেতেন বিড়াল-কুকুরকেও। মাঝেমধ্যে সিঁড়িতে নিজের বাবার জুতার শব্দেও আতঙ্কিত হতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা দেরিতে পা রেখেছিলেন। পেছনে কারণও ছিল যথেষ্ট। আসলে অভিজাত পরিবারের দায়িত্ব এবং ইউরোপের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে তাঁর একাডেমিক ক্যারিয়ারের গতি ধীর হয়ে গিয়েছিল।
ব্রগলি পরিবারের আরেকজন লুইয়ের খেয়াল রাখতেন। তিনি বড় ভাই মরিস। পরিবারের অন্যদের মতো ছিলেন না তিনি। সেনাবাহিনীতে যোগ না দিয়ে মরিস যোগ দেন নৌবাহিনীতে। জাহাজে তারহীন যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করেন তিনি। এ সময় পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে রেডিও ইলেকট্রিক তরঙ্গ নিয়ে এক গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেন মরিস।
সে সময় ইউরোপে সদ্য আবিষ্কৃত এক্স-রে নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক উত্তেজনা। সেই ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল মরিসের ওপর। সিদ্ধান্ত নিলেন, বিজ্ঞানী হবেন। পরিবারের, বিশেষ করে বাবার অমতে ইস্তফা দিলেন নেভি থেকে। তারপর ১৯০৪ সালে ভর্তি হলেন প্যারিসের নামকরা কলেজ ডি ফ্রান্সে। তা–ও মেরি কুরির সাবেক প্রেমিক পল লজভার অধীনে। এখান থেকে ১৯০৮ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন মরিস।
বইটা উপহার হিসেবে তুলে দিলেন লুইয়ের হাতে। সে যুগের সেরা বিজ্ঞানীদের ধারণা এবং যুক্তিতর্কের সমাহার ছিল সেটা। বেশ আগ্রহ নিয়ে ট্রান্সক্রিপ্টটা পড়তে শুরু করলেন লুই। যতই পড়েন, ততই উত্তেজিত হতে থাকেন।
এর মধ্যেই প্যারিসের কেন্দ্রে অবস্থিত রু স্যাতুব্রিয়নে পারিবারিক এক আবাসস্থলে নিজের ল্যাবরেটরি গড়ে তোলেন তিনি। সেটা জীবন্ত প্রাণীর মতো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। অচিরেই ভবনের অধিকাংশ জায়গা দখল করে ফেলে ল্যাবটা। বাদ পড়ে না গেস্টরুমের বাথরুম আর ঘোড়ার আস্তাবলও। সেখানে ট্রান্সফরমারের সঙ্গে এক্স-রে নিঃসরণকারী ভ্যাকুয়াম টিউব সংযুক্ত করা হয় বিদ্যুতের তার দিয়ে। ছিল নানান যন্ত্রপাতি। বড় ভাইয়ের ল্যাব আর সেখানকার কিম্ভূতদর্শন যন্ত্রপাতির বিচিত্র শব্দে তাক লেগে যেত ছোট্ট লুইয়ের। ছোট ভাইয়ের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কে নিজের টগবগে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতেন মরিস। তাঁকে বিকিরণ ও ইলেকট্রন সম্পর্কে নানা কথা বলতেন।
১৯১১ সালের অক্টোবরে ব্রাসেলসের হোটেল মেট্রোপোলে বসল প্রথম সলভে কনফারেন্স। একে বলা হয় সে যুগের বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলেন। তাতে যোগ দিলেন গোটা ইউরোপের নামকরা বিজ্ঞানীরা। ফ্রান্স থেকে এলেন মেরি কুরি ও হেনরি পয়েনকেয়ার; জার্মানি থেকে কোয়ান্টাম–গুরু ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, আলবার্ট আইনস্টাইন ও আর্নল্ড সমারফেল্ড। ব্রিটেন থেকে এলেন আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, নেদারল্যান্ডস থেকে হেনড্রিক লরেঞ্জ। আমন্ত্রণ পেলেন মরিস ডি ব্রগলিও। সঙ্গে নিয়ে গেলেন ১৯ বছর বয়সী ছোট ভাই লুইকে। দূর থেকে সবকিছু দেখতে লাগলেন ফরাসি রাজপুত্র।
