নিরাপদ সময় পরিভ্রমণের সঠিক নিয়মাবলি
কোনো প্রযুক্তি অবিমিশ্র আশীর্বাদ হয়ে আসে না। কালভ্রমণও তা–ই। সময়ের তটরেখা বরাবর সামনে-পেছনে গমনাগমন অপরাপর যেকোনো ভ্রমণের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এরই মধ্যে অনেক বিপত্তি, অনেক পা হড়কানোর ঘটনা আমাদের অবগত। আমরা স্বীকার না করে পারি না, অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো কেবল যদি যাত্রীরা আরেকটু সতর্ক ও সচেতন হতেন। তবে এই অসাবধানতার মূলে রয়েছে অনভ্যস্ততা।
কালভ্রমণে দেশবাসী এখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি। এটি সাম্প্রতিক আবিষ্কার। এর প্রযুক্তি এখনো বিকাশমান এবং দেশে এখনো তা সর্বত্র বিস্তৃতি লাভ করেনি। বিশেষ করে দুর্গম ও পশ্চাৎপদ অঞ্চলগুলোয় এখনো স্থায়ী সময়পথ নির্মাণের কাজ পরিপূর্ণতা পায়নি। আবার অনেক অঞ্চলের ওপর দিয়ে সময়ের ধাতব ইস্পাতরেখা ছুটে গিয়েছে বটে, তবে সেই সব অঞ্চলে সময়শকটে ওঠানামার জন্য পর্যাপ্ত প্ল্যাটফর্ম ও যাত্রীদের বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়নি। এগুলো অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। আমরা রাতারাতি সবকিছু প্রত্যাশা করতে পারি না।
এগুলো ভিন্ন প্রসঙ্গ। তদুপরি কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ সহজ কাজ বিধায় আমরা তা করব না।
আমাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট ও অদ্ব্যর্থ। কালভ্রমণে এযাবৎ যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই যাত্রীদের অজ্ঞতা ও অসতর্কতার কারণে সংঘটিত হয়েছে এবং সেগুলো এড়ানো সম্ভব ছিল বলে আমরা পরিসংখ্যানগতভাবে নিশ্চিত হয়েছি। এ বিষয়ে আর কারও দ্বিমত নেই যে একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগের মাধ্যমে কাল পরিব্রাজনকে অনেক বেশি নিরাপদ করে তোলা সম্ভব। সেই উদ্যোগ আর কিছুই নয়—একটি অভিন্ন, সর্বজনীন ভ্রমণের নিয়মাবলি বা নির্দেশিকা বা গাইডলাইন প্রণয়ন।
এমন অনেক পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনার কথা আমরা শুনেছি, যার কোনো পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। যেমন ভিনসেন্ট নামের এক যাত্রীর কথা শোনা যায়। কালশকটে তাঁর আসনে বসা অবস্থায় তিনি বিলীন হয়ে গেছেন। তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এখানে কিছু কথা। এ রকম একটি নিয়মাবলি প্রণয়নের বাস্তবিক বাধাগুলো সম্পর্কে আমরা অনবগত নই। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানির সূত্রে বেশ কিছু ভ্রমণ গাইডলাইন হাতে হাতে ঘুরছে। সচেতন যাত্রীরা ছুটন্ত হকারের কাছ থেকে সেগুলো স্বল্পমূল্যে কিনছেন এবং তাতে উল্লিখিত নিয়মাবলি অনুসরণের চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে আমরা এ রকম ১৭টি গাইডলাইন বা নির্দেশিকা সংগ্রহ করেছি। এগুলোর কোনোটাই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এ কারণে এক নির্দেশিকার সঙ্গে অপর নির্দেশিকার কোনো ঐক্য নেই। শুধু তা–ই নয়, এগুলো প্রায়ই পরস্পরবিরোধী। কিন্তু তাই বলে আমরা এগুলোকে অমূলক হিসেবে উড়িয়ে দিচ্ছি, এমন নয়। কারণ আমরা জানি, যাঁরা এগুলো রচনা করেছেন, তাঁরা কিছু পরিমাণে গবেষণাও করেছেন, দুর্ঘটনায় পতিত যাত্রী বা তাঁদের সহযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন জরিপকাজ চালিয়েছেন।