সেখানে কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও বিকিরণ নিয়ে আলোচনা চলল। সম্মেলনের সেক্রেটারি নির্বাচিত হলেন মরিস। বিজ্ঞানীদের সেই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ট্রান্সক্রিপ্ট লেখার দায়িত্বও দেওয়া হলো তাঁকে। দায়িত্বটা ঠিকঠাকই পালন করলেন তিনি। আলোচনাগুলো লেখার পর তা দিয়ে প্রকাশ করলেন প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার একটা বই।
বইটা উপহার হিসেবে তুলে দিলেন লুইয়ের হাতে। সে যুগের সেরা বিজ্ঞানীদের ধারণা এবং যুক্তিতর্কের সমাহার ছিল সেটা। বেশ আগ্রহ নিয়ে ট্রান্সক্রিপ্টটা পড়তে শুরু করলেন লুই। যতই পড়েন, ততই উত্তেজিত হতে থাকেন। তাঁর সামনে একে একে খুলে যেতে লাগল আনকোরা এক জগৎ। আরও জানার কৌতূহল জাগল মনের গভীরে। সেটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। বড় ভাইয়ের মতো তিনিও সিদ্ধান্ত নিলেন বিজ্ঞানী হওয়ার। তাঁর নিজের ভাষায়, এখন থেকে ‘শুধু বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকবেন।’
লুইয়ের মনে হলো, ‘সমাজ–সংসার মিছে সব, মিছে জীবনের কলরব।’ এর আগেই তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল প্যারিসের সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের মেয়ের সঙ্গে। সে বিয়েও ভেঙে দিলেন লুই। নিজের চেম্বার থেকে তাসের কার্ড ও দাবা বোর্ড নিষিদ্ধ করলেন। ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে হটিয়ে দিলেন ইতিহাসের সব বই। বিজ্ঞান, বিশেষত পদার্থবিজ্ঞানের বই দিয়ে সাজালেন সেটা। সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে আনলেন ন্যূনতম পর্যায়ে। এখন আর কিছুই নয়, শুধুই বিজ্ঞান নিয়েই কাটাবেন দিনরাত। বিজ্ঞানই তাঁর ধ্যান, জ্ঞান, প্রেম।
কিন্তু ছোট্ট রাজপুত্রকে তখন আর চিনতে পারেন না বড় বোন পলিন। এতকাল যে লুইকে চিনতেন, তিনি যেন চিরতরে হারিয়ে গেলেন। এখন রাজপুত্রের সারা দিন কাটে নিজের ঘরে। গণিতের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে। পাতার পর পাতা জটিল গাণিতিক আঁকিবুঁকি কেটে। পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হন না। এটাই হয়ে উঠল লুইয়ের প্রতিদিনের রুটিন। এর খুব একটা নড়চড় হয় না।
১৯১৩ সালের দিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু আগের কথা। সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব শেষ করতে আর্মি ইঞ্জিনিয়ার কর্পসে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন লুই। তাঁর দায়িত্ব সিগন্যাল কর্পসে। আইফেল টাওয়ারের নিচে বসল তাঁদের স্টেশন। সেখান থেকে রেডিওটেলিগ্রাফ রিলে করা হতো। লুই ছিলেন রেডিও ইঞ্জিনিয়ার। শত্রুপক্ষের যোগাযোগব্যবস্থা ইন্টারসেপ্ট করতে ব্যবহৃত রেডিও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল তাঁর। তরুণ হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে থাকা লুইয়ের জন্য ছিল বেশ স্বস্তিদায়ক। তবু তাঁর জন্য সময়টা ছিল কঠিন। কারণ, বিজ্ঞান নিয়ে দৈনন্দিন ঘরসংসারে ছেদ পড়েছিল এই যুদ্ধের কারণে। সেই ব্যস্ততার মধ্যেও যতটা সম্ভব নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন লুই। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের বিদ্যুৎ–চৌম্বকীয় তরঙ্গ তত্ত্ব গভীরভাবে অধ্যয়ন করছিলেন।
যুদ্ধ শেষ হলো ১৯১৯ সালে। ফরাসি সেনা দল থেকে এবার বড় ভাই মরিসের ল্যাবে যোগ দেন লুই। সেখানে তখন এক্স-রে নিয়ে তুমুল গবেষণা চলছে। ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেখানে গবেষণা করতে যান সত্যেন্দ্রনাথ বসু। আমাদের সত্যেন বোস।
১৯১১ সালের অক্টোবরে ব্রাসেলসের হোটেল মেট্রোপোলে বসল প্রথম সলভে কনফারেন্স। একে বলা হয় সে যুগের বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলেন। তাতে যোগ দিলেন গোটা ইউরোপের নামকরা বিজ্ঞানীরা।
যুদ্ধের পর শুধু একজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন লুই। তিনি তরুণ চিত্রশিল্পী জ ব্যাপটিস্ট ভাসেক। ছবি আঁকতেন, ছবি সংগ্রহ করতেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে শান্তি পেতেন লুই। পাশাপাশি বসে নিশ্ছিদ্র নীরবতাও উপভোগ করতেন দুজনে। ভাসেককে সত্যিই আপন করে নিয়েছিলেন লুই। কিন্তু একদিন হুট করে আত্মহত্যা করে বসেন ভাসেক। চিরকুটে প্রিয় লুইকে লিখে গেলেন। সেখানে কোনো ব্যাখ্যা বা কার্যকারণ নেই। শুধু তাঁর সংগ্রহ করা ছবিগুলোর যত্ন নেওয়ার অনুরোধ।
বন্ধুর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে সর্বশক্তি খরচ করলেন লুই। এক পাশে সরিয়ে রাখলেন পদার্থবিজ্ঞান পড়ালেখা। বন্ধুর সংগৃহীত ছবির প্রদর্শনী আয়োজন করলেন। কিন্তু ভাসেকের আঁকা ছবি নিয়ে ব্যঙ্গ করে বসল এক স্থানীয় দৈনিক। ভীষণ আহত হলেন লুই ডি ব্রগলি।
রাগে-দুঃখে টানা কয়েক মাসের স্বেচ্ছানির্বাসন বেছে নিলেন তিনি। নিজের ঘরে। ঘর থেকে বের হন না, কারও সঙ্গে কথা বলেন না। খাওয়াদাওয়াও প্রায় ছেড়ে দিলেন। সেটা ১৯২৩ সালের দিকের ঘটনা। বড় বোন পলিন নিয়ম করে ঘরের বন্ধ দরজার সামনে খাবার রেখে যান। দিনের পর দিন তার প্রায় কিছুই স্পর্শ করেন না লুই। পলিনের সন্দেহ, এভাবে তাঁদের ছোট্ট রাজপুত্র অনাহারে ধীরে ধীরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাইছেন। মরিয়া হয়ে দ্রুত অন্য ভাইদের ডাকেন পলিন। মরিসসহ বাড়ির পাঁচ পরিচারিকা লুইয়ের দরজা ভেঙে ফেলেন। তারপর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান তাঁর বিছানার দিকে। ভেবেছিলেন, ওখানেই পাওয়া যাবে ফরাসি রাজপুত্রের অচেতন দেহ।
কিন্তু একি কাণ্ড! পরিপাটি পোশাকে নিজের ঘরে দাঁড়িয়ে আছেন লুই। চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার। ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট। একরাশ সাদা ধোঁয়া ছেড়ে মরিসের দিকে এগিয়ে দিলেন একতাড়া কাগজ। তাতে সারি সারি সমীকরণে ঠাসা। তারপর মরিসকে বললেন, ‘দেখো তো, আমি ঠিক আছি কি না।’
৩.