আমরা এটাও বিলক্ষণ জানি, একটি নির্ভুল ও সবার জন্য প্রযোজ্য গাইডলাইন পেতে আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে। এর দুটি কারণ। প্রথমত, কালভ্রমণ শুধু একটি নতুন বিদ্যা বা প্রযুক্তিই নয়, এটি এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে। আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও বাণিজ্যে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে। এর বিস্তার সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের বিচার্য। দ্বিতীয়ত, কালভ্রমণ নতুন কী কী বিপত্তিজনক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে, এ সম্পর্কে আগে থেকে সম্যক ধারণার কোনো অবকাশ নেই। সেই সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার মধ্য দিয়েই কেবল আমরা সেগুলো মোকাবিলার উপায় অনুসন্ধান করতে পারি। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতিগুলোর সঠিক নথিকরণ, পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও মানচিত্র নির্মাণ অত্যাবশ্যক।
আরেকটি বিষয়। এমন অনেক পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনার কথা আমরা শুনেছি, যার কোনো পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। যেমন ভিনসেন্ট নামের এক যাত্রীর কথা শোনা যায়। কালশকটে তাঁর আসনে বসা অবস্থায় তিনি বিলীন হয়ে গেছেন। তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সহযাত্রীদের বিবরণ পরস্পরবিরোধী। কেউ বলেছেন, তিনি ওই সময় শকটের জানালা খোলার চেষ্টা করেছেন। কেউ বলেছেন, তিনি তাঁর ঝোলা থেকে একটা লাল মোড়কবিশিষ্ট গ্রন্থ বের করে সেটির মাঝামাঝি জায়গা থেকে অনেকটা মন্ত্র উচ্চারণের মতো সশব্দ পাঠ করতে শুরু করেছিলেন। এ সময় জানালা দিয়ে তাঁর শরীরে শেষ বিকেলের আলো এসে পড়েছিল এবং তিনি পড়ন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে দ্রুতলয়ে দুর্বোধ্য ভাষায় শ্লোক পড়ে যাচ্ছিলেন। বিস্তীর্ণ কালপঞ্জির কোনো প্রান্তরেই আর তাঁকে খুঁজে বের করা যায়নি। এ রকম ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটেনি।
এভাবে ঝাড়াই–বাছাই শেষে আমরা এমন একটি গাইডলাইনে উপনীত হতে পেরেছি, যেটিকে নিখুঁত বলে দাবি করতে না পারলেও আমরা এটুকু সৎভাবে দাবি করব যে এটি কার্যকর।
আরেকটি ঘটনার কথা শোনা যায়, তবে সেটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রৌঢ় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, ভ্রমণ শেষে তাঁর মধ্যে এমন সব স্মৃতি ভর করেছে, যেগুলো মোটেই তাঁর নয়। মেহরিন নামের আরেক মধ্যবয়সী নারী চক্রাকার পূর্ণ ভ্রমণ শেষে অভিযোগ করেছেন, তাঁর শরীরের বাঁ দিকটি ডান দিকে পরিণত হয়েছে।
এসব পুনরাবৃত্তিহীন, এককালীন ঘটনার জন্য কোনো নিয়ম প্রতিপন্ন করা দুরূহ। সেগুলোকে এই নির্দেশিকার শেষে পরিশিষ্ট অধ্যায়ে তালিকা আকারে পেশ করা হয়েছে।