আগেই বলেছি, ফরাসি সেনাদলে কাজ করার সময় অবসরে চিরায়ত তরঙ্গ তত্ত্ব শিখতেন লুই। সে তত্ত্বে আলোকে তরঙ্গ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যুদ্ধের পর এর ঠিক বিপরীত তত্ত্ব শেখেন ভাই মরিসের কাছে। আলোর কণা তত্ত্ব। ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট ব্যাখ্যা করতে আলোকে ফোটন কণা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন আইনস্টাইন। সে জন্য ধার করেছিলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব। এতে প্রশ্ন উঠল, তাহলে আলো আসলে কী? কণা, নাকি তরঙ্গ? ঠিক এখানে এসে আলোর এই দুই পরস্পরবিরোধী ধর্মের মধ্যে এক যোগসূত্র খুঁজে পান লুই।
১৯২৩ সালে সমাজ-সংসার ছেড়ে দীর্ঘ স্বেচ্ছানির্বাসনে নিঃসঙ্গ ও ঘরবন্দী থাকার সময় ধারণাটা মাথায় আসে লুইয়ের। তাঁর ধারণাটা সরল, কিন্তু দুঃসাহসী। আইনস্টাইনের ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টের ব্যাখ্যা মাথায় রেখে লুই নিজেকে প্রশ্ন করেন, আলো যদি কণার স্রোতের মতো আচরণ করতে পারে, তাহলে কণা কি কখনো তরঙ্গের মতো আচরণ করতে পারে? ধারণাটা একেবারে নতুন ও দুঃসাহসী। এর সপক্ষে কোনো তাত্ত্বিক ভিত্তিও নেই। এভাবে আগে কেউ ভাবেনি। কাজেই গহিন এক অন্ধকারে পা বাড়ালেন লুই। স্রেফ একা। তখন পর্যন্ত ধারণা করা হতো, কণা হলো ভরের ঘনবদ্ধ সন্নিবেশ। তরঙ্গের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
বেশি জটিল কোনো পথে গেলেন না লুই। স্রেফ আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E = mc2 এবং ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের সমীকরণ E = hf একত্র করলেন। এভাবে নির্ণয় করলেন চলমান প্রতিটি কণার তরঙ্গদৈর্ঘ্য। হিসাবে দেখা গেল, কণা যত দ্রুত ছোটে, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য তত ছোট।
এটা কি স্রেফ গাণিতিক কৌশল? নাকি আরও বেশি কিছু? লুই ডি ব্রগলি যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ণয় করলেন, তার সঙ্গে কি প্রকৃত তরঙ্গের কোনো সম্পর্ক আছে? উত্তরটা তিনিও জানেন না। সেটাই মিলিয়ে দেখতে চাইলেন এবার। তা করতে গিয়ে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে যেতে হলো লুইকে। নীলস বোরের পরমাণুর মডেল অনুসারে, পরমাণুর সবচেয়ে ভেতরের কক্ষপথে একটা ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য হিসাব করলেন ব্রগলি। দেখা গেল, সেটা তার কক্ষপথের পরিধির সমান। দ্বিতীয় কক্ষপথের একটি ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য হিসাব করে দেখা গেল, ইলেকট্রনের কক্ষপথের পরিধি তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দ্বিগুণ। তৃতীয় কক্ষপথের পরিধি পাওয়া গেল ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তিন গুণ। বাকিগুলোও পাওয়া গেল একই নিয়মে। ব্যাপারটা বিস্ময়কর লাগল লুইয়ের কাছে। কাকতালীয়? নাকি তার চেয়ে বেশি কিছু?
না, কাকতালীয় নয়। সেটা বোঝা গেল অচিরেই। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। আসলে এর মাধ্যমে যেন পরমাণুর গহিনের সুর শুনতে পেলেন লুই ডি ব্রগলি। ইলেকট্রনের বিভিন্ন কক্ষপথের এই ধারাবাহিক তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলোকে গিটারের তারের মৌলিক কম্পাঙ্কের সঙ্গে তুলনা করা চলে। গিটারের তারগুলোর মধ্যে কম্পাঙ্কের ধারাবাহিকতার কারণে যন্ত্রটা বাজালে তা সুরেলা শোনায়। পরমাণুর ভেতরেও প্রথম কক্ষপথ থেকে পরের কক্ষপথের ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্যও যেন তেমনই সুরের খেলা। আচমকা সেটিই আবিষ্কার করে বসেন লুই।
লুইয়ের আবিষ্কৃত বস্তুকণার তরঙ্গধর্ম নিয়ে সে সময় খুব উত্তেজিত ছিলেন আইনস্টাইন। থিসিসটা পড়ার প্রায় পরপরই আণবিক বিকিরণে পরীক্ষণ পদার্থবিদ সহকর্মীদের এর প্রমাণ খুঁজতে বলেন।
ধারণাটা ১৯২৩ সালের শেষ দিকে দুটি পেপারে প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু তেমন কারও চোখে পড়ল না। সামনে তাঁর ডক্টরাল থিসিস জমা দিতে হবে। সে জন্য আটঘাট বেঁধে নামলেন। সদ্য আবিষ্কৃত ধারণাটা নিয়ে থিসিস লিখলেন তিনি। কিন্তু তাঁর সুপারভাইজার ও পরীক্ষকেরা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। কথিত আছে, তাঁর থিসিস পরীক্ষকদের চারজনের মধ্যে মাত্র একজন কোয়ান্টাম তত্ত্বটা ঠিকমতো বুঝতেন; তিনি অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী পল লজভা। তবে লুই কোয়ান্টাম তত্ত্বে যে নতুন ধারণা আমদানি করলেন, তা সঠিক কি না, সেটা বুঝতে পারছিলেন না লজভা। গাণিতিকভাবে লুইয়ের ইলেকট্রনের তরঙ্গ ধারণাটি সহজ, কিন্তু তখনকার প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যুক্তিহীন বলে মনে হয়। তাই বন্ধু আইনস্টাইনের শরণাপন্ন হন তিনি। চিঠিসহ থিসিস পেপারটা পাঠিয়ে দেন আইনস্টাইনের কাছে। পরের কাহিনি তো শুরুতে বলেছি।
আইনস্টাইন পেপারটা পড়ে মুগ্ধ হন ঠিকই, তবে ব্যাপারটা নিয়ে শুরুতে তিনিও সন্দিহান ছিলেন। তাই দীর্ঘদিন লজভার চিঠির জবাব দেননি। এদিকে থিসিসটা প্রকাশের অযোগ্য কি না, সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান লজভা। কয়েক মাস পর লজভা আবারও তাড়া দিয়ে চিঠি লেখেন আইনস্টাইনকে। এবার সাড়া দেন আপেক্ষিকতার জনক। ছোট্ট চিঠিতে আইনস্টাইন লেখেন: ‘খুব আকর্ষণীয় ধারণা।’ ডি ব্রগলি যে প্রকৃতির রহস্যের একটা চাদর তুলে ধরেছেন, তা–ও লেখেন তিনি।
এবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন লজভা। সংক্ষিপ্ত হলেও আইনস্টাইনের মন্তব্যের তাৎপর্য তাঁর কাছে অনেক। ১৯২৪ সালের নভেম্বরে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে লুই ডি ব্রগলিকে ডাকা হয় তাঁর থিসিস ডিফেন্ড করার জন্য। কিছুটা আনুনাসিক, সম্ভ্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলতে শুরু করেন: ‘…যাঁরা এই যুক্তিটা প্রত্যাখ্যান করতে চান, তাঁরা বলেন, এ ধরনের মতবাদ মেনে নেওয়ার অর্থ যুক্তি ত্যাগ করা। কিন্তু তাঁদের আমি বলতে চাই, সব পদার্থ এই দ্বৈততার অধিকারী! শুধু আলোই নয়; বরং মহাবিশ্ব গড়ে তোলা প্রতিটি পরমাণু এই বিভাজন অনুভব করে। এখন আপনারা আমার যে গবেষণাপত্রটি হাতে ধরে রেখেছেন, তা প্রমাণ করে, পদার্থের প্রতিটি কণায়—সেটা প্রোটন হোক বা ইলেকট্রন—একটা সংশ্লিষ্ট তরঙ্গ আছে, যা তাকে স্থানের ভেতর দিয়ে পরিবহন করে।’
একসময় বক্তৃতা শেষ করেন ব্রগলি। উপস্থিত অধ্যাপক ও পরীক্ষকেরা ততক্ষণে হতবাক। বুঝতে পারছিলেন না তাঁর কথার পক্ষে বা বিপক্ষে কী বলবেন। ধারণাটা এতই বৈপ্লবিক! ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন লুই ডি ব্রগলি।
৪.