সময় পরিভ্রমণ আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। শুরুতে এটি নিছক শৌখিনতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। প্রথম দিকের যাত্রীরা মূলত পর্যটনকাজে এটি ব্যবহার করেছেন। তবে এখন ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে এটির ব্যবহার বাড়ছে। আর এ কারণে সময়ভ্রমণে নিরাপত্তার বিষয়টি এখন আগের চেয়ে গুরুত্ববহ।
আমরা নিরাপদ কালভ্রমণের একটি অভিন্ন ও সর্বজনীন গাইডলাইন বা নির্দেশিকা বা পরামর্শিকা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি। শুরুতেই স্বীকার করে নিতে হয়, এ কাজে যে মৌলিক গবেষণা প্রয়োজন, তা করার মতো রসদ ও জনবল আমাদের হাতে নেই। আমরা প্রচলিত ১৭টি গাইডলাইনকে আমাদের কাজের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছি। সেগুলোতে বিধৃত বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শের কার্যকারিতা যাচাই করেছি, সেগুলোর বিষয়বস্তুর তুলনা ও প্রতিতুলনা করেছি, যেসব নির্দেশনা পরস্পরবিরোধী, সেগুলো বাদ দিয়েছি, প্রযুক্তিগত ও ব্যবস্থাপনাগত পরিবর্তনের কারণে যেসব নির্দেশনা ইতিমধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে, সেগুলোকে ছেঁটে ফেলেছি। এভাবে ঝাড়াই–বাছাই শেষে আমরা এমন একটি গাইডলাইনে উপনীত হতে পেরেছি, যেটিকে নিখুঁত বলে দাবি করতে না পারলেও আমরা এটুকু সৎভাবে দাবি করব যে এটি কার্যকর।
এ স্থলে কিছু ঐতিহাসিক পাদটীকা দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের কাজের ধরন ও চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তাতে পাওয়া যাবে।
সময়ভ্রমণের প্রথম নির্দেশিকাটির রচয়িতা এডওয়ার্ড ডাসেলডর্ফ নামের এক স্কুলশিক্ষক। তিনি গণিতে স্নাতক। কী কারণে তিনি এ রকম একটি নির্দেশিকা রচনার আবশ্যকতা বোধ করেছিলেন, তা জানা যায় না। এ কাজে তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি কি না, সে প্রশ্নও কেউ করেননি। তবে তিনি এর পেছনে দুই বছর বিপুল শ্রম ও অধ্যবসায় নিয়োগ করেছেন। কাজের ক্ষেত্রে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করেননি। শোনা যায়, তিনি দুর্ঘটনাকবলিত অথবা দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এক হিসাবে এটাই সময় পরিভ্রমণ–সংক্রান্ত দুর্ঘটনাগুলোর প্রথম বিশদ নথিকরণ। আমরা তাঁর নেওয়া সেই সব সাক্ষাৎকারের রেকর্ড সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। ২২টি সাক্ষাৎকার অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। দুটি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রেকর্ড মুছে গেছে। বাকি তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমরা বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলো আংশিক পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। এসব সাক্ষাৎকার আমাদের হতবাক করেছে। সময় পরিভ্রমণ যে কত বিচিত্র ও অপরিজ্ঞাত দুর্দৈবের জন্ম দিতে পারে, তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এগুলো।
ডাসেলডর্ফ তাঁর নির্দেশিকাটির নাম রেখেছেন পুরোনো লাতিন ভাষায়। দীর্ঘ নাম। আমাদের এ যুগের ভাষায় যেটি এ রকম দাঁড়ায়: কালরথ আরোহীদিগের প্রতি উপদেশ: যাঁহারা কালের গাড়ি আরোহণ করিয়া গমন করেন, তাঁহাদের তৎসংক্রান্ত বিঘ্ন নিবারণের উপায় প্রদর্শন। মিলান শহরের একটি চার্চের মুদ্রণযন্ত্র থেকে ২০৮৪ সালের মাঘ মাসে প্রকাশিত এ নির্দেশিকায় ১৩টি উপদেশ রয়েছে, যার সব কটিই নিষেধমূলক।
ডাসেলডর্ফের নির্দেশিকাটি জনপ্রিয় হয়েছিল। সস্তা কাগজে ছাপা হয়ে এটি যাত্রীদের হাতে হাতে ঘুরেছে। সম্ভবত এটির দারুণ কাটতির কারণে পরপর আরও দুই ব্যক্তি আরও দুটি নির্দেশিকা বাজারে ছাড়েন। তাঁদের একজন আর্নল্ড শেফিল্ড ছিলেন কাল পরিব্রাজন পথরেখার একটি জংশনের স্টেশনমাস্টার। অপরজন আন্দ্রে লামপোর্তে কিছুকাল একটি কালশকটের চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ দুটি নির্দেশিকা কোনো না কোনোভাবে ডাসেলডর্ফের কাজেরই অনুকরণ ছিল। এঁরা নিজেরা কোনো মৌলিক গবেষণা বা জরিপকাজ করেননি।
নিদ্রামান্দ্য কালভ্রমণের জন্য সাতিশয় ক্ষতিকারক। যেকোনো ব্যক্তি কালভ্রমণের আগের সাত দিনে কমপক্ষে ৬০ ঘণ্টা নিদ্রা যাপন করবেন। ঘুম হতে হবে গভীর ও সহায়তাহীন; অর্থাৎ ঘুমের জন্য কোনো রকম ওষুধের সহায়তা নেওয়া যাবে না।
আমাদের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সমৃদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে লিনা ম্যাকগাল নামের এক জার্মান নারীর রচনাকর্মটি। তিনি পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক। বেশ কিছুকাল পোস্টাল ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছেন। অবসরে যাওয়ার পর তিনি জাপানে চলে যান। সেখানে একটি শিন্তো মন্দিরে তিনি নার্স হিসেবে কাজ নেন। এখনো সেখানেই আছেন। এ রকম একটি নির্দেশিকা রচনায় তাঁর উদ্দীপনার হেতু কিছুটা অনুমান করা যায়। তাঁর বোন লিয়া শ্যুলার সময়ভ্রমণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছিলেন। দুর্ঘটনাটি ততটা বিরল নয়। একই বর্গের আরও কয়েকটি ঘটনা ইতিমধ্যে নথিভুক্ত হয়েছে। ২৯ বছর বয়সী অপরূপা শ্যুলার ভ্রমণ শেষে নেমে আসেন ৯৭ বছর বয়সী লোলচর্ম বৃদ্ধ হিসেবে। ইনস্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বটে। কিন্তু এ অঘটনজনিত নিয়তি কার পক্ষেই–বা মেনে নেওয়া সম্ভব? এর কিছুকাল পর বার্ধক্যজনিত রোগে শ্যুলারের মৃত্যু ঘটে। অনেকে বলেন, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। লিনা ম্যাকগাল তাঁর বোনকে কতটা ভালোবাসতেন, আমরা জানি না। তবে বোনের মৃত্যুর পরপরই তিনি নির্দেশিকা রচনার কাজে গবেষণা শুরু করেন। তিনিই সবচেয়ে বেশি জরিপকাজ করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, বিজ্ঞানের গবেষণাগারে কাজের অভিজ্ঞতার কারণে তিনি তাঁর জরিপকাজে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করতে পেরেছিলেন। তাঁর কাজ গোছানো, সুসংবদ্ধ এবং তাঁর সংগৃহীত উপকরণ সুশৃঙ্খলভাবে আর্কাইভ করা।