লুইয়ের আবিষ্কৃত বস্তুকণার তরঙ্গধর্ম নিয়ে সে সময় খুব উত্তেজিত ছিলেন আইনস্টাইন। থিসিসটা পড়ার প্রায় পরপরই আণবিক বিকিরণে পরীক্ষণ পদার্থবিদ সহকর্মীদের এর প্রমাণ খুঁজতে বলেন। কারণ, একে পদার্থবিজ্ঞানে চিরায়ত শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছিলেন আইনস্টাইন। অথচ নীলস বোর তখন বিষয়টি অগ্রাহ্য করেছেন। কাজেই তখন বস্তুর দুটি রূপ পাশাপাশি অবস্থান করছে। একদিকে তরঙ্গ, আরেক দিকে কণাধর্ম। এগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কী? কিংবা আদৌ কি কোনো সম্পর্ক আছে? তার উত্তরটা আইনস্টাইনের জানা ছিল না।
তিন বছর পরের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক কোম্পানির ল্যাব। পরে এটি পরিচিত হয়ে উঠবে বেল ল্যাব নামে। এখানে কয়েক বছর গবেষণা করছিলেন ক্লিনটন ডেভিডসন নামের ৩৪ বছর বয়সী এক বিজ্ঞানী। তাঁর সঙ্গী লেস্টার গামার। বিভিন্ন ধাতুতে ইলেকট্রন ছুড়লে কী ফল পাওয়া যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছিলেন দুজন।
১৯২৪ সালের নভেম্বরে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে লুই ডি ব্রগলিকে ডাকা হয় তাঁর থিসিস ডিফেন্ড করার জন্য। কিছুটা আনুনাসিক, সম্ভ্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলতে শুরু করেন: ‘…যাঁরা এই যুক্তিটা প্রত্যাখ্যান করতে চান, তাঁরা বলেন, এ ধরনের মতবাদ মেনে নেওয়ার অর্থ যুক্তি ত্যাগ করা।
একদিন সেখানে তরলীকৃত বাতাসভর্তি একটা ফ্লাস্ক বিস্ফোরিত হলো। নিকেলের কিছু নমুনা থাকা একটা ভ্যাকুয়াম টিউবও গেল ভেঙে। ওই নিকেল লক্ষ্য করে অনবরত ইলেকট্রনের বিম ছোড়া হচ্ছিল। নিকেলগুলো বাতাসের সংস্পর্শে অক্সিডাইজ বা জারিত করার পর তা গরম করে পরিষ্কার করেন ডেভিডসন। তিনি জানতেন না, তাপের কারণে নিকেলের ক্ষুদ্র স্ফটিকগুলোকে অনেক বড় আকারে গঠন করে। তারপর ওই স্ফটিক কাঠামো ইলেকট্রন বিমকে বিচ্যুত করে। তাই পরেরবার ইলেকট্রন বিম ছুড়ে ভিন্ন ফল পান তিনি। কিন্তু হুট করে ফল অন্য রকম হলো কেন, তা ব্যাখ্যা করতে পারলেন না ডেভিডসন।
তবে ফলাফলটা রেকর্ড করে প্রকাশ করেন তিনি। সেটিই হয়েছিল কাজের কাজ। কারণ, ডেভিডসন না বুঝতে পারলেও তাঁর প্রকাশিত ফলাফল দেখে সহকর্মীরা বুঝতে পারলেন আসল ঘটনা। তাঁরা বললেন, এর মানে হলো ইলেকট্রন কণাও তরঙ্গের মতো আচরণ করতে পারে। ঠিক যেমনটি ফরাসি রাজপুত্র লুই ডি ব্রগলি তিন বছর আগে বলেছিলেন।
আপাতদৃষ্টে চরম যুক্তিহীন ধারণা আবিষ্কারের জন্য এর দুই বছর পর, ১৯২৯ সালে নোবেল পুরস্কার পান লুই ডি ব্রগলি। আর বিষয়টি পরীক্ষায় প্রমাণ করার জন্য ১৯৩৭ সালে নোবেল পান ক্লিনটন ডেভিডসন।