আমরা মূলত ডাসেলডর্ফ ও লিনা ম্যাকগালের নির্দেশিকাকে ভিত্তি ধরে এগিয়েছি। তাঁদের কাছ থেকেই বেশি ঋণ করেছি আমরা। ইত্যবসরে কতিপয় নতুন পরিস্থিতির উদ্ভবের কারণে কিছু সংযোজনও ঘটানো হয়েছে। আমরা এ পুস্তিকায় মোট ১২টি ভ্রমণবিধি বা উপদেশ গ্রন্থিত করেছি।
তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি সূচনামাত্র। নতুন নতুন পরিস্থিতি, গবেষণা ও জরিপ এ নির্দেশিকাকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করবে।
প্রথম নিয়ম
নিদ্রামান্দ্য কালভ্রমণের জন্য সাতিশয় ক্ষতিকারক। যেকোনো ব্যক্তি কালভ্রমণের আগের সাত দিনে কমপক্ষে ৬০ ঘণ্টা নিদ্রা যাপন করবেন। ঘুম হতে হবে গভীর ও সহায়তাহীন; অর্থাৎ ঘুমের জন্য কোনো রকম ওষুধের সহায়তা নেওয়া যাবে না।
দ্বিতীয় নিয়ম
কালভ্রমণের আগে এক মাস আমিষ ভোজন পরিহার করে চলতে হবে। তবে দুধ ও ডিমজাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
তৃতীয় নিয়ম
কালভ্রমণ শেষ হওয়ামাত্র শকট থেকে নেমে ১৭ কদম অতিক্রমের আগেই বিশ্রাম নিতে হবে। এ জন্য প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বয়স ও ওজনভেদে দুই থেকে চার ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে।
চতুর্থ নিয়ম
কালভ্রমণের সময় হাতে কোনো ধরনের কালনির্দেশক যন্ত্র (যেমন ঘড়ি) পরিধান করা যাবে না।
পঞ্চম নিয়ম
কালভ্রমণের সময় সঙ্গে এমন কোনো যন্ত্র রাখা যাবে না, যা থেকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ নিঃসৃত হয়।
ষষ্ঠ নিয়ম
যাঁদের শরীরে পেসমেকার বা কোনো রকম বৈদ্যুতিক যন্ত্র বসানো আছে, তাঁরা ভ্রমণে ৫৫০ বছরের বেশি অতিক্রম করবেন না।
নিকটাত্মীয়ের কেউ কালভ্রমণে দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে থাকলে সম্পর্কের উজানরেখা বরাবর কালভ্রমণ পরিহার করবেন। যেমন পিতা দুর্ঘটনাকবিলত হলে পুত্র ভ্রমণ করবেন না। তবে পুত্র দুর্ঘটনাকবলিত হলে পিতার ভ্রমণে ঝুঁকি নেই।
সপ্তম নিয়ম
কালশকটের একটি কামরায় যাত্রীদের গড় বয়স ৩৫ হওয়া বাঞ্ছনীয়; অর্থাৎ একটি কামরায় শিশু বা বৃদ্ধের সংখ্যার একটি ঊর্ধ্বসীমা থাকবে।
অষ্টম নিয়ম
কালশকট যাত্রা শুরু করার পর প্রথম ১৩৭ নিশ্বাসচক্র (যেহেতু তখন ঘণ্টা বা মিনিটের হিসাব অর্থহীন) আসন ত্যাগ করা যাবে না।
নবম নিয়ম
নিকটাত্মীয়ের কেউ কালভ্রমণে দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে থাকলে সম্পর্কের উজানরেখা বরাবর কালভ্রমণ পরিহার করবেন। যেমন পিতা দুর্ঘটনাকবিলত হলে পুত্র ভ্রমণ করবেন না। তবে পুত্র দুর্ঘটনাকবলিত হলে পিতার ভ্রমণে ঝুঁকি নেই।
দশম নিয়ম
দুটি কালভ্রমণের মধ্যবর্তী বিরতি নির্ভর করবে বয়স, লিঙ্গ ও ওজনের ওপর। এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা সংযোজন অংশে দেওয়া হলো।
একাদশ নিয়ম
ক্রোধ বা প্রতিহিংসাতাড়িত মানসিক দশায় কালভ্রমণ নিরাপদ নয়।
দ্বাদশ নিয়ম
কালভ্রমণের সময় সঙ্গের ব্যাগে কোনো সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও পুস্তক বহন করা যাবে না। ভ্রমণপথ চালুর শুরুর দিকে এক আর্জেন্টাইন যাত্রী একটি স্পোর্টস ম্যাগাজিন সঙ্গে নিয়েছিলেন। তাঁর ভাগ্যে কী করুণ পরিণতি বয়ে এসেছিল, সেটা সংযোজন অংশে দেওয়া হলো।